আবার ‘সেভজিৎ’ নামে ডাকা হচ্ছে দেবজিৎকে। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া
এভাবেও ফিরে আসা যায়। চমকপ্রদ পারফরম্যান্স করে দেবজিৎ মজুমদার বুঝিয়ে দিলেন, এভাবেই ফিরে আসা যায়। গত শনিবার বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে অনায়াসে একটার পর একটা সেভ করার জন্য ‘ম্যাচের সেরা’ হয়েছেন। চলতি মরসুমে অবশ্য সব ম্যাচেই ধারাবাহিক পারফরম্যান্স বজায় রেখেছেন। কিন্তু গত মরসুম পর্যন্ত তাঁর কেরিয়ার চরম অনিশ্চয়তার অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিল। সেই অন্ধকার সরিয়ে তাঁকে আবার ‘সেভজিৎ’ নামে ডাকা হচ্ছে। তবে এমন সাফল্যের পরেও বাড়তি উচ্ছ্বসিত নন হুগলির হিন্দমোটরের এই গোলকিপার। বরং গোয়ার হোটেল হিল্টন থেকে আনন্দবাজার ডিজিটাল-কে নিজের ভাবনাচিন্তা উজাড় করে দিলেন এসসি ইস্টবেঙ্গলের শেষ প্রহরী।
গত মরসুম চার্চিল ব্রাদার্স ম্যাচের পর দীর্ঘ বিরতি। তারপর লাল-হলুদ জার্সিতে কীভাবে কামব্যাক করলেন?
করোনা পরিস্থিতির জন্য এবার সবার ক্ষেত্রেই বিরতি লম্বা হয়েছে। তবে লকডাউনের সময় আমি বাড়ির ছাদে অনুশীলন করেছি। জিম ও সঠিক ডায়েটের মাধ্যমে নিজেকে ফিট রাখার চেষ্টা করেছি। কঠিন পরিশ্রম করলে একটা সময় সাফল্য আসবেই। আমি বরাবর এই নীতিতে বিশ্বাসী। আর সেটাই আমার একমাত্র মন্ত্র। আমি শুধু পরিশ্রম করতে পারি। সেটা নিয়মিত করেও চলেছি। সেই পরিশ্রমের ফল কখনও না কখনও তো পাওয়া যাবেই। এই পরিশ্রমের জন্যই তো কামব্যাক সম্ভব হল।
আপনি ২০১৪-১৫ মরসুমে মোহনবাগানের হয়ে আই লিগ জয়ের অন্যতম কান্ডারি। তবে এরপর আপনার কেরিয়ারে অনেক উত্থান-পতন ঘটেছে। গত কয়েকটা বছর আপনি কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন?
শুধু ফুটবলার নয়, প্রত্যেক পারফর্মারের জীবনেই উত্থান-পতন ঘটে। তবে তাঁকে নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। আমি যদি নিজের উপর আস্থা না রাখতে পারি, তাহলে বাইরের লোকজন আপনার প্রতি কেন ভরসা দেখাবেন? বরাবর নিজের প্রতি বিশ্বাস আছে। অনুশীলন কিংবা ম্যাচের সময় নিজেকে সেটা বারবার বলি। তাই কেরিয়ারে এত কঠিন পরিস্থিতির সাক্ষী থাকার পরেও কামব্যাক করতে পারলাম।
কয়েকটা পরিসংখ্যান। এখনও পর্যন্ত ৩২টা সেভ করেছেন। এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে অন্তত ৮টা সেভ। বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে ৪টা। ওড়িশা এফসি-র বিরুদ্ধে ৬টা। এই উত্তরণের রহস্য কী?
ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় থেকে উত্তরপাড়া নেতাজি ব্রিগেডের কোচিং ক্যাম্পে অনুশীলন করা শুরু করি। এখনও সময় পেলে সেটা নিয়ম করে চলছে। করোনা পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হওয়ার পরেই টালিগঞ্জ থেকে ওখানে চলে যেতাম। তারপর এখানে এসে ববি মিমসের সঙ্গে পরিচয় হয়। কামব্যাকের নেপথ্যে আমাদের গোলকিপার কোচের অনেক অবদান আছে। উনি আমার টেকনিকের পেছনে অনেক খেটেছেন। অনেক উঁচু পর্যায়ে তিনি খেলেছেন। তাই ওঁর পরামর্শের জন্য সুফল পাচ্ছি।
আরও পড়ুন: হেরেও হাবাস বলছেন ফিরে আসা সম্ভব
এই বিষয়টা একটু বিশদে ব্যাখ্যা করুন।
শুধু পরিশ্রম নয়, বড় গোলকিপার হতে গেলে একাগ্রতাও বাড়াতে হবে। একাগ্রতা বাড়ানোর সবচেয়ে বড় অস্ত্র হল যোগ ব্যায়াম। এর পাশাপাশি ম্যাচের দিন বহির্জগত থেকে সরে যাই। সোশ্যাল মিডিয়াতে থাকা তো অনেক দূরের কথা, ম্যাচের দিন পরিবারের সঙ্গে পর্যন্ত যোগাযোগ রাখি না। এগুলো আমার অনেক বছরের অভ্যেস। তাছাড়া বিপক্ষ দল নিয়েও চর্চা করি। বিপক্ষের প্রতিটি ফুটবলার কীভাবে খেলে সেটা নিয়েও সাপোর্ট স্টাফদের সঙ্গে আলোচনা করি। যাতে একই ভুলের পুনরাবৃত্তি না হয়। একজন পারফর্মার ভুল করবেই। কিন্তু একই ভুল বারবার হওয়া কাম্য নয়।
জৈব বলয়ে থেকে পারফরম্যান্স করা কতটা কঠিন?
আমাদের দল কিংবা আমার পারফরম্যান্স নিয়ে নিয়মিত নেতিবাচক আলোচনা হলেও কিস্যু যায় আসে না। কোভিডের জন্য গোটা দেশের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। সেখানে ফুটবল শুরু হয়েছে, এটাই তো আমাদের কাছে অনেক বড় ব্যাপার। দুবেলা অনুশীলন করতে পারছি। ম্যাচ খেলছি। সময় পেলে সতীর্থদের ঘরে গিয়ে আড্ডা দিচ্ছি। এখানে আমরা পরিবারের মত আছি। জীবনে আর কী চাই। গত চার-পাঁচ মাস ঘরে বসে থাকার চেয়ে এখন অনেক ভাল আছি। তবে গোয়া এসে প্রথম ১৪ দিন নিভৃতবাসে থাকা খুব চাপের ছিল। সারাদিন ঘরেই থাকতে হত। রুটিন বলতে হালকা জিম, খাওয়া-দাওয়া, ওয়েব সিরিজ, ইউ টিউব দেখা ও ঘুম। ওই ১৪টা দিন যেন ১৪ মাসের মতো কেটেছিল!
আরও পড়ুন: নতুন ভাবে শুরু করার লক্ষ্যে ঝাঁপাচ্ছেন সুনীলরা
নিজের উন্নতির জন্য ইউ টিউব দেখেন? কাদের ভিডিয়ো দেখতে পছন্দ করেন?
আমি বুফোঁর অন্ধ ভক্ত। এছাড়া দাভিদ দ্য হিয়া, জো হার্ট আমার কাছে উপরের দিকে রয়েছেন। ভবিষ্যতে ওঁদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাব কিনা, জানা নেই। তাই ওঁদের ভিডিয়ো দেখে কিছু শেখার চেষ্টা করি।
যে ছন্দে এখন এসসি ইস্টবেঙ্গল খেলছে, তাতে দ্বিতীয় লেগের ডার্বিতে কি অন্য লাল-হলুদকে দেখা যাবে?
গত চারটি ম্যাচে আমাদের পারফরম্যান্স বেশ ভাল। তবে আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই। কারণ, আমাদের অনেকটা মেরামত করতে হবে। লিগ টেবলের আরও উপরে উঠতেই হবে। ফলে এখনই ডার্বি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছি না। বড় ম্যাচ নিয়ে ভাবতে বসলেই অহেতুক চাপ চলে আসবে। তাছাড়া দ্বিতীয় ডার্বির আগে আমাদের অনেকগুলো ম্যাচ খেলতে হবে। সামনে কেরালা ব্লাস্টার্স ম্যাচ। আপাতত সেই ম্যাচ নিয়েই ভাবছি।
এটিকে মোহনবাগানের প্রীতম, প্রবীর, প্রণয়, শুভাশিস আপনার পুরোনো সতীর্থ। ওঁদের জমকালো পারফরম্যান্স দেখলে কতটা গর্ব বোধ করেন?
সবসময় গর্ব বোধ করি। মাঠে আমরা লড়াই করলেও মাঠের বাইরে আমরা পুরোনো বন্ধু। ওদের সঙ্গে শুধু বন্ধুত্ব নয়, পারিবারিক সম্পর্ক আছে। তাই প্রীতম, প্রণয়, প্রবীর মাঠ দাপালে অবশ্যই গর্বিত হই। কারণ, ভাল বন্ধু হওয়ার পাশাপাশি আমরা বাঙালি। অবশ্য এই তালিকায় সৌভিক চক্রবর্তী ও সৌভিক ঘোষের নাম রাখবেন। কারণ, আমরা সবাই এক ব্যাচের।
ব্রাইট এনোবাখারের মতো স্ট্রাইকারকে সামলাতে হয় না। আপনি কি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন?
ব্রাইট অবশ্যই বড় মাপের স্ট্রাইকার। ওর বল কন্ট্রোল শিক্ষণীয়। ব্রাইট আসার পর আত্মবিশ্বাস অনেকটা বেড়েছে। সেটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে চলতি আইএসএলে সব দলেই ভাল স্ট্রাইকার আছে। সেটা ভুলে গেলে চলবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy