প্রস্তুতি: আজ, বৃহস্পতিবার প্রতিপক্ষ হোল্ডারদের ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বুধবার ম্যাঞ্চেস্টারে অনুশীলন শুরুর আগে ফুটবল নিয়ে মেতে উঠলেন ধোনি। এপি
মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে দেখে কখনওই বোঝার উপায় নেই তিনি চাপে আছেন কি না। সেই কারণেই তো তাঁর নামকরণ হয়েছে ‘ক্যাপ্টেন কুল’। বৃহস্পতিবার ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে তাঁর জীবনের এমন হাইপ্রেশার ম্যাচ খেলতে নামছেন! গোটা ক্রিকেট বিশ্ব দেখার অপেক্ষায় সাউদাম্পটনে ঠুকুর ঠুকুর ব্যাটিংয়ের পরে ম্যাঞ্চেস্টারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে কী করেন তিনি? আর সেই দ্বৈরথের প্রস্তুতি নেওয়ার সময়েও বরফশীতল ধোনি!
উদাহরণ দেওয়া যাক। এক সাংবাদিক তাঁর সঙ্গে ছবি তুলতে চাইলেন। ধোনি তখন নেটে ব্যাট করে বেরিয়ে আসছেন। ফিরে যাবেন ড্রেসিংরুমে। সেই সাংবাদিকের দেখাদেখি আরও অনেকে এগিয়ে এসে ছবি তোলার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। ধোনি বাকিদের থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন, ‘‘আমি কোনও রিটায়ারমেন্ট প্রেস কনফারেন্স করছি না এখানে!’’
একটু আগে ধোনির প্রতিপক্ষ ক্রিস গেল জানিয়ে দিয়েছেন, এখনই অবসর নিচ্ছেন না। গেল ৩৯, ধোনি ৩৭। দু’জনেই আইপিএল এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এখনও যথেষ্ট কার্যকরী। কিন্তু পঞ্চাশ ওভারের ব্যাটিং গতির সঙ্গে তাল রাখতে পারছেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, দলের পক্ষ থেকে কি ধোনিকে জানানো হয়েছে, তাঁর মন্থর ব্যাটিংয়ে ধাক্কা খেতে পারে জয়ের সম্ভাবনা? বলা হয়েছে কি যে, ইতিবাচক ব্যাটিং আশা করা হচ্ছে তোমার থেকে? ভারতীয় শিবিরের পক্ষ থেকে এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে এসেছিলেন বোলিং কোচ বি অরুণ। তাঁকে এই প্রশ্ন করা হল। অরুণ বললেন, ‘‘রবি শাস্ত্রী সকলের সঙ্গে সব সময় কথা বলতে থাকে।’’ সাউদাম্পটনে ধোনির মন্থর ইনিংস নিয়ে তাঁর সংযোজন, ‘‘পরিস্থিতি বিচারে ও রকম ইনিংস খেলেছে ধোনি। ও আউট হয়ে গেলে আরও খারাপ অবস্থা হতে পারত দলের।’’ যখন বলা হল, একই পিচে তো কোহালি ব্যাট করছেন এবং একশোর উপর স্ট্রাইক রেট ছিল তাঁর, বোলিং কোচের জবাব, ‘‘কোহালি সব ফর্ম্যাটে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান। তার সঙ্গে অন্য কারও তুলনা করা ঠিক হবে না।’’
নেট প্র্যাক্টিসে ধোনিকে দেখে অবশ্য মনে হচ্ছিল, হয় দলের পক্ষ থেকে বার্তা গিয়েছে তাঁর কাছে আর নয়তো নিজেই বুঝে গিয়েছেন, এই ব্যাটিং দিয়ে চলবে না। অন্তত এটুকু তো বলা যেতেই পারে যে, এতটা মন্থর ব্যাটিং করলে প্রতিপক্ষ বোলাররাও তো মাথায় চেপে বসবে। তাতে পুরো ব্যাটিং বিভাগ চাপে পড়ে যাবে। তোমার ব্যাটিং ভঙ্গি দলের মধ্যে না সংক্রমণ ছড়িয়ে দেয়!
আফগানিস্তানের স্পিনারদের বিরুদ্ধে ঠোক্কর খেতে খেতে ৫২ বলে ২৮ করেছিলেন ধোনি। তার পর বুধবার নেট প্র্যাক্টিসে তাঁকে সুইপ শট মারার চেষ্টা করতে দেখা গেল। যে শট তিনি সচরাচর খেলেনই না। এটা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক হওয়ার লক্ষণ। আর হেড কোচ শাস্ত্রীকে দেখা গেল, তীক্ষ্ম নজর রেখে যাচ্ছেন ধোনির ব্যাটিংয়ের উপরে। হালফিলে প্রচুর ‘ডট’ (যে বলে রান হয় না) বল খেলছেন ধোনি। খুচরো রান নিয়ে স্কোরবোর্ড সচল রাখতে গিয়েও সমস্যায় পড়ছেন। বিশেষ করে স্পিনারদের বিরুদ্ধে ক্রিজে আটকে যাচ্ছেন তিনি। বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, ধোনি এখনও বড় শট খেলে দিতে পারবেন। কিন্তু খুচরো রান নিয়ে স্কোরবোর্ড সচল রাখা এবং স্ট্রাইক ঘোরানোর কৌশল হারিয়েছেন তিনি। এ দিন নেটে ব্যাটিং করার ধোনিকে দেখা গেল, প্রত্যেকটা বলেই স্কোরিং শট খেলার চেষ্টা করছেন। আফগানিস্তান ম্যাচের মতো একেবারে ‘ডেড ব্যাট’ এগিয়ে দিচ্ছিলেন না।
যদিও সাউদাম্পটনে ধোনির অতি মন্থরতার পিছনে আরও একটা যুক্তি কেউ কেউ দেখাচ্ছেন। ভুবনেশ্বর চোট পেয়ে বাইরে থাকায় ভারতের লেজ অনেক বড় হয়ে গিয়েছিল। কুলদীপ যাদব, যুজবেন্দ্র চহাল, মহম্মদ শামি এবং যশপ্রীত বুমরার কেউ ব্যাট হাতে অবদান রাখার মতো নয়। ধোনিকে তাই খুব সতর্ক থাকতে হয়েছিল, না হলে পুরো পঞ্চাশ ওভার খেলা নিয়ে সংশয় তৈরি হত। ম্যাঞ্চেস্টারে আসার পরে দু’দিন প্র্যাক্টিস করল ভারতীয় দল। মঙ্গলবার কোহালি আসার পরে এ দিন আর আসেননি। রবীন্দ্র জাডেজাকে ব্যাটিং করিয়ে রাখা হল।
এখনও পর্যন্ত একটাও ম্যাচ না খেলা জাডেজাকে যদি খেলানোর সিদ্ধান্ত হয়, নিঃসন্দেহে নীচের দিককার ব্যাটিংয়ে আবার হিমোগ্লোবিন যোগ হবে। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দলে কোনও পরিবর্তন হওয়া কঠিন। সেই বিজয় শঙ্করের উপরেই আস্থা রাখার কথা শোনা যাচ্ছে, সেই কুল-চা জুটিকেই ধরে রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ঋষভ পন্থকে দেখা গেল প্রচুর কিপিং প্র্যাক্টিস করলেন। পন্থের চেয়ে দীনেশ কার্তিককে বেশি গুরুত্ব সহকারে ব্যাটিং প্র্যাক্টিস করানো হল। একাংশের মতে, অতীতে ইংল্যান্ডে ভাল খেলা কার্তিক চার নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে খুব খারাপ পছন্দ নন। এমন মত যদি গরিষ্ঠতা অর্জন করতে শুরু করে, বিশ্বকাপে পন্থের অপেক্ষা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে যাচ্ছে।
আবার আফগানিস্তান ম্যাচের প্রিজমে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের দ্বৈরথকে দেখাটা কতটা ঠিক হবে, সেই তর্কও থাকছে। রশিদ খানদের অস্ত্র ছিল স্পিন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হাতিয়ার এখনও গতি। কলকাতা নাইট রাইডার্সের তারকা আন্দ্রে রাসেল চোট পেয়ে ছিটকে গিয়েছেন কিন্তু শেল্ডন কোটরেল এবং ওশেন থমাসের জুটি যথেষ্ট সমীহ আদায় করার মতো। বাউন্সার বৃষ্টিতে বিশ্বকাপের শুরুতে তাঁরা আতঙ্ক তৈরি করতে পেরেছিলেন ব্যাটসম্যানদের মনে। ধোনিকে তাই এই ম্যাচে স্পিনের চেয়ে গতির আগুনই বেশি সামলাতে হবে।
সেই সঙ্গে সামলাতে হবে সচিন তেন্ডুলকরের মতো কিংবদন্তির বাউন্সারও। বরাবর বিতর্ক থেকে দূরে থাকতে চাওয়া তেন্ডুলকর আশ্চর্য রকম সরব ধোনির মন্থর ব্যাটিং নিয়ে। বলেছেন, ধোনির ব্যাটিংয়ে ইতিবাচক ভঙ্গি ছিল না। শোনা যায়, এই সচিনই নিজে অধিনায়কত্ব না করতে চেয়ে ধোনির নাম বলেছিলেন ভারতের ভবিষ্যৎ ক্যাপ্টেন হিসেবে। তিনি অপ্রসন্ন হয়ে কিছু বলা মানে ধোনির উপর বাড়তি চাপ তৈরি হওয়া। বিদ্রুপ আর সমালোচনার ধ্বনি তাই দ্রুত বন্ধ করতে হবে ব্যাটের জোরেই। ‘মাহি ঠুক রহা হ্যায়’-কে ফের পাল্টে দিতে হবে ‘মাহি মার রহা হ্যায়’-তে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy