বিরাট কোহলীর উইকেট নেওয়ার পরে উচ্ছ্বাস শাহিন আফ্রিদির। ছবি: টুইটার।
আফগানিস্তান সীমান্তের পাশে, খাইবার পাস-এর গা ঘেঁষে ছোট্ট জায়গা লান্ডি কোটাল। পাকিস্তানের বাইরে এই জায়গা সম্পর্কে ধারণা খুব বেশি লোকের হয়তো নেই।
এ বার থেকে কিন্তু থাকবে। কারণ এখানকারই একটা ছেলের হাত থেকে বেরোনো দুটো বিষাক্ত বল এ দিন ভারতীয় ব্যাটিংকে শুরুতে ধাক্কা দিয়ে যায়। তিনি— শাহিন শাহ আফ্রিদি।
এই ছোট্ট জায়গায় ক্রিকেট খেলার খুব ভাল কিছু ব্যবস্থা ছিল না। তাই দাদার সঙ্গে টেনিস বলেই হাতেখড়ি হয়েছিল ছেলেটার। দাদার হাত ধরেই ক্রিকেট মাঠে প্রবেশ। টেনিস বলে বল শুরু আর দাদার কাছ থেকে পাঠ নিয়েই ক্রিকেটে প্রথম পদক্ষেপ।
শাহিন শাহ আফ্রিদির উঠে আসার নেপথ্যে রয়েছেন আরও দুই আফ্রিদি— রিয়াজ় এবং শাহিদ!
কার ভূমিকা কতটা? পাকিস্তানে ফোন করে জানা গেল, দাদা রিয়াজ়ই শাহিনের প্রথম কোচ। যাঁর হাতে ক্রিকেটের প্রাথমিক পাঠটা নিয়েছিলেন শাহিন। পাকিস্তানের আর এক ফাস্ট বোলার, নাসিম শাহ যাঁর হাত ধরে উঠে এসেছিলেন, সেই সুলেমান কাদির খুব কাছ থেকে দেখেছেন শাহিনের উত্থান। দাদা রিয়াজ়ের সঙ্গেও খেলেছেন তিনি। প্রয়াত আব্দুল কাদিরের ছেলে এবং পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যতম সেরা কোচ সুলেমান রবিবার লাহৌর থেকে ফোনে বলছিলেন, ‘‘রিয়াজ়কে দেখেই শাহিন ক্রিকেটে আসে। রিয়াজ়ের সঙ্গে আমি খেলেছি। ও যথেষ্ট ভাল বোলার ছিল। শাহিনকে তৈরি করে দেয় ও।’’ জানা যাচ্ছে, পাক ক্রিকেটে শাহিনের চেয়ে এখনও বড় তারকা নাকি রিয়াজ়ই।
শাহিনের দাদা পাকিস্তানের হয়ে একটি টেস্ট খেলেছিলেন। আফ্রিদি পরিবারের সাত ভাইয়ের মধ্যে বড় রিয়াজ় আর ছোট শাহিন। পাকিস্তানে ফোন করে শাহিনের উত্থানের নেপথ্যে যে কাহিনিটা জানা গেল, তা এ রকম। ১৫ বছরের বড় দাদার সঙ্গে লান্ডি কোটালের স্থানীয় মাঠে খেলা শুরু করেছিলেন শাহিন। তখন টেনিস বলেই খেলাটা চলত। দাদাও পেস বলটা করতেন, ভাইও সেই রাস্তায় হাঁটা শুরু করেন। টেনিস বলে খেলতে হত বলে গতির উপরে তখন থেকেই জোর দেওয়া শুরু।
এক আফ্রিদি কোচ হলে অন্য আফ্রিদিকে দেখে শাহিন ক্রিকেটকে ভালবাসতে শেখেন। তিনি প্রাক্তন পাক অলরাউন্ডার শাহিদ আফ্রিদি। যিনি আর কিছু দিন পরেই শ্বশুর হতে চলেছেন শাহিনের। এবং, তাঁর ভাবী শ্বশুর এবং নায়কের মতো এই শাহিনও পাকিস্তানের হয়ে ১০ নম্বর জার্সিটা পরেই মাঠে নামেন।
কিন্তু কবে থেকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন শাহিন? সুলেমান কাদিরের মতে, যে দিন থেকে এই বাঁ-হাতি পেসার ডান-হাতি ব্যাটারদের ক্ষেত্রে বলটা ভিতরে আনতে শুরু করেন। ‘‘সাড়ে ছ’ফুটের উপরে উচ্চতা হওয়ায় বাউন্সটা পেত ভাল। গতিও ছিল। কিন্তু রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের পর থেকে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। ওর বিষাক্ত ইনসুইং বলগুলোয় সমস্যায় পড়তে থাকে ব্যাটাররা,’’ বলছিলেন কাদির-পুত্র। ২০২০ সালের রাওয়ালপিন্ডির ওই টেস্টে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চার উইকেট তুলে নিয়েছিলেন তরুণ শাহিন।
এ দিন প্রথম ওভারেই দুরন্ত একটা ইনসুইং ইয়র্কারে ২১ বছরের শাহিন তুলে নেন রোহিত শর্মাকে। দ্বিতীয় ওভারে আবার একটা ইনসুইং। এ বার ছিটকে যায় স্বপ্নের ফর্মে থাকা কে এল রাহুলের স্টাম্প। দ্বিতীয় স্পেলে শাহিন ফিরিয়ে দেন বিরাট কোহালিকে। ম্যাচের আগে এই বাঁ-হাতি পাক পেসার জানিয়েছিলেন তাঁর লক্ষ্যের কথা— ভারতের প্রথম তিন ব্যাটারকে ফেরানো। সেটাই করলেন তিনি। ইনিংসের মাঝে সম্প্রচারকারী চ্যানেলে বলছিলেন, ‘‘ওরাই ভারতের তিন প্রধান ব্যাটার। আমার লক্ষ্য ছিল প্রথম স্পেলে উইকেট নিয়ে ধাক্কা দেওয়া। পরে ফিরে এসে আবার উইকেট তোলা। সেটাই করতে পেরেছি।’’ যে পিচে বল সুইং করছে না, সেখানে নতুন বলে আপনি কী ভাবে সুইং পেলেন? শাহিনের জবাব, ‘‘নেটে নতুন বলটা সুইং করানোর অভ্যাস করেছিলাম। সেটা কাজে দিল।’’
তিনটে মাত্র বল। আর সেটাই ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মঞ্চে নায়ক করে দিয়ে গেল নতুন এক আফ্রিদিকে। শাহিন শাহ আফ্রিদি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy