৭৩ বছরের টমাস কাপে প্রথম বার ফাইনালে উঠেছে ভারত। সৈয়দ মোদী, প্রকাশ পাড়ুকোন, পুল্লেলা গোপীচাঁদরা কেরিয়ারের তুঙ্গে থাকার সময়েও যা করতে পারেননি সেটাই করে দেখিয়েছেন শ্রীকান্ত, প্রণয়রা। আর সেই জয় এসেছে যন্ত্রণা ভুলে লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে।
ফাইনাল জিতে উচ্ছ্বাস ভারতীয় দলের ছবি: টুইটার
ডেনমার্কের রাসমাস জেমকের বিরুদ্ধে লম্বা র্যালির পরে ভারতের এইচএস প্রণয়ের ক্রসকোর্ট ব্যাকহ্যান্ড মাটিতে আছড়ে পড়তেই গ্যালারি থেকে দৌড়লেন লক্ষ্য সেন, কিদম্বি শ্রীকান্তরা। সঙ্গে ভারতীয় দলের সাপোর্ট স্টাফ। সবাই মিলে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন প্রণয়কে। কারও হাতে ভারতের জাতীয় পতাকা। তখনও হয়তো তাঁদের বিশ্বাস হচ্ছে না যে এক ইতিহাস লিখে আর এক ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে তাঁরা। ৭৩ বছরের টমাস কাপে প্রথম বার ফাইনালে উঠেছে ভারত। সৈয়দ মোদী, প্রকাশ পাড়ুকোন, পুল্লেলা গোপীচাঁদরা কেরিয়ারের তুঙ্গে থাকার সময়েও যা করতে পারেননি সেটাই করে দেখিয়েছেন তাঁরা। আর সেই জয় এসেছে যন্ত্রণা ভুলে লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে। শেষ ম্যাচে সেটাই করে দেখিয়েছেন প্রণয়।
বিশ্বের ১৩ নম্বর ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় জেমকের বিরুদ্ধে প্রণয় যখন খেলতে নামেন তখন সেমিফাইনালে ভারত ও ডেনমার্কের মধ্যে টাই ২-২ ব্যবধানে ছিল। নির্ণায়ক ম্যাচের শুরুটা ভাল হয়নি প্রণয়ের। ১৩-২১ ব্যবধানে হারেন প্রথম সেট। কিন্তু তার থেকেও যেটা ভারতের কাছে চিন্তার হয়ে দাঁড়ায় সেটা হল ব্যাঙ্ককের কোর্টে পা পিছলে প্রণয়ের পড়ে যাওয়া। এ বারের প্রতিযোগিতায় বেশ কয়েক জন শাটলার পিছলেছেন। কোর্ট নিয়ে অনেকে অভিযোগও করেছেন। প্রথম সেট চলাকালীন প্রণয় পড়ে যাওয়ার পরে সেখানে ছুটে যান চিকিৎসক। কিছু ক্ষণ তাঁর চিকিৎসা হয়। তার পরে ফের খেলতে ওঠেন প্রণয়। দেখে বোঝা যাচ্ছিল যন্ত্রণায় রয়েছেন তিনি। তাঁকে সতীর্থরা গ্যালারি থেকে তাতাচ্ছিলেন। প্রথম সেট হারলেও পরের দুই সেটে ফেরেন প্রণয়। প্রবল যন্ত্রণা উপেক্ষা করেই জেতেন তিনি। দ্বিতীয় সেটে (২১-৯) প্রতিপক্ষকে দাঁড়াতে দেননি প্রণয়। তৃতীয় সেটেও (২১-১২) সহজে জয় আসে।
কী ভাবে এল এই জয়? প্রণয় বলেন, ‘‘শরীরের থেকে মনের জোর বেশি দরকার ছিল। পড়ে যাওয়ার পরে প্রথমে হাঁটতেও কষ্ট হচ্ছিল। ভাবছিলাম কী ভাবে খেলব। কিন্তু মনে মনে বলছিলাম, হাল ছাড়ব না। শেষ পর্যন্ত লড়াই করব। প্রার্থনা করছিলাম ব্যথা যেন না বাড়ে। তৃতীয় সেটের শেষের দিকে ব্যথা কমে গিয়েছিল। ফলে কোর্টে খেলতে সমস্যা হচ্ছিল না। আশা করি ফাইনালেও সমস্যা হবে না। এক দিনের বিরতিতে সুস্থ হয়ে উঠতে হবে।’’
শুধু শুক্রবার ডেনমার্কের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে নয়, তার আগে মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালেও শেয ম্যাচে নেমেছিলেন প্রণয়। সেটাও নির্ণায়ক ম্যাচ ছিল। মালয়েশিয়াকে হারিয়ে শেষ চারে ওঠেন প্রণয়রা। তাঁর চাপ সামলানোর ক্ষমতার জন্যই হয়তো তাঁকে শেষ ম্যাচের জন্য রাখছে ভারত। এখন দেখার ফাইনালে জয়ের হ্যাটট্রিক তিনি করতে পারেন কি না।
সেমিফাইনালের শুরুটা অবশ্য ভাল হয়নি ভারতের। প্রথম ম্যাচে নেমেছিলেন লক্ষ্য সেন। ১৩-২১, ১৩-২১ লক্ষ্য হেরে যান ভিক্টর অ্যাক্সেলসেনের কাছে। এর আগে বিশ্বের এক নম্বরকে লক্ষ্য হারালেও সেমিতে তাঁকে দাঁড়াতে দেননি অ্যাক্সেলসেন। ভারতকে লড়াইয়ে ফিরিয়ে আনেন ডাবলস জুটি সাত্বিকসাইরাজ রানকিরেড্ডি এবং চিরাগ শেট্টি। তাঁরা ২২-২০, ২১-২৩, ২২-২০ গেমে হারিয়ে দেন কিম অস্ট্রুপ এবং ম্যাথিয়াস ক্রিশ্চেনসেনের জুটিকে। তৃতীয় ম্যাচে নেমেছিলেন শ্রীকান্ত। তিনি প্রাক্তন অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন অ্যান্ডার্স অ্যান্টনসেনকে ২১-১৮, ১২-২১, ২১-১৫ গেমে হারিয়ে ভারতকে এগিয়ে দেন। চতুর্থ ম্যাচে আবার স্কোর সমান হয়ে যায়। অ্যান্ডার্স রাসমাসেন এবং ফ্রেডেরিক সোগার্ড জুটির কাছে ১৪-২১, ১৩-২১ গেমে পরাজিত হন কৃষ্ণ প্রসাদ গর্গ এবং বিষ্ণুবর্ধন গৌড়। পঞ্চম ম্যাচে বাজিমাত করেন প্রণয়।
১৪ বারের টমাস কাপ চ্যাম্পিয়ন ইন্দোনেশিয়ার বিরুদ্ধে রবিবার ফাইনাল খেলতে নামবেন প্রণয়রা। পর পর দু’টি ম্যাচে আন্ডারডগ হিসাবে জিতেছেন। হারানোর কিছু নেই তাঁদের। কিন্তু জেতার আছে অনেক। আছে ইতিহাস তৈরি করার সুযোগ। তাই ফাইনালে হয়তো শরীরের থেকে মনের জোর অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। সে দিনও প্রণয় চাইবেন শেষ শটটা মারার পরে যেন একই ভাবে ছুটে যান শ্রীকান্তরা। একই ভাবে ওড়ে ভারতের জাতীয় পতাকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy