কিংবদন্তি: নতুন ভূমিকা আনন্দ উপভোগ করছেন। রবিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
এ বারের টাটা স্টিল দাবা প্রতিযোগিতায় তাঁকে ধারাভাষ্যকারের পাশাপাশি মেন্টরের ভূমিকাতেও দেখা যাচ্ছে। রবিবার তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে দেখা গেল শুধু প্রতিবেদকই সাক্ষাৎকারপ্রার্থী সেই সময়, তা নয়। ব্লিৎজ় প্রতিযোগিতা চলছে। দেশের তরুণ ভারতীয় দাবাড়ুরা যাঁরা খেলছেন, একটা রাউন্ড শেষ হতেই পরামর্শ নিতে আসছেন তাঁর কাছে। ঘরের বাইরেও দু’এক জন দাবাড়ুকে দেখা গেল। মনে হল, গোটা প্রতিযোগিতাটা চলছে যেন তাঁকে কেন্দ্র করে। তিনি বিশ্বনাথন আনন্দ। বায়োপিক থেকে অবসর প্রসঙ্গ— সবকিছু নিয়েই অকপটে জানালেন আনন্দবাজারকে।
কেমন লাগছে এই নতুন ভূমিকা, জানতে চাইতেই আনন্দ বললেন, ‘‘একটা নতুন দিক থেকে প্রতিযোগিতা দেখার সুযোগ পাচ্ছি। আমি যে সব দাবাড়ুর সঙ্গে কাজ করেছি, তারা যে ভাল খেলছে সেটাই সবচেয়ে তৃপ্তির। আমরা চেয়েছিলাম ওদের লড়াই করার জায়গা করে দিতে। গেমগুলোও খুব সুন্দর হচ্ছে। একটা দাবা প্রতিযোগিতায় যেটা হওয়া উচিত। এটাই এই প্রতিযোগিতার সার্থকতা।’’
ক’দিন পরেই বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হচ্ছে দুবাইয়ে। সেখানেও ধারাভাষ্যকার হিসেবে থাকবেন আনন্দ। সে ব্যাপারে প্রশ্ন করতেই হেসে উঠে বললেন, ‘‘এই প্রথম বার হয়তো বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে যাব কিন্তু কোনও চাপ থাকবে না। একেবারে অন্য একটা দিক থেকে ম্যাচ দেখার সুযোগ পাব এবং বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ উপভোগ করব। প্রত্যেক দিন সকালে উঠে এই নিয়ে আমাকে চিন্তা করতে হবে না যে, আজ কী রকম খেলব। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ এত বড় মাপের প্রতিযোগিতা। বেশ মজার অভিজ্ঞতা হবে।’’
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন নরওয়ের ম্যাগনাস কার্লসেন এবং তাঁর চ্যালেঞ্জার রাশিয়ার ইয়ান নেপোমনিশি। এর আগেও আনন্দ বলেছেন কার্লসেন যে রকম ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন, তিনিই এই লড়াইয়ে এগিয়ে থাকবেন। তাঁর সেই বক্তব্য ধরে রেখে এদিনও বললেন, ‘‘আমি তো আগেও বলেছি এখনও পর্যন্ত কার্লসেনকে যে রকম খেলে যাচ্ছে ও-ই ফেভারিট। তবে ইয়ান যদি কোনও ভাবে কিছু পাল্টাতে পারে। তা হলে লড়াইটা আরও জমে যাবে।’’ ২০০৮ সালের পরে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ১২ রাউন্ডের পরিবর্তে এ বার ১৪ রাউন্ডে মীমাংসা হবে সঙ্গে টাইব্রেক। আরও দুটো রাউন্ড বেড়ে যাওয়ায় কার সুবিধে হবে? আনন্দ মনে করেন সুবিধে হবে কার্লসেনের। ‘‘এ রকম একটা লড়াইয়ে নামতে হলে শারীরিক ভাবেও খুব ফিট থাকতে হয়। দু’জনের মধ্যে সে দিক থেকে তুলনা করলে ম্যাগনাস এগিয়ে। ও বরাবরই খুব ফিট বলেই পরিচিত। একই সঙ্গে কেউ পিছিয়ে পড়লে ঘুরে দাঁড়ানোর আরও সুযোগ থাকবে। তবে সে ক্ষেত্রে গেমটা হয়তো আরও দীর্ঘ
হতে পারে।’’
ক’দিন আগেই আনন্দ ফাঁস করেছেন তাঁর বায়োপিকের কথা। তিনি চান আমির খান তাঁর ভূমিকায় যেন অভিনয় করেন। আমিরই কেন জানতে চাইলে বললেন, ‘‘প্রথমত আমির এক জন দাবাড়ুও। তাই ওর পক্ষে কোন ভূমিকায় অভিনয় করছে সেটা বোঝা সহজ হবে। তা ছাড়া ও খুব ভাল বন্ধুও। জানি এই ভূমিকায় ও খুব ভাল মানিয়ে নিতে পারবে। দেখা
যাক কী হয়।’’
ভারতীয় দাবার ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব আশাবাদী আনন্দ। তাঁর মতে, দেশে প্রচুর প্রতিভা আছে। তবে তিনি মনে করেন তাঁদের আরও উন্নতির জন্য দরজা খুলে দিতে হবে। সুযোগ তৈরি করতে হবে। দেশের বিভিন্ন অ্যাকাডেমি থেকে তাই যে দাবাড়ুরা উঠে আসছেন, তাঁদের নিয়ে আনন্দের মন্তব্য, ‘‘ভারতীয় দাবার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি খুবই আশাবাদী। তবে আমাদের প্রতিভাদের সুযোগ দিতে হবে। যেটা টাটা স্টিলের আয়োজিত এ রকম প্রতিযোগিতায় আমরা দিতে পারছি। র্যাপিড আর ব্লিৎজ় ফর্ম্যাটে মিশিয়ে খেলাতে পারছি। এটাই দরকার। যাতে ওরা যা শিখছে সেটা কাজে লাগিয়ে দেখাতে পারে।’’
৫১ বছর বয়সে তাঁকে খেলার পাশাপাশি অন্য ভূমিকাতেও এই যে দেখা যাচ্ছে, সেটা কি অবসরের ইঙ্গিত? অবসর নিয়ে কোনও পরিকল্পনা নিয়ে ফেলেছেন কি না তা নিয়ে গুঞ্জন কিন্তু রয়েছে। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করতেই আনন্দ পরিষ্কার বললেন, ‘‘২০২০ সালের গোড়াতেও আমি কোথায় খেলব সে ব্যাপারে গোটা বছরের সূচি তৈরি ছিল। কিন্তু অতিমারির জন্য সেই পরিকল্পনা সফল হয়নি। এ বছর তার তুলনায় ছবিটা অনেকটা বদলাচ্ছে। কিন্তু এখনও অবসর নেওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই। আমি হয়তো খেলা কমিয়ে দিচ্ছি। কারণ আরও অন্য দিকে যুক্ত হতে চাই। এর পরে আমি কখনও কখনও খেলব আবার অন্য দিকগুলোও সামলাব। এখন এই পরিকল্পনা সামনে রেখেই এগোচ্ছি।’’
এ দিকে টাটা স্টিল দাবা প্রতিযোগিতায় এ বার ব্লিৎজ় বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হলেন লেভন অ্যারোনিয়ান। র্যাপিড বিভাগে সেরা অর্জুন এরিগাইসি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy