বিধ্বস্ত: মরিয়া লড়েও ইংল্যান্ডকে জেতাতে ব্যর্থ স্টোকস। ছবি: গেটি ইমেজেস
লর্ডসে ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়া দ্বৈরথ। অথচ সমর্থকদের মধ্যে তার আঁচ পাওয়া যাবে না, এ যেন হতেই পারে না। বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তুতি ম্যাচেও স্টিভ স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নারের দিকে ধেয়ে এসেছে একাধিক বিদ্রুপ। লর্ডসের দর্শকেরাও ব্যতিক্রম নন। মঙ্গলবার স্মিথ ও ওয়ার্নার আউট হতেই দর্শকাসনে স্লোগান উঠল ‘চিটার, চিটার।’
ভারতের বিরুদ্ধেও এমনই নিন্দনীয় ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু অধিনায়ক বিরাট কোহালি সমর্থকদের তা থামাতে অনুরোধ করেন। পরে নিজে গিয়েও ক্ষমা চেয়ে নেন স্মিথের কাছে। এ দিন যদিও ইংল্যান্ড অধিনায়ক অইন মর্গ্যানকে তা করতে দেখা যায়নি। দেখা যাওয়ার কথাও নয়। শুরু থেকেই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চাপে ছিল তাঁর দল। কঠিন উইকেটেও বিপক্ষের ওপেনিং জুটি যোগ করে যায় ১২৩ রান। অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ২৮৫-৭। জবাবে ইংল্যান্ড শেষ ২২১ রানে। দুই বাঁ-হাতি পেসারের দাপটে। এ বারের বিশ্বকাপে প্রথম দল হিসেবে সেমিফাইনালে চলে গেল অস্ট্রেলিয়া।
লর্ডসের উইকেট একেবারেই ব্যাটিং সহায়ক ছিল না। তাই টস জিতে বোলিং নিয়েছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং দেখে বোঝা যায়নি উইকেটকে কেন বোলিং সহায়ক বলা হচ্ছে। অথচ ইংল্যান্ড ইনিংস শুরু হতেই দেখা গেল স্টার্ক ও বেহরেনডর্ফের তাণ্ডব। ১০ ওভার বল করে ৪৪ রানে পাঁচ উইকেট নেন জেসন বেহরেনডর্ফ। ৪৩ রানে চার উইকেট মিচেল স্টার্কের। টুইটারে কেভিন পিটারসেন বলেছেন, ‘‘বাঁ-হাতি পেসারদের বিরুদ্ধে যে ইংল্যান্ড ভয় পেয়ে গিয়েছে তা মর্গ্যানের খেলা দেখেই বোঝা গিয়েছে। স্টার্কের প্রথম বল খেলতে গিয়েই লেগস্টাম্পের দিকে সরে যায় মর্গ্যান। অনেক দিন পরে এ রকম দুর্বল নেতৃত্বের নিদর্শন চোখে পড়ল। আগামী সপ্তাহ কতটা ভাল কাটবে তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়ে গেল।’’ এখনও ভারত ও নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচ বাকি ইংল্যান্ডের। যার দু’টোতেই জিততে হবে মর্গ্যানদের।
জুটি: বেহরেনডর্ফ (বাঁ দিকে) ও স্টার্কের সামনে শেষ ইংল্যান্ড। ছবি: এপি এবং রয়টার্স।
এর আগেও বাঁ-হাতি পেসারের বিরুদ্ধে ভরাডুবি হয়েছিল ইংল্যান্ড। অ্যাশেজে মিচেল জনসনের আগুনে গতিতে হোয়াইওয়াশ হয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। সিরিজের মাঝেই দেশে ফিরে এসেছিলেন জোনাথান ট্রট। বিশ্বকাপেও বাঁ-হাতি পেসারই কাঁটা হয়ে দাঁড়াল অইন মর্গ্যানদের কাছে।
জো রুট (৮) ও বেন স্টোকসকে (৮৯)-কে যে ভাবে স্টার্ক ফেরালেন, তার প্রশংসা করতেই হচ্ছে। রুট শুরু থেকেই স্টার্কের ইনসুইংয়ের জন্য অপেক্ষা করে খেলছিলেন। কিন্তু সমানে অফস্টাম্পের বাইরে তাঁকে বল করে যান স্টার্ক। একই লাইন থেকে হঠাৎ একটি বল ভিতরের দিকে বাঁক খাওয়ান স্টার্ক। যা আছড়ে পড়ে রুটের প্যাডে। স্টোকস উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়ার পরেও স্টার্কের রিভার্স সুইং বুঝতে পারেননি। পা-বাড়ানোর আগেই স্টাম্পে আছড়ে পড়ে স্টার্কের ইয়র্কার। ম্যাচের পরে টুইটারে এই ডেলিভারিকে ‘বল অব দ্য টুর্নামেন্ট’ বলা হচ্ছে।
ব্যাটিংয়েও অস্ট্রেলিয়া বুঝিয়ে দেয় ইংল্যান্ডকে তারা হাল্কা ভাবে নিচ্ছে না। এ দিন ফের সেঞ্চুরি করেন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। ১১৬ বলে ১০০ রান করেন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক। বিশ্বকাপে তাঁর দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। তাঁর সঙ্গে ওপেন করতে নেমে ১২৩ রানের জুটি গড়েন ওয়ার্নার। কিন্তু ৫৩ রান করে ফিরতে হয় তাঁকে। যদিও মিডল অর্ডারে সেই ছন্দ বজায় রাখতে পারেননি উসমান খোয়াজা, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টোয়নিসরা। উইকেট হারিয়েছে প্রতিনিয়ত। ম্যাক্সওয়েল যে ভাবে শুরু করেছিলেন, দেখে মনে হয়েছিল এ দিন বড় ইনিংস খেলার পরিকল্পনায় রয়েছেন। কিন্তু অফস্টাম্পের এক হাত বাইরের বল কাট করতে গিয়ে ধরা পড়েন জস বাটলারের হাতে। ৮ বলে ১২ রান করে ফিরে যান তিনি।
স্টোয়নিস ফের হতাশ করলেন। ব্যাট করতে নেমে বলের নাগালই পাচ্ছিলেন না। সব চেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন আদিল রশিদের বলে। কোনটা গুগলি, কোনটাই বা লেগস্পিন তা বোঝার কোনও ইঙ্গিত দেখা গেল না তাঁর মধ্যে। প্রাক্তন অধিনায়ক স্মিথ যদিও মাঝের দিকে ম্যাচের হাল ধরতে চেয়েছিলেন।
স্কোরকার্ড
অস্ট্রেলিয়া ২৮৫-৭ (৫০)
ইংল্যান্ড ২২১ (৪৪.৪)
অস্ট্রেলিয়া
ফিঞ্চ ক ওকস বো আর্চার ১০০•১১৬
ওয়ার্নার ক রুট বো মইন ৫৩•৬১
খোয়াজা বো স্টোকস ২৩•২৯
স্মিথ ক আর্চার বো ওকস ৩৮•৩৪
ম্যাক্সওয়েল ক বাটলার বো উড ১২•৮
স্টোয়নিস রান আউট ৮•১৫
ক্যারি ন. আ. ৩৮•২৭
কামিন্স ক বাটলার বো ওকস ১•৪
স্টার্ক ন. আ. ৪•৬
অতিরিক্ত ৮
মোট ২৮৫-৭ (৫০)
পতন: ১-১২৩ (ওয়ার্নার, ২২.৪), ২-১৭৩ (খোয়াজা, ৩২.২), ৩-১৮৫ (ফিঞ্চ, ৩৫.৩), ৪-২১৩ (ম্যাক্সওয়েল, ৩৮.২), ৫-২২৮ (স্টোয়নিস, ৪১.৫), ৬-২৫০ (স্মিথ, ৪৫.৪), ৭-২৫৯ (কামিন্স, ৪৭.১)।
বোলিং: ক্রিস ওকস ১০-০-৪৬-২, জোফ্রা আর্চার ৯-০-৫৬-১, মার্ক উড ৯-০-৫৯-১, বেন স্টোকস ৬-০-২৯-১, মইন আলি ৬-০-৪২-১, আদিল রশিদ ১০-০-৪৯-০।
ইংল্যান্ড
বেয়ারস্টো ক কামিন্স বো বেহরেনডর্ফ ২৭•৩৯
ভিন্স বো বেহরেনডর্ফ ০•২
রুট এলবিডব্লিউ বো স্টার্ক ৮•৯
মর্গ্যান ক কামিন্স বো স্টার্ক ৪•৭
স্টোকস বো স্টার্ক ৮৯•১১৫
বাটলার ক খোয়াজা বো স্টোয়নিস ২৫•২৭
ওকস ক ফিঞ্চ বো বেহরেনডর্ফ ২৬•৩৪
মইন ক ক্যারি বো বেহরেনডর্ফ ৬•৯
রশিদ ক স্টোয়নিস বো স্টার্ক ২৫•২০
আর্চার ক ওয়ার্নার বো বেহরেনডর্ফ ১•৪
উড ন. আ. ১•২
অতিরিক্ত ৯ মোট ২২১ (৪৪.৪)
পতন: ১-০ (ভিন্স, ০.২), ২-১৫ (রুট, ৩.৩), ৩-২৬ (মর্গ্যান, ৫.৫), ৪-৫৩ (বেয়ারস্টো, ১৩.৫), ৫-১২৪ (বাটলার, ২৭.২), ৬-১৭৭ (স্টোকস, ৩৬.৬), ৭-১৮৯ (মইন, ৩৯.৩), ৮-২০২ (ওকস, ৪১.৩), ৯-২১১ (আর্চার, ৪৩.৩), ১০-২২১ (রশিদ, ৪৪.৪)।
বোলিং: জেসন বেহরেনডর্ফ ১০-০-৪৪-৫, মিচেল স্টার্ক ৮.৪-১-৪৩-৪, প্যাট কামিন্স ৮-১-৪১-০, নেথান লায়ন ৯-০-৪৩-০, মার্কাস স্টোয়নিস ৭-০-২৯-১, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ২-০-১৫-০।
৬৪ রানে জয়ী অস্ট্রেলিয়া
ম্যাচের সেরা অ্যারন ফিঞ্চ
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Cha••el - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy