ধাক্কা: ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩১ রানে হার। অপরাজিত দুই ব্যাটসম্যান ধোনি ও কেদার যাদব মাঠ থেকে বেরিয়ে আসার সময় অধিনায়ক কোহালির সান্ত্বনা। এএফপি
নাসের হুসেন বিস্মিত হয়ে তখন বলে চলেছেন, ‘‘কী হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। ধোনি, কী করতে চাইছ তুমি? অন্তত একটা চেষ্টা তো করে দেখতে পারো।’’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও অবাক। বলে ফেলছেন, ‘‘আমার কাছে এই খেলার কোনও ব্যাখ্যা নেই।’’
সচিন তেন্ডুলকর এবং সঞ্জয় মঞ্জরেকর খুব বেশি ব্যাপারে একমত হয়েছেন বলে শোনা যায় না। এ ক্ষেত্রে হচ্ছেন। সচিন আফগানিস্তান ম্যাচেই ধোনির ব্যাটিংয়ের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। বলেছিলেন, ধোনির ব্যাটিংয়ে তিনি কোনও ইচ্ছাশক্তি দেখতে পাননি। তখন তাঁর বক্তব্য নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। টুইটারে ধোনি ভক্তরা পাল্টা সচিনকে আক্রমণ করেছিলেন। এজবাস্টনে ধোনির এমন ব্যাখ্যাহীন ব্যাটিংয়ের পরে সচিনের প্রতি সমর্থনের জোয়ার ফিরে আসতে পারে। এ দিন এজবাস্টনে অনেক ধোনি ভক্তকেও দেখা গেল, ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। ‘‘এত দিন তোমার ভক্ত ছিলাম। কিন্তু এটা কী করলে মাহি?’’ বিলাপ করতে শোনা গেল তাঁদের। বরাবর তাঁর ছক্কা মারা এবং বড় স্ট্রোক নেওয়ার দক্ষতা পূজিত হয়ে এসেছে। তেমনই প্রতিপক্ষ ভয় পেয়েছে। এখন সেই বড় স্ট্রোক যেন বেরোতেই চাইছে না ধোনির ব্যাট থেকে। সব চেয়ে বড় কথা হচ্ছে, সাহস করে তাঁকে শট মারার চেষ্টা করতেই দেখা যাচ্ছে না। স্পিনারদের ওড়াতে গিয়েও দোনোমোনো করছেন। ক্রিকেট জীবনে খুব একটা স্টাম্পিংই হননি ধোনি। এতটাই হিসাব কষা ছিল তাঁর স্টেপ আউট। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে স্টাম্প্ড হলেন। ‘ফিনিশার’ ধোনি ‘ফিনিশ্ড’ কি না, সেই প্রশ্ন উঠে পড়েছিল গত এক বছর ধরেই। বিশ্বকাপের আসরে তা ক্রমশ বড় আকার নিয়ে ফেলছে।
কমেন্ট্রি বক্সে যখন ধোনির ব্যাটিং দেখে অবাক সৌরভরা, তখন গ্যালারিও ফাঁকা হতে শুরু করেছে। যাঁরা সকাল থেকে এজবাস্টনে ভিড় করেছিলেন ভারতকে সমর্থন করার জন্য, তাঁরাই ম্যাচ শেষ হওয়ার আগে বেরিয়ে গেলেন ধিক্কার দিতে দিতে। ভারতের শেষের দিকের ব্যাটিং দেখে ভক্ত থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ, ধারাভাষ্যকার সকলেই বিস্মিত। কেউ কেউ মুখের ভাষাই হারিয়ে ফেলছেন। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি আর কেদার যাদবের ক্রিকেটকে তীব্র ধিক্কার জানানো শুরু হয়ে গিয়েছে চারদিকে। এজবাস্টনের বাইরে দাঁড়িয়েই কেউ কেউ সরব, ‘‘এটা কোনও ক্রিকেট হল? পারব না ঠিক আছে। চেষ্টা তো করে দেখব।’’ যখন বড় শট খেলতে হত ম্যাচ জেতার জন্য, তখন ধোনি আর কেদার মিলে বাইশ গজে জগিং করে গেলেন। তাঁদের ইচ্ছার অভাব দেখেই জ্বলছেন ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তরা।
ভারতীয় শিবির থেকে অবশ্য ফের সেই ধোনির পাশে দাঁড়ানোরই চেষ্টা হল। পুরস্কার বিতরণীতে এসে কোহালি বলে গেলেন, ‘‘ধোনি চেষ্টা করল বাউন্ডারি মারার। কিন্তু হচ্ছিল না।’’ মাঠের এক-এক দিকে এক-এক রকম বাউন্ডারির কথা উল্লেখ করে সমস্যার কথা বললেন ভারত অধিনায়ক। এটাও ঠিক যে, সকাল থেকে নিরপেক্ষ ক্রিকেট ভক্তরা আইসিসি-কে আক্রমণ করছিলেন। অনেকে প্রশ্ন তুলতে থাকেন, ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে অন্যায় সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে কি না? কারণ, যেখানেই বোলারদের জন্য সামান্যতম সাহায্য হাজির থেকেছে, ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা রান করতে সমস্যায় পড়েছেন। এ দিন এজবাস্টনে যে পিচ দেওয়া হল, তা সম্পূর্ণ এ মাঠের বিরোধী। এখানে স্পিনাররা বেশি সাহায্য পাচ্ছিলেন। খুব বেশি রানের খেলা হওয়ারই কথা নয়। কিন্তু প্রবল চাপে থাকা ইংল্যান্ডের এই ম্যাচের জন্যই নতুন পিচে খেলা করা হল। কেউ কেউ বলতে থাকেন, পিচ নয়, সিমেন্টের রাস্তায় ম্যাচ হচ্ছে। এবং, এই পিচে ভারতের দুই স্পিনারকে কার্যত অকেজো করে দিলেন ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানেরা। কুলদীপ যাদব এবং যুজবেন্দ্র চহাল দিলেন ১৬০ রান।
শুধু ধোনিদের বিস্ময়কর ব্যাটিংয়ের জন্যই ম্যাচ হারেনি ভারত। ব্যাটিং স্বর্গে দুই স্পিনারের ব্যর্থতাও অন্যতম কারণ। মহম্মদ শামি পাঁচ উইকেট নিয়ে দুর্দান্ত ভাবে ম্যাচে ফিরিয়েছিলেন ভারতকে কিন্তু শেষের দিকে স্টোকসের হাতে মার খেয়ে গেলেন। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে একমাত্র কৃপণ ছিলেন যশপ্রীত বুমরা। তাঁর দশ ওভারে ৪৪ রানের বেশি নিতে পারেননি জো রুটরা।
বিশ্বকাপে কোহালিদের ব্যাটিং নীতি নিয়েও সংশয় তৈরি হতে শুরু করেছে। শুরুর দিকে রোহিত শর্মারা কি বেশি সাবধানী ইনিংস খেলে ফেলছেন? টুর্নামেন্টে প্রথম দশ ওভারে রান তোলার দিক থেকে ভারত শেষের দিক থেকে দ্বিতীয়। একমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের চেয়ে ধীর গতিতে রান তুলেছে প্রথম পাওয়ার প্লে-তে। খুব বেশি সাবধানী ভঙ্গি নিয়ে ফেলছে কি ভারতীয় দল? এখন ওয়ান ডে-তে ইংল্যান্ডের মতো দল হামেশাই চারশো রান তুলছে। সেখানে এই উইকেট বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে শেষে গিয়ে আক্রমণের নীতি সব সময় কাজে আসবে, এমন নিশ্চয়তা নেই। সব চেয়ে সমস্যা হয়েছে, ভারতীয় ব্যাটিং অর্ডারে গভীরতা না থাকায়। শিখর ধওয়ন ছিটকে যাওয়ার পরে কোহালি এবং রোহিতের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে দল। চার নম্বরে কে আসবেন, এখনও সেই ধাঁধার সমাধান হল না। কারও কারও মনে হচ্ছে, ঋষভ পন্থকে যখন খেলানোই হল এ দিন, তাঁকেই খেলিয়ে যাওয়া হোক এখন। একটা ম্যাচ দেখেই যেন তাঁকে ছুড়ে ফেলা না হয়। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে রান পেয়ে গেলে ভাল এক জন পাওয়াহিটার পেয়ে যাবে ভারত। না হলে শুধু হার্দিক পাণ্ড্যর দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে ঝড় তোলার জন্য।
কোহালির মতো রোহিতও আড়াল করার চেষ্টা করলেন ধোনিকে। একই গান গেয়ে গেলেন যে, ‘‘চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। কিন্তু ইংল্যান্ডের বোলাররা ভাল বল করছিল। তাই মারা সহজ হয়নি।’’
গোটা ভারতীয় ইনিংসে যে পরিমাণ ডট বল (যে বলে রান হয় না) খেলা হয়েছে, সেটা নিয়ে ভাবার সময় হয়েছে রোহিতদের। ভারত এর পরেও হয়তো সেমিফাইনালে যাবে। কিন্তু বড় দলকে আমরা হারাতে পারি, এই আত্মবিশ্বাসটা রবিবাসরীয় এজবাস্টনে তৈরি হতে পারত। সেই লক্ষ্য হোঁচট খেল। কোহালিরা আর টুর্নামেন্টের অপরাজিত দলও থাকলেন না। তার চেয়েও বড় কথা, একটা খটকা ক্রমশ বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। ব্যাটিংয়ে অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক এই নীতি নিয়ে কাপ জেতা যাবে তো? সচিন তেন্ডুলকর এজবাস্টন-উত্তর কী বলেন, দেখার অপেক্ষায় রয়েছে ক্রিকেট দুনিয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy