ইয়ান চ্যাপেল।—ছবি সংগৃহীত।
অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম কিংবদন্তি ক্রিকেটার বিল লরিকে অপ্রত্যাশিত ভাবে অধিনায়কের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পিছনে স্যর ডন ব্র্যাডম্যানের হাত কতটা ছিল? লরির উপরে করা এক তথ্যচিত্রে ব্র্যাডম্যানকে আক্রমণ করে এই বিতর্ক উস্কে দিলেন ইয়ান চ্যাপেল। ব্র্যাডম্যান সম্পর্কে তাঁর কী মনোভাব, তা এর আগেও বেশ কয়েক বার পরিষ্কার করে দিয়েছেন চ্যাপেল। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, ক্ল্যারি গ্রিমেট এবং কিথ মিলারের ক্রিকেট জীবন শেষ করে দেওয়ার পিছনেও ছিল ‘‘প্রতিহিংসাপরায়ণ ব্র্যাডম্যানের হাত।’’ এ বার আবার চ্যাপেলের তিরে বিদ্ধ হলেন ডন। প্রায় ৫০ বছর আগে অধিনায়ক হিসেবে লরির অপসারণের পিছনেও সেই ব্র্যাডম্যানেরই হাত দেখতে পেয়েছেন চ্যাপেল।
অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে লরিই হলেন প্রথম অধিনায়ক, যাঁকে সিরিজের মাঝপথেই অত্যন্ত দৃষ্টিকটূ ভাবে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। অনেকেরই অভিযোগ, লরিকে ‘পিছন থেকে ছুরি’ মারা হয়েছিল। ৬৭ টেস্টে ৫২৩৪ রান করা লরিকে যে-ভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তা ‘অত্যন্ত অসম্মানের’ বলে মনে করেন চ্যাপেল। যাঁকে আবার লরির জায়গাতেই অধিনায়ক করা হয়েছিল। তথ্যচিত্রে চ্যাপেল পরিষ্কার বলেছেন, লরিকে সরিয়ে দেওয়ার পিছনে ছিল অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ড প্রশাসকদের সঙ্গে ক্রিকেটারদের ঝামেলা। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছিল যে, লরির নেতৃত্বে একটা বিদ্রোহ দানা বাধতে শুরু করেছিল। যা থামিয়ে দেয় ব্র্যাডম্যানের নেতৃত্বাধীন জাতীয় নির্বাচক কমিটি।
ঘটনার সূত্রপাত, ১৯৬৯-৭০ সালের ভারত সফরে। ওই সময় অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের থাকার জন্য নাকি অত্যন্ত নিম্নমানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন লরি। এর পরে ভাল ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে বোর্ডকে একটি চিঠি লেখেন তৎকালীন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক। যে চিঠিতে দলের সব ক্রিকেটারই সই করেছিলেন। এর পরে সহ-অধিনায়ক ইয়ান চ্যাপেলের পরামর্শে সেই চিঠি পাঠিয়ে দেন লরি। চ্যাপেল অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘‘ওই চিঠিটা পাঠিয়েই সর্বনাশ হয় লরির। তখনই বুঝে যাই, অধিনায়ক হিসেবে ওর সময় শেষ হয়ে এসেছে। লরিকে যে-কোনও সময় সরিয়ে দেবে বোর্ড। ওরা কোনও ভাবেই ক্রিকেটারদের বিদ্রোহ চায়নি।’’
ঠিক সেই দিকেই জল গড়ায়। পরের বছর অ্যাশেজ চলাকালীন অধিনায়কের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় লরিকে। সিরিজের ষষ্ঠ টেস্টের পরেই এই সিদ্ধান্ত নেন ব্র্যাডম্যানরা। তখন সপ্তম টেস্ট জিততে পারলেই অ্যাশেজ অস্ট্রেলিয়ার দখলে চলে যেত। তাঁকে যে অধিনায়কের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা কোনও নির্বাচক পর্যন্ত এসে জানাননি লরিকে। তিনি তা শোনেন রেডিয়ো মারফত। কেউ, কেউ বলে থাকেন, লরির মাঠে অতি রক্ষণাত্মক মনোভাব এবং ব্যাটিং পছন্দ হয়নি অস্ট্রেলীয় নির্বাচকদের। যে কারণে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু চ্যাপেলের কথায় পরিষ্কার, লরিকে সরানোর পিছনে অন্য কারণ কাজ করেছে— বোর্ড এবং ক্রিকেটারদের দ্বন্দ্ব। এবং, যেখানে পিছন থেকে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন স্বয়ং ব্র্যাডম্যানের মতো কিংবদন্তি ক্রিকেটার।
যদিও লরি সরে যাওয়ায়, তাঁকেই অধিনায়ক করা হয়েছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও ব্যাপারটা মেনে নিতে পারেননি চ্যাপেল। তিনি বলেছেন, ‘‘অত্যন্ত ঘৃণ্য এবং লজ্জাজনক ভাবে সে দিন সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল লরিকে। ও অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের জন্য অনেক কিছু করেছে। নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যানের (অর্থাৎ ব্র্যাডম্যানের) উচিত ছিল লরিকে নিজের মুখে সিদ্ধান্তটা জানানো।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy