Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Hans-Dieter Flick

চাণক্য ফ্লিকের হাত ধরেই ফের জার্মানি সেরা বায়ার্ন

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা প্রায় নিশ্চিত ফ্লিকের বায়ার্নের। ৪ জুলাই জার্মান কাপের ফাইনালে তারা মুখোমুখি হচ্ছে বায়ার লেভারকুসেনের।

চ্যাম্পিয়ন: ফাঁকা স্টেডিয়ামের সামনেই উল্লাস বায়ার্ন ফুটবলারদের। গেটি ইমেজেস

চ্যাম্পিয়ন: ফাঁকা স্টেডিয়ামের সামনেই উল্লাস বায়ার্ন ফুটবলারদের। গেটি ইমেজেস

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২০ ০৪:২২
Share: Save:

সরকারি ভাবে হয়তো মঙ্গলবার রাতে টানা অষ্টম বার জার্মান বুন্দেশলিগা খেতাব জিতল বায়ার্ন মিউনিখ। কিন্তু ক্লাবের অভ্যন্তরে অনেকে মনে করছেন, এই ট্রফি তাঁরা জিতে ফেলেছিলেন গত বছর নভেম্বরে। যখন নিকো কোভাচকে সরিয়ে ম্যানেজার করা হয় হ্যান্সি ফ্লিককে।

কী করেছিলেন নতুন ম্যানেজার এসে? কেনই বা তাঁকে ধরা হচ্ছে সমস্যার মধ্যে থাকা বায়ার্নের এ বারের সাফল্যের নেপথ্যে নায়ক? বায়ার্নের স্বভাবসিদ্ধ আক্রমণাত্মক ভঙ্গি ফিরিয়ে এনেছেন। ঘ্যানঘ্যানে ফুটবল থেকে মুক্তি দিয়ে ফের বিনোদন উপহার দিতে পেরেছেন। দলটাকে পাল্টে দিয়েছেন জয়ের নেশাগ্রস্ত মেশিনে।

৫৫ বছর বয়সি চাণক্য তরুণ রক্তের উপরে জোর দিয়েছিলেন। তাঁর জাদুস্পর্শে কানাডার তরুণ আলফান্সো ডেভিস দুর্ধর্ষ লেফ্ট ব্যাকে পরিণত হয়েছেন। ডেভিড আলাবাকে সেন্টার ব্যাক করে চমকে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে থোমাস মুলার বা লিয়ন গোরেৎজ়ার থেকেও সেরাটা বার করে এনেছেন।

আরও পড়ুন: ফুটবল আকাশে নতুন তারা ফাতি

মঙ্গলবার রাতে খেতাব জিতে উঠে ফ্লিক বলে দিয়েছেন, ‘‘আমরা শুধুই প্রথম ধাপ পেরিয়েছি।’’ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা প্রায় নিশ্চিত ফ্লিকের বায়ার্নের। ৪ জুলাই জার্মান কাপের ফাইনালে তারা মুখোমুখি হচ্ছে বায়ার লেভারকুসেনের। ফ্লিক যখন দায়িত্ব নেন, বায়ার্ন বুন্দেশলিগা টেবলে চার নম্বরে নেমে গিয়েছে। রক্তাল্পতায় ভুগছিল বায়ার্ন। দলের রক্ষণ ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে। বায়ার্নের শীর্ষ কর্তারা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলেন। আইনথ্রাখ্‌ট ফ্রাঙ্কফুর্টের কাছে ১-৫ হারার পরের দিনই কোভাচকে সরিয়ে ফ্লিককে ম্যানেজার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। কোভাচ ড্রেসিংরুমের সমর্থনও হারিয়ে ফেলেছিলেন। তারকা গোলকিপার মানুয়েল নয়্যার ১-৫ হারার পরেই বিবৃতি দেন, ‘‘কিছু হচ্ছে না। পরিবর্তন দরকার।’’

আর দেরি করেননি বায়ার্ন কর্তারা। যখন কোভাচের সহকারী ফ্লিকের কাছে ফোন গেল, তিনি নৈশভোজে বসেছেন। সাত মাস পরে বুন্দেশলিগা খেতাব দিয়ে তিনি দুর্দান্ত নৈশভোজ সারলেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অলিম্পিয়াকোসের বিরুদ্ধে ২-০ জয় দিয়ে যাত্রা শুরু করেন ফ্লিক। তার পরে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। ফ্লিকের অপ্রতিরোধ্য বায়ার্নের সামনে ৪-০ উড়ে গেল বরুসিয়া ডর্টমুন্ড। পরাজয়ে দিশেহারা হননি নতুন ম্যানেজার। তাঁর মন্ত্র? ‘‘শুধু জিতলেই হয় না, আনন্দ দিয়ে জিততে হবে।’’ সেই মন্ত্রেই বায়ার্নের ফুটবল আবার বিনোদনের ফুটবল।

আরও পড়ুন: কোহালিতে মুগ্ধ প্রতিপক্ষ স্মিথও

কোন জাদুতে বিশ্বকাপজয়ী লো-র সহকারী ফ্লিক, বায়ার্নকে আবার তার নিজের জায়গায় সুপ্রতিষ্ঠিত করলেন? উত্তরটা দিয়েছেন রবার্ট লেয়নডস্কি, ‘‘ওঁর রণকৌশল তৈরি করার ক্ষমতা অসম্ভব ভাল। সঙ্গে ফুটবলে জ্ঞান সত্যিই উঁচু মানের।’’ বায়ার্নের আর এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বাঁজামা পাভা এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, ‘‘এই কোচের সঙ্গে ফুটবলারদের বোঝাপড়া অসাধারণ। প্রত্যেকেই ওঁর ফুটবল দর্শনে মুগ্ধ।’’

ক্লাবের চেয়ারম্যান এবং প্রাক্তন তারকা কার্ল হেইনজ রুমেনিগে বলেছেন, ‘‘ফ্লিকের অধীনে বায়ার্নের অগ্রগতি অসাধারণ। কী মাঠের মধ্যে, কী কোষাগার ভরার ব্যাপারে।’’ আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকায় ফুটবলার কেনার ব্যাপারে খরচও করতে পেরেছে বায়ার্ন। বার্সেলোনা থেকে লোনে ফিলিপে কুটিনহো এসেছেন ১২০ মিলিয়ন ইউরোতে (১০২৯ কোটি টাকা)। আতলেতিকো দে মাদ্রিদের ফরাসি লেফ্ট ব্যাক লুকাস ফার্নান্দেজের জন্য তারা ব্যয় করে রেকর্ড ৮০ মিলিয়ন ইউরো (৬৮৬ কোটি টাকা)। স্টুটগার্ট থেকে বঁজামা পাভা যোগ দেন ৩৫ মিলিয়ন ইউরোয় (৩০০ কোটি টাকা)।

এঁদের মাথার উপরে দরকার ছিল এক জন দক্ষ পাইলটের। যিনি ঝাঁকুনি বন্ধ করে মাঝআকাশে উড়ানের মধ্যে স্থিরতা আনবেন। এখন আর সংশয় নেই যে, নভেম্বরের শুরুতে নৈশভোজে বসা হ্যান্সি ফ্লিকের কাছে ফোন যাওয়াটা সঠিক সিদ্ধান্তই ছিল।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE