রাফায়েল নাদাল। ছবি: রয়টার্স।
ফরাসি ওপেনের প্রথম রাউন্ডে হেরে অবসরের ইঙ্গিত রাফায়েল নাদালের গলায়। পেশাদার টেনিসে খেলা শেষ হওয়ার পর পরাজিত খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা বলা হয় না। সেই রীতি ভাঙল ফরাসি ওপেন। আলেকজান্ডার জ়েরেভের কাছে সরাসরি সেটে হেরে যাওয়া নাদালের সাক্ষাৎকার নেওয়া হল কোর্টেই।
প্রিয় লাল সুরকির কোর্টে সম্ভবত আর ফিরবেন না পেশাদার টেনিস খেলতে। ১৪ বার ফরাসি ওপেন-সহ ২২টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাবের মালিক বুজে আসা গলায় জানিয়ে দিলেন অনুরাগীদের। জ়েরেভ অল্প কয়েকটা কথা বলেই ব্যাগ গুছোতে ব্যস্ত থাকা নাদালের জন্য মঞ্চ ছেড়ে দিলেন। আয়োজকদের ডাকে সাড়া দিয়ে নাদাল এগিয়ে এলেন শূন্য দৃষ্টি নিয়ে। তাঁর ভাবনায় হয়তো তখন ভিড় করছিল ফরাসি ওপেনের অসংখ্য সুখের স্মৃতি।
চোখের কোণ চিক্ চিক্ করলেও স্পেনের তারকার চোখ থেকে জল পড়েনি। পেশাদারিত্বের আড়ালে আবেগ লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন। তবু গলা বুজে এসেছে কয়েক বার। চেহারা চুঁইয়ে পড়ছিল বিষণ্ণতা।
নাদাল বলতে শুরু করলেন, ‘‘জানি না এই শেষ বার আপনাদের সামনে এলাম কিনা। যদি তাই হয়ও, তা হলেও বলব দারুণ উপভোগ করেছি। এখানকার দর্শকেরা অসাধারণ। আমার জন্য আরও দুর্দান্ত। এখানকার মানুষের ভাসবাসা আমি হৃদয় দিয়ে অনুভব করি। সব কিছুই দুর্দান্ত এখানকার। এত দিন ধরে আমার পাশে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।’’
নাদালের কথা শুনে দর্শকাসনে অনেকের চোখেই তখন জল। নাদাল অবিচল। বলে চলেছেন তিনি, ‘‘না, এটাই শেষ নয়। এখানে আবার হয়তো ফিরব দু’মাস পর। অলিম্পিক্স খেলতে চাই। ওটাই এখন আমার এক মাত্র অনুপ্রেরণা। তার পর জানি না। সে জন্য প্রস্তুতি নেব। সেরা টেনিস উপহার দিতে চাই আপনাদের।’’ টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে উঠল স্পেনের আর এক খেলোয়াড়ের মুখ। নাদালের খেলা দেখতে আসা কার্লোস আলকারাজ়ের মুখেও হাসি নেই তখন। উদাস মনে শুনছিলেন নিজের আদর্শের কথা। অথচ তাঁর সঙ্গেই জুটি বেধে অলিম্পিক্সে ডাবলস খেলবেন নাদাল। স্পেনের টেনিসে নাদালের উত্তরসূরি তিনিই।
দেশের টেনিসের ব্যাটনটা হয়তো অলিম্পিক্সের মঞ্চেই নিজের অ্যাকাডেমির ফসল অলকারাজ়েরক হাতে তুলে দেবেন নাদাল।
জ়েরেভকেও প্রশংসা ভরালেন নাদাল। দু’বছর আগে জার্মান তরুণকে সেমিফাইনালে হারিয়েছিলেন ১৪তম ফরাসি ওপেন জেতার পথে। নাদাল বললেন, ‘‘দু’বছর আগেও বলেছিলাম, জ়েরেভ ভীষণ কঠিন প্রতিপক্ষ। সব শক্তি প্রয়োগ না করলে ওকে হারানো যায় না। আজও সেই কথাই বলছি। ও সত্যিই অসাধারণ খেলোয়াড়। কঠিন, খুব কঠিন প্রতিপক্ষ। ওর জন্য শুভেচ্ছা থাকল। পরের ম্যাচগুলো আরও ভাল খেলুক।’’ কথার ফাঁকেই সুযোগ মতো নিজের পরিবার, কোচ, সাপোর্ট স্টাফদের ধন্যহবাদ দিলেন। বললেন, ‘‘ওদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এত দিন ধরে আমার পাশে রয়েছে। সব রকম পরিস্থিতিতে আমাকে সমর্থন করেছে। ওদের ছাড়া এতটা পথ আসতেই পারতাম না। আমার সব সাফল্যের কৃতিত্ব ওদের প্রাপ্য। আমার টেনিসজীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ওরা। ওদের জন্যও আরও এক বার এই কোর্টে ফিরতে চাই দু’মাস পর। আমার এখন ২৮ বছর বয়স। দুঃখিত প্রায় ৩৮ হবে। আসলে ২৮টাই আমার পছন্দ (প্রথম বার হেসে)। যাই হোক এই বয়সে আমার শুধু একটাই লক্ষ্য রয়েছে।’’
রজার ফেডেরার যুগ শেষ হয়েছে আগেই। নাদালও কথার ছত্রে ছত্রেও যুগাবসানের ইঙ্গিত। হয়তো পেশাদার টেনিসের শেষ ম্যাচটা প্রিয় ফরাসি ওপেনের কোর্টেই খেলে ফেললেন। ‘শিষ্য’ আলকারাজ়কে সাক্ষী রেখে। নাদাল কি জানেন, কত বড় দায়িত্ব চাপিয়ে দিলেন ২১ বছরের তরুণের কাঁধে।
ফিলিপ সাঁতিয়ের কোর্টে এক জনকেই নিশ্চিত দেখাচ্ছিল। স্ত্রী মারিয়া ফ্রান্সিসকা পেরেল্লোর কোলে ঘুমিয়ে পড়া ১ বছর ৭ মাসের জুনিয়র নাদালকে। সিনিয়র যে ২৪ বছরের উত্তেজনার কার্যত সমাপ্তি ঘোষণা করে দিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy