Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

পিচের চরিত্রে এত ফারাক কেন, উত্তাপ বাড়ছে বিশ্বকাপে

প্রতিযোগিতায় এখনও পর্যন্ত যা গতি-প্রকৃতি, কোথাও খুব বেশি রানের খেলা হচ্ছে,  কোথাও দুশো তুলতে গিয়ে এমনকি ফেভারিট দলগুলোরও পা হড়কাচ্ছে। কোথাও ব্যাটসম্যানেরা শাসন করছেন, কোথাও আবার বোলারেরা ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিচ্ছেন। 

চর্চা: বাইশ গজ নিয়ে আইসিসি-র ভূমিকায় ক্ষুব্ধ সব দলই। ফাইল চিত্র

চর্চা: বাইশ গজ নিয়ে আইসিসি-র ভূমিকায় ক্ষুব্ধ সব দলই। ফাইল চিত্র

সুমিত ঘোষ 
শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৯ ০৪:১৩
Share: Save:

বিশ্বকাপে মাঠের লড়াইয়ের পাশাপাশি চাঞ্চল্যকর রূপ নিতে পারে আরও এক সংঘাত। ইংল্যান্ডে বিভিন্ন মাঠে তৈরি হওয়া বিভিন্ন রকম বাইশ গজ নিয়ে ক্রমশ বাড়ছে অনুযোগ। আগামী কয়েক দিনে ঘূর্ণিঝড় ফণীর মতোই তা আরও শক্তিশালী হয় কি না, সেটাই এখন দেখার।

প্রতিযোগিতায় এখনও পর্যন্ত যা গতি-প্রকৃতি, কোথাও খুব বেশি রানের খেলা হচ্ছে, কোথাও দুশো তুলতে গিয়ে এমনকি ফেভারিট দলগুলোরও পা হড়কাচ্ছে। কোথাও ব্যাটসম্যানেরা শাসন করছেন, কোথাও আবার বোলারেরা ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিচ্ছেন।

ট্রেন্ট ব্রিজে পাকিস্তান অঘটন ঘটিয়ে হারিয়ে দিয়েছিল ইংল্যান্ডকে। সেই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান তোলে ৩৪৮-৮। জবাবে ইংল্যান্ড থেমে যায় ৩৩৪-৯ স্কোরে। শোনা যাচ্ছে, পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজ় আহমেদ ট্রেন্ট ব্রিজে জেতার পরে বলেন, ‘‘ওরা ব্যাটিং উইকেট বানিয়েছিল। ভেবেছিল, বড় রান তুলে আমাদের হারাবে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা ব্যুমেরাং হয়েছে।’’ তখন বোঝা যায়নি, সরফরাজ়ের মতোই উপমহাদেশের অন্যান্য দলগুলির মধ্যেও পিচ নিয়ে উষ্মা বাড়তে শুরু করবে।

বৃহস্পতিবার দশ নম্বর ম্যাচ হয়ে গেল চলতি বিশ্বকাপের। তিনশোর বেশি রান হয়েছে তিনটি ম্যাচে। তার মধ্যে দু’টি ম্যাচে খেলেছে ইংল্যান্ড। বাকি অনেক ম্যাচেই ব্যাটসম্যানেরা রান তুলতে গিয়ে রীতিমতো সমস্যায় পড়েছেন। অথচ বিশ্বকাপের আগে বাজনা বাজছিল, এ বার নাকি এত হাই স্কোরিং খেলা হবে যে, এক দিনের ক্রিকেটে পাঁচশো রানের সীমানাও অতিক্রম করে যাবে। সে সবের তো বালাই নেই, উল্টে দর্শক মনোরঞ্জনের জন্য বিখ্যাত স্ট্রোক প্লেয়ারেরা পর্যন্ত ইংল্যান্ডের পিচে রান করতে গিয়ে ঠোক্কর খাচ্ছেন।

পাকিস্তান প্রথম ম্যাচে দাঁড়াতে পারেনি। ১০৫ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল। শ্রীলঙ্কা কার্ডিফে ১৩৬ অলআউট হয়ে গিয়েছিল। এমনকি ব্যাটিং মহাতারকায় ঠাসা ভারতীয় দলও সাউদাম্পটনে বুধবার ২২৮ তাড়া করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে। ম্যাচের পরে বিরাট কোহালিকে কেউ পিচ নিয়ে প্রশ্ন করেনি। করলে হয়তো খুব প্রসন্ন মেজাজে উত্তর দিতেন না। কোহালি যে পুরস্কার অনুষ্ঠানে বলে যান, রোহিতের এটাই সেরা ইনিংস, তার মধ্যেই লুকিয়ে আছে আসল হেঁয়ালি। এই রোহিতেরই ওয়ান ডে ক্রিকেটে দু’-দু’টো ডাবল সেঞ্চুরি আছে। ওয়ান ডে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ স্কোরারও তিনি। তবুও সাউদাম্পটনের সেঞ্চুরিকে সেরা বলা কেন? ওয়াকিবহাল মহলের বিশ্লেষণ, ভারত অধিনায়ক না বলেও বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন, এত কঠিন উইকেটে ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরিটা এল বলেই এটা রোহিতের সেরা।

ভারতীয় দলে পিচ নিয়ে গোয়েন্দা রিপোর্ট দরকার হলেই, এক জনের ডাক পড়ে। তিনি, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। সাউদাম্পটনে বুধবার ধোনি ৩৪ করতে নেন ৪৬ বল। অথচ বিশ্বকাপে দারুণ ফর্ম নিয়ে খেলতে এসেছেন তিনি। আইপিএলে দুর্ধর্ষ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন। আবার সেই পুরনো মেজাজে বড় স্ট্রোক নিতে পারছেন। ফের আগের মতো খুচরো রান নিয়ে স্কোরবোর্ড সচল রাখছেন। বেশি ডট বল খেলছেন না। প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করেছেন। কিন্তু সেই ধোনিও সাউদাম্পটনের পিচে ঠিক মতো ব্যাটে-বলে করতে পারছিলেন না। তেমনই এত ভাল স্ট্রোক প্লেয়ার হয়েও রোহিত শট খেলার ঝুঁকি নিতে পারছিলেন না। ম্যাচের পরে দু’জনেই সতীর্থদের জানান, বিশ্বকাপে এমন অদ্ভুত উইকেট হবে তাঁরা দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি। এক দিকে আয়োজক, সম্প্রচারকরা বিনোদনমূলক ক্রিকেটের ডাক দিচ্ছেন। অন্য দিকে রণক্ষেত্রের বাইশ গজেরই এমন হাল! দর্শক বিনোদন বলতে যে কম রানের খেলা নয়, তা নিশ্চয়ই আইসিসি কর্তাদের হাতে ধরে বুঝিয়ে দেওয়ার দরকার নেই।

বৃহস্পতিবার ইংল্যান্ডে ফোন করে জানা গেল, পিচ নিয়ে কাজিয়া আগামী কয়েক দিনে আরও বেড়ে যেতে পারে। কোনও কোনও দল আইসিসি-র কাছে সরাসরি প্রশ্ন তুলতে পারে যে, বিশ্বকাপের মতো ইভেন্টে পিচের চরিত্রে এতটা ফারাক কেন থাকবে? কেউ কেউ আরও প্রশ্ন তুলছেন, আইসিসি-র পিচ কমিটির প্রধান অ্যান্ডি অ্যাটকিনসন কোথায়? বিশ্বকাপ বা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো আইসিসি ইভেন্টে অ্যাটকিনসন পিচের ব্যাপারে শেষ কথা বলতেন। এ বারে সে ভাবে নাকি তাঁর উপস্থিতি চোখে পড়ছে না। তা হলে বিশ্বকাপে পিচের তদারকি আইসিসি-র তরফে কে করছেন? বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই প্রশ্ন নিয়ে চরম ধোঁয়াশা রয়েছে।

আইসিসি এখনও পর্যন্ত পিচ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ দেখছে না। তাদের দিক থেকে একটা বিশ্লেষণ হচ্ছে, বোলারেরা দারুণ বল করছেন। ব্যাটসম্যানেরাও প্রথম দিকে ঝুঁকি কম নিচ্ছেন। যত টুর্নামেন্ট এগোবে, তত তাঁদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে। তত তাঁরা বেশি স্ট্রোক নেওয়ার চেষ্টা করবেন। কিন্তু আইসিসি যা-ই বলুক, কয়েকটি দলের মধ্যে মন্থর পিচ নিয়ে চাপা অসন্তোষ থেকেই যাচ্ছে।

নিন্দুকেরা এখন আগ্রহ ভরে তাকিয়ে ইংল্যান্ডের পরের ম্যাচের দিকে। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ। ম্যাচ শনিবার কার্ডিফে। সেই কার্ডিফ যেখানে গত মঙ্গলবার বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে শ্রীলঙ্কা তোলে ২০১। আফগানিস্তান শেষ হয়ে যায় ১৫২ রানে। এ বার ইংল্যান্ডের ম্যাচে কী হবে? মন্থর উইকেট থাকবে? কম রানের খেলা হবে? নাকি আগের দু’টো ম্যাচের মতোই বড় রান তুলবেন জো রুট, জস বাটলার-রা?

কার্ডিফে খেলবে দু’টো দল। নজর থাকবে সব দলের।

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket England ICC ICC World Cup 2019
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy