Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Asian Games

এশিয়াডে সোনা, প্যারিস অলিম্পিক্সের টিকিট প্রাপ্তি, ভারতের হকির উত্থানের নেপথ্যে প্রবীণ নবীন

এশিয়ান গেমসে শুক্রবার জাপানকে হারিয়ে সোনা জিতল ভারত। ৯ বছর পর আবার সোনা। টোকিয়ো অলিম্পিক্সে পদকের পর আবার একটি সাফল্য। ভারতের হকির উত্থানে কী ভাবে কাজ করছে ওড়িশা সরকার।

asian games

সোনার পদক নিয়ে ভারতের হকি খেলোয়াড়দের নিজস্বী। ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:৫৫
Share: Save:

এশিয়ান গেমসে ৯ বছর পর সোনা জিতল ভারত। ২০১৪ ইনচিয়ন গেমসে শেষ বার সোনা জিতেছিল ভারত। গত বার জাকার্তা গেমসে মালয়েশিয়ার কাছে সেমিফাইনালে হেরে সোনা জয়ের স্বপ্ন শেষ হয়েছিল। এ বার ফের সোনা ভারতের ক্যাবিনেটে। সেই সঙ্গে আদায় হল অলিম্পিক্সের ছাড়পত্র। গত বারের অলিম্পিক্সে ৪১ বছর পর পদক জিতেছিল ভারত। পরের বছর প্যারিস গেমসেও তারা পদকের দাবিদার। সাম্প্রতিক কালে হকিতে ভারতের এই উন্নতি চোখ এড়াচ্ছে না কারওরই। এই উত্থানের নেপথ্যে রয়েছে ওড়িশা সরকারে ভূমিকা। গত কয়েক বছর ধরেই ভারতীয় হকি দলের স্পনসর তারা।

ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী ৭৬ বছরের প্রবীণ নবীন পট্টনায়েক নিজে ছোটবেলায় হকি খেলেছেন। হকি ভালবাসেন। কিছু দিন আগেই ওড়িশায় হকি বিশ্বকাপ হয়েছে। ২০১৮ সালে প্রথম হয়েছিল ভুবনেশ্বরে। ২০২৩ সালে দ্বিতীয় বার হয়েছে ভুবনেশ্বরের পাশাপাশি রৌরকেলাতেও। হকির ইতিহাসে ভারতই প্রথম দেশ যেখানে পর পর দু’বার বিশ্বকাপ হয়েছে। কেন ভারতীয় হকির উন্নতির পিছনে এতটা পরিশ্রম করছে নবীনের সরকার?

ওড়িশার পাঁচ বারের মুখ্যমন্ত্রী নবীন নিজে স্কুল জীবনে হকি খেলতেন। স্কুলের হকি দলের গোলরক্ষক ছিলেন তিনি। তাই পরবর্তী কালেও হকির প্রতি তাঁর এই ভালবাসা রয়েই গিয়েছে। কিন্তু ব্যক্তিগত ভালবাসা ও তাকে রাজ্যবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া এক বিষয় নয়। সেটা করতে পেরেছেন নবীন। তাই এই সাফল্য।

হকির পিছনে বড় পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে পট্টনায়েক সরকার। শুরুটা বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই। ওড়িশা থেকে বরাবরই প্রতিভাবান খেলোয়াড় উঠে এসেছেন। হকি ইন্ডিয়া লিগ শুরু হওয়ার সময় ওড়িশার সরকারি দুই সংস্থা দলটি কিনেছিল। তারা এক বছর চ্যাম্পিয়নও হয়। অর্থাৎ, হকিকে সরকারি সাহায্য দেওয়ার পরিকল্পনাও অনেক আগে থেকেই ছিল। গত দশকের শুরু থেকেই নামী হকি প্রতিযোগিতাগুলি ওড়িশায় আয়োজন করার পরিকল্পনা শুরু করে সে রাজ্যের সরকার। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, হকি বিশ্বকাপ আয়োজিত হয়। নিয়মিত হত হকি ইন্ডিয়া লিগের খেলাও। ঢেলে সাজা হয় কলিঙ্গ স্টেডিয়াম। সেই পরিকল্পনার ফসল দেখা যাচ্ছে এখন।

২০১৮ সালে ভারতের পুরুষ ও মহিলা হকি দলের স্পনসর হয়েছে ওড়িশা সরকার। তার জন্য বছরে ১০০ কোটি টাকা খরচ করছে তারা। ২০২৩ সাল পর্যন্ত সেই চুক্তি রয়েছে। তবে সেই চুক্তি এখানেই শেষ হচ্ছে না। ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ভারতীয় হকি দলের স্পনসর হিসাবে থাকতে চায় ওড়িশা। সেই বিষয়ে ইতিমধ্যে জাতীয় হকি সংস্থার সঙ্গে কথাও বলেছে তারা।

গত বারের বিশ্বকাপের জন্য ৬৭ কোটি টাকা খরচ করেছে ওড়িশা সরকার। রাজ্যে হকির উন্নতির জন্য ২০২৩ সালে ২৬১ কোটি টাকা খরচ করেছে ওড়িশা সরকার। কিন্তু শুধুই কি টাকা খরচ করা? সেই টাকা কাজে লাগাতে বড় ভূমিকা নিয়েছে প্রশাসন। গত বিশ্বকাপ দেখানো হয়েছে ওড়িশার প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে। প্রশাসন ওড়িশার ৬৭৯৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতে বড় পর্দা টাঙিয়ে খেলা দেখার ব্যবস্থা করেছে। গ্রামে গ্রামে ব্যানার, পোস্টারে হকির প্রচার করেছে। এই প্রচারের জন্য প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতকে ২০ হাজার টাকা করে দিয়েছে প্রশাসন। সেই অর্থ কাজে লাগানো হচ্ছে কি না সে দিকে নজর রাখা হয়েছে।

রৌরকেলায় তৈরি হয়েছে বিশ্বমানের হকি স্টেডিয়াম।

রৌরকেলায় তৈরি হয়েছে বিশ্বমানের হকি স্টেডিয়াম। — ফাইল চিত্র।

ভবিষ্যতে হকির আরও উন্নতির জন্যও পরিকল্পনা রয়েছে ওড়িশা সরকারের। রৌরকেলার সুন্দরগড় জেলায় তৈরি হয়েছে বিরসা মুন্ডা স্টেডিয়ামের মতো আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। সুন্দরগড় জেলায় ১৭টি অ্যাস্ট্রোটার্ফ তৈরি করার পরিকল্পনা করেছে সরকার। সেগুলি প্রায় সবই শেষের দিকে। এ ছাড়া রাজ্যের বাকি জেলাতেও অ্যাস্ট্রোটার্ফ তৈরি হচ্ছে। ফলে জেলাস্তরে হকি খেলার সুযোগ অনেক বাড়বে। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে ওড়িশা সরকার ‘মো স্কুল হকি ক্লাব’ নামের একটি ক্লাব তৈরি করেছে। সেখানে ওড়িশার ৩০টি জেলার প্রতিটি থেকে ২৪ থেকে ৩০ জন ছাত্র-ছাত্রীকে নেওয়া হচ্ছে। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। ছোট থেকেই তাদের খেলার দেখভাল করছে সরকার।

ওড়িশা সরকারের এই প্রয়াসের কথা আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছিলেন ভারতের হয়ে অলিম্পিক্সে হকিতে সোনাজয়ী খেলোয়াড় গুরবক্স সিংহ। হকির প্রাক্তন অলিম্পিয়ান আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘‘ওড়িশায় হকির উন্নতির পিছনে প্রধান কারণ রাজ্য সরকারের প্রচেষ্টা। এত টাকা খরচ করা হচ্ছে, অ্যাস্ট্রোটার্ফ তৈরি করা হচ্ছে। নবীন পট্টনায়েক নিজেও হকি খেলতেন। তাই এই খেলার প্রতি তাঁর আলাদা ভালবাসা রয়েছে। সেটা দেখা যাচ্ছে।’’

কিন্তু কেন অন্য রাজ্য সেটা পারছে না? সদিচ্ছার অভাব, না কি অন্য কোনও কারণ? গুরবক্স বলেছিলেন, ‘‘বাকি সব রাজ্য প্রতিযোগিতা জেতার পরে সেখানকার খেলোয়াড়কে পুরস্কার দেয়। নিজেদের নাম কেনার চেষ্টা করে। সেটা করে কী হবে? কোনও এক জনকে টাকা দিয়ে তো লাভ নেই। তার বদলে সামগ্রিক উন্নতির কথা ভাবতে হবে। না হলে এই ছবিই দেখা যাবে।’’

হকিতে এত পরিশ্রমের ফলও পাচ্ছে ওড়িশা। এখনও পর্যন্ত এই রাজ্য থেকে জাতীয় স্তরে ৬১ জন খেলোয়াড় সুযোগ পেয়েছেন। ৯০-এর দশকের দিলীপ তিরকে থেকে শুরু করে এশিয়াডের ফাইনালে গোল করা অমিত রোহিদাসের মতো তারকা, সব ওড়িশা থেকে এসেছেন। ৭০-৮০-র দশকে গাছের ডাল কেটে ওড়িশার গ্রামে গ্রামে হকি খেলা হত। জয়ী গ্রামকে দেওয়া হত একটা গোটা খাসি। প্রতিযোগিতা শেষে হত বনভোজন। হকির সেই উৎসাহকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছেন নবীন। প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি করেছেন উন্নত পরিকাঠামো।

গত বছর টোকিয়ো বিশ্বকাপে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছে ভারতের পুরুষদের দল। ১৯৮০ সালের পরে অলিম্পিক্সে আবার কোনও পদক পেয়েছে ভারত। মহিলা দল একটুর জন্য ব্রোঞ্জ হাতছাড়া করেছে। অলিম্পিক্স শেষে পুরুষদের দলের তৎকালীন অধিনায়ক মনপ্রীত সিংহ ও মহিলাদের দলের অধিনায়ক রানি রামপালের মুখে এসেছে নবীনের কথা। দু’জনেই ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীকে। আর নবীন কী বলছেন? তিনি মগ্ন হকির উন্নতি নিয়ে। বলছেন, ‘‘শুধু ওড়িশাতেই হকির বিস্তার হোক, সেটা আমি চাই না। চাই গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ুক। আবার ফিরে আসুক হকির সোনার দিন। সব রাজ্যকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করছি।’’ আহ্বান করছে ওড়িশা। বাকি রাজ্যগুলির কানে সেই আওয়াজ পৌঁছচ্ছে তো?

অন্য বিষয়গুলি:

Asian Games Hockey naveen patnaik
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy