ত্রাতা: আশুতোষের সঙ্গে গোলের পরে উচ্ছ্বাস শুভ ঘোষের (ডান দিকে)। মঙ্গলবার লুধিয়ানায়। এআইএফএফ
কোনও স্পেনীয় তারকা নন, এক বঙ্গসন্তানের গোলে হার বাঁচিয়ে ডার্বির আগে শীর্ষে থেকে গেল মোহনবাগান।
শ্যামনগরের ছেলে শুভ ঘোষ নেমেছিলেন খেলা শেষ হওয়ার মিনিট দশেক আগে। নংদাম্বা নওরেমের পরিবর্তে। মোহনবাগান ফুটবল অ্যাকাডেমি থেকে উঠে আসা দরিদ্র পরিবারের সেই স্ট্রাইকারই বাঁচিয়ে দিলেন কিবু ভিকুনাকে। আশে-পাশে অসংখ্য দেশি-বিদেশি তারকা ফুটবলার। প্রত্যেক দিন রিজার্ভ বেঞ্চে অপেক্ষা করতে হয় সুযোগ পাওয়ার আশায়। কিন্তু রোগাটে চেহারার জেদি ছেলে সে ভাবে মাঠে নেমেই তিনটি গোল করে ফেলেছেন। চার্চিল ব্রাদার্স বা ট্রাউয়ের বিরুদ্ধে গোল করেছিলেন বছর কুড়ির শুভ। কিন্তু মঙ্গলবারের বৃষ্টিতে ভারী হয়ে যাওয়া মাঠে তাঁর গোল পরিস্থিতির বিচারে সেরা। পঞ্জাবের গোলকিপার কিরন লিম্বু এবং ডিফেন্ডারদের ভুল বোঝাবুঝির সুযোগে শুভর গোল জিততে দিল না ইয়ান ল-এর দলকে।
বৃষ্টিতে সোমবার লুধিয়ানা স্টেডিয়ামের বিভিন্ন জায়গায় জল দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। এই মাঠে খেলা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন মোহনবাগান কোচও। কিন্তু সকাল থেকে আর বৃষ্টি না হওয়ায় এবং সংগঠকদের প্রচেষ্টায় তা মাঠকে মোটামুটি খেলার উপযোগী করে তোলা হয়। সেই মাঠে পঞ্জাবকে এগিয়ে দিয়েছিলেন মোহনবাগানের প্রাক্তনী দিপান্দা ডিকা। গতবার গোল করে বহু ম্যাচ জিতিয়েছিলেন দলকে। তা সত্ত্বেও তাঁকে ছেঁটে ফেলা হয়েছিল। স্যামুয়েল সন্দীপের তোলা বলে অসাধারণ হাফ-ভলিতে গোল করে তিনি বোঝান, প্রতিশোধ নিতে হলে সেটা মাঠেই নিতে হয়। বাইশ মিনিটের সেই গোলের পরে দু’পক্ষই আরও কিছু সুযোগ পেয়েছিল। পাপা দিয়োহারা, জোসেবা বেইতিয়ারা যেমন গোলের সুযোগ পান, তেমনই ডিকা এবং সের্খিয়ো বারবোজারাও একের বিরুদ্ধে এক অবস্থায় পেয়ে গিয়েছিলেন মোহনবাগানের গোলকিপার শঙ্কর রায়কে। কেউই শেষ কাজ হাসিল করতে পারেননি। সমতায় ফিরতে মরিয়া কিবু দুটি পরিবর্তন করেন। ড্যানিয়েল সাইরাসের জায়গায় নামান নতুন বিদেশি কোমোরন তুর্সুনভকে। শেখ সাহিলের জায়গায় নামান ব্রিটো পি এম-কে। কিন্তু তাতেও সুবিধা না হওয়ায় শুভকে নামান তিনি। তাতেই খেলার শেষ মুহূর্তে বেঁচে যাওয়ার অক্সিজেন পেয়ে যায় ১৩০ বছরের পুরনো ক্লাব। রবিবার ডার্বির আগেই ১৬ জানুয়ারি মোহনবাগানের নাম বদলে এটিকে মোহনবাগান হয়ে যাওয়ার কথা। তার আগে হেরে গেলে গাঁটছড়া বাঁধার মুখে বড় ধাক্কা খেত সবুজ-মেরুন শিবির।
ড্র করে অবশ্য হতাশ নন মোহনবাগান কোচ। ম্যাচের পর বলেছেন, ‘‘তিন পয়েন্টের জন্য খেলতে এসেছিলাম। আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। এক পয়েন্ট পেয়েছি। আমি খুশি।’’ আরও বলেন, ‘‘মাঠ গতকালের তুলনায় ভাল অবস্থায় থাকলেও খেলার উপযোগী ছিল না। বল ঠিক মতো গড়াচ্ছিলও না। এই মাঠে ভাল খেলা সম্ভব ছিল না। তবুও প্রথমার্ধে আমরা অনেকগুলো গোলের সুযোগ পেয়েছি। পঞ্জাব শক্তিশালী দল। ম্যাচটা কঠিন ছিল।’’
ম্যাচে না জিতলেও লিগ শীর্ষে থেকে ডার্বিতে নামছে মোহনবাগান। এটা কি দলকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগাবে? কিবু বলেছেন, ‘‘এ বার ডার্বিতে মনোনিবেশ করব। সমর্থকদের কাছে এই ম্যাচের আলাদা আবেগ থাকে। আমার কাছে নেই। কারণ এই ম্যাচটা জিতলে আমরা দশ পয়েন্ট পাব না। তিন পয়েন্টই পাব। সেটা পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।’’
সাত ম্যাচ খেলে মোহনবাগানের পয়েন্ট ১৪। দুই নম্বরে পঞ্জাব। আট ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ১১ পয়েন্ট। ইস্টবেঙ্গল নিয়ে এ দিন কিছু না বললেও কিবুর মন্তব্য, ‘‘দ্বিতীয় স্থানে যারা আছে সেই পঞ্জাবের চেয়ে তিন পয়েন্টে এগিয়ে আছি আমরা। ওরা কিন্তু এক ম্যাচ বেশি খেলেছে।’’ কথা বলার সময় জোসেবা বেইতিয়াদের কোচের গলায় স্বস্তি। বুঝে গিয়েছেন, ডার্বির আগে ভাগ্যও তাঁকে সাহায্য করছে।
মোহনবাগান: শঙ্কর রায়, আশুতোষ মেহতা, ফ্রান মোরান্তে, ড্যানিয়েল সাইরাস (কোমোরান তুর্সুনভ), ধনচন্দ্র সিংহ, নংদাম্বা নওরেম (শুভ ঘোষ), জোসেবা বেইতিয়া, ফ্রান গঞ্জালেস, শেখ সাহিল (ব্রিটো পি এম), সুহের ভিপি, পাপা বাবাকর দিয়োহারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy