ইমনের এই ছবি দীর্ঘদিন মনে রাখবে বাংলাদেশ ক্রিকেট। ছবি— এএফপি।
একটা সময় মনে হয়েছিল, ফাইনালে আর ব্যাট হাতে নামতেই পারবেন না। ভারতের রান তাড়া করার সময়ে হঠাৎই পায়ের পেশিতে টান ধরায় তখন সোজা হয়ে দাঁড়ানোই কষ্টকর হয়ে উঠেছে তাঁর পক্ষে। তানজিদ হাসান আউট হয়ে ফিরতেই ক্যামেরায় ধরা পড়ে মাঠে শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন। বাধ্য হয়ে ফিরে যেতে হয় ড্রেসিংরুমে। কিন্তু তাসের ঘরের মতো যখন ভেঙে পড়ছে বাংলাদেশ, তখন আর স্থির থাকতে পারেননি বাংলাদেশের বাঁ হাতি ওপেনার।
ষষ্ঠ উইকেট যাওয়ার পরে ওষুধ খেয়ে সটান নেমে পড়েন অধিনায়ক আকবর আলিকে সঙ্গ দিতে। দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে যান। ইমন যখন আউট হলেন, তখন বাংলাদেশ জয়ের গন্ধ পেতে শুরু করে দিয়েছে। তাঁর ফেলে আসা কাজটা শেষ করেন আকবর ও রাকিবুল। প্রথমবার যুব বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দে তিনি ভুলেছেন পায়ের প্রবল যন্ত্রণা। সোমবার জোহানেসবার্গ যাওয়ার পথে বাংলাদেশের ওপেনার আনন্দবাজার ডিজিটালকে বললেন, “এটাই আমার জীবনের সেরা ইনিংস। পঞ্চাশ করতে পারিনি। তবে তাতে কোনও আক্ষেপ নেই। দেশকে বিশ্বকাপ জেতানোর পিছনে আমারও যে অবদান রয়েছে, তা ভেবে খুব ভাল লাগছে।”
স্কোর বোর্ড বলছে ইমন করেছেন ৪৭ রান। কিন্তু পরিস্থিতির বিচারে তাঁর ওই ইনিংসের দাম সেঞ্চুরির থেকেও বেশি। ইমন সেই সময়ে রুখে না দাঁড়ালে ম্যাচ বের করা কঠিন হয়ে যেত বাংলাদেশের পক্ষে। ভারতের লেগ স্পিনার রবি বিষ্ণোই তখন আগুন জ্বলাচ্ছেন বল হাতে। পায়ের পেশির টান নিয়ে বিষ্ণোইয়ের বিষ শুষে নেন ইমন।
আরও পড়ুন: ‘বেশ কয়েক বছর ধরেই মনে হচ্ছিল বিশ্বকাপ জিততে পারি’
শারীরিক যন্ত্রণাকে অগ্রাহ্য করে দলের জন্য নিজের সেরাটা দেওয়ার বহু নজির রয়েছে ক্রিকেটে। ২০০৩ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অমর ৯৮ রানের ইনিংস খেলার সময়েই খোঁড়াচ্ছিলেন সচিন তেন্ডুলকর। চোয়ালে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় অনিল কুম্বলে নাগাড়ে বল করে চলেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজে। ইমনের এই ইনিংস দীর্ঘদিন মনে রাখবেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। ফাইনালের কঠিন সময়ের স্মৃতিচারণ করে ইমন বলছিলেন, ‘‘আমি যখন ১৫ রানে ব্যাট করছি, তখনই টের পাচ্ছিলাম যন্ত্রণা হচ্ছে। ২৫ রান করার পরে আর টানতে পারলাম না। মাঠেই শুয়ে পড়ি। ভাবলাম আধ ঘণ্টা যদি বিশ্রাম নিই, তা হলে হয়তো পরে ব্যাট করতে পারব। এ দিকে একের পর এক উইকেট যখন যাচ্ছে, তখন আর ডাগ আউটে বসে থাকতে পারলাম না। নেমেই পড়লাম ব্যাট হাতে।’’ তার পরের দৃশ্য সবাই দেখেছেন।
আরও পড়ুন: ঠান্ডা মাথার এই ‘ফিনিশার’-এর নেতৃত্বে নতুন অধ্যায় শুরু হল পদ্মাপাড়ের ক্রিকেটে
পায়ে ক্র্যাম্প ধরলে ফুটওয়ার্কে সমস্যা হয়। বলের লাইনে পা নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। দ্রুত রান নেওয়াও যায় না। ফাইনালে পা টেনে টেনে দৌড়চ্ছিলেন ইমন। অহেতুক বড় শট খেলার ঝুঁকি নিচ্ছিলেন না। স্ট্রাইক রোটেট করার কাজটা করে যাচ্ছিলেন। কারণ তাঁদের টার্গেট খুব বেশি ছিল না। শুধু তো শারীরিক সমস্যা নয়, উত্তপ্ত ফাইনালে কথা কাটাকাটিতে বারবার জড়িয়ে পড়েন ক্রিকেটাররা। ভারতের ক্রিকেটারদের স্লেজিং সহ্য করতে হয়েছে ইমনকেও। বিষ্ণোইয়ের গুগলি বার বার তাঁকে বিব্রত করছিল। হতাশায় ভারতের লেগ স্পিনারকে কিছু বলতেও দেখা যায়। সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করায় হাসতে হাসতে ইমন বলছিলেন, ‘‘বিষ্ণোই দারুণ বল করছিল। তবে ও আমাকে বিরক্তও করছিল। আমি কিন্তু কোনও জবাব দিইনি। আমি ভাগ্যবান। ওই সময়ে বেঁচে গিয়েছি। পায়ে ক্র্যাম্প থাকায় ঠিক মতো শট খেলতে পারছিলাম না। দৌড়তেও ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু মনকে বলছিলাম, আমাকে পারতেই হবে। এ রকম সুযোগ বার বার পাওয়া যাবে না।”
ফাইনালে ইমনের ব্যাট কথা বলল। ছবি— এএফপি।
৪৭ রানে যশস্বী জয়সওয়ালের বলে ইমন আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরার দৃশ্যটাও স্মরণীয় হয়ে থাকবে বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্তদের কাছে। পা টানতে টানতে মাঠ ছাড়ছিলেন তিনি। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে পারছিলেন না তামিম ইকবালের বড় ভক্ত। রাকিবুল হাসান উইনিং স্ট্রোক মারার পরে ডাগ আউট থেকে গোটা বাংলাদেশ দল নেমে আসে মাঠে। সেই উৎসবে যোগ দিতে পারেননি ইমন। বলছিলেন, ‘‘সবাই মাঠে ছুটে চলে গেল। আমি তখন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছি। ড্রেসিং রুমে বসেছিলাম। সারা রাত সবাই জয়ের উৎসব করেছে। পায়ের ক্র্যাম্পের জন্য আমি খুব বেশি কিছু করে উঠতে পারিনি।’’
যন্ত্রণা নিয়ে ইমনের ওই লড়াকু ইনিংসের জন্যই বাংলাদেশ আজ আত্মহারা। দেশ তাঁর জন্য হাসছে, উৎসব করছে, এটা ভেবেই নিজের যন্ত্রণা ভুলেছেন ইমন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy