দুই গ্র্যান্ডমাস্টার, সূর্যশেখর এবং অভিমন্যু।
মাত্র ১১ বছর বয়সে তিনি হারিয়ে দিয়েছিলেন এক গ্র্যান্ডমাস্টারকে। ১৯৯৫ সালে সেই রেকর্ড গড়েছিলেন সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায়। ২০২১ সালে মাত্র ১২ বছর ৪ মাস বয়সেই গ্র্যান্ডমাস্টার হল অভিমন্যু মিশ্র। বিশ্বের কনিষ্ঠতম গ্র্যান্ডমাস্টার সে। আবারও এক রেকর্ড। নেপথ্যে গ্র্যান্ডমাস্টার সূর্যশেখর।
করোনা অতিমারি, লকডাউনের জন্যই নেটমাধ্যমে দাবা শেখানোর ভাবনা। গ্র্যান্ডমাস্টার রামচন্দ্রন রমেশ এবং গ্র্যান্ডমাস্টার মগেশচন্দ্রন পঞ্চনাথনের সঙ্গে হাত মেলান সূর্যশেখর। নেটমাধ্যমে দাবা প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন তাঁরা। সূর্যশেখর বলেন, “এই বছর ১ জানুয়ারি থেকে শুরু করা হয় আমাদের এই নেটমাধ্যমে দাবা শেখানোর ক্লাস। সেখানেই যোগ দিয়েছিল অভিমন্যু।” কনিষ্ঠতম গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার পর অভিমন্যুকে অভিনন্দন জানান সূর্যশেখর। টুইট করে অভিমন্যু লেখে, ‘ধন্যবাদ কোচ। করোনার জন্য যে সময়টা নষ্ট হয়েছিল, ২০২১ সালের শুরু থেকে নেটমাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিতে পেরে সেই অভাবটাই যেন পূর্ণ হয়ে গেল।’ তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া রমেশ, মগেশ এবং গ্র্যান্ডমাস্টার পেন্টলা হরিকৃষ্ণকেও ধন্যবাদ জানিয়েছে অভিমন্যু। আনন্দবাজার অনলাইন কথা বলল সূর্যশেখরের সঙ্গে। অভিমন্যু, ভারতের দাবা, বাংলায় এই খেলার পরিস্থিতি নিয়ে অকপট সূর্যশেখর।
Thanks Coach @suryachess64 🙏
— Abhimanyu.mishra.chess (Youngest GM) in the world) (@ChessMishra) July 1, 2021
2021 started really well for me with the launch of @ProChessT and it helped big time to cover up the time wasted because of pandemic in this difficult chase.
Thanks @HariChess @chessarun @gmmageshpanch @Rameshchess for the guidance and support. https://t.co/UVRPRrqDfx
কী এমন গুণ রয়েছে অভিমন্যুর মধ্যে যা অন্যদের থেকে আলাদা করে দিয়েছে তাকে?
সূর্যশেখর: শেখার ইচ্ছে এবং শৃঙ্খলা। কোনও দিন কোনও ক্লাস বাদ দেয়নি ও। যে ভাবে শেখানো হয়েছে ঠিক সেটা রপ্ত করে নিয়েছে। অসম্ভব তীক্ষ্ণ বুদ্ধি। কখনও ফাঁকি দেয় না। এখন বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে বলে ক্লাস করতে পারছে না। কিন্তু ওর বাবার থেকে জানতে পারলাম, যে ক্লাসগুলো করতে পারেনি সেগুলোর ভিডিয়ো দেখে নিচ্ছে নিজের সময় মতো।
নিজে এখনও খেলছেন, তার মধ্যেই হঠাৎ প্রশিক্ষক সূর্যশেখর। কেন?
সূর্যশেখর: এক বছর আগে যদি কেউ আমাকে বলত আমি দাবা শেখাব, সেই নিয়ে কোর্স তৈরি করব, ভাবতেই পারতাম না। আমি একজন খেলোয়াড়। এখনও নিয়মিত খেলছি। তবে পরিস্থিতি পাল্টে যায় করোনার জন্য, লকডাউনের জন্য। বাড়িতেই বসে আছি। নেটমাধ্যমে কিছু প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ছাড়া তেমন কিছু করার ছিল না। সেই সময় রমেশ আমাকে এই নেটমাধ্যমে প্রশিক্ষণের ব্যাপারে বলে। ও না বললে হয়তো আমি এই সব নিয়ে ভাবতামই না। ও আমার ছোটবেলার বন্ধু। খেলা শুরুর সময় থেকে রমেশকে চিনি। পরে মগেশ আসে। ওকেও ছোটবেলা থেকেই চিনি। ওদের সঙ্গে কাজ করাটা আমার পক্ষে খুব সহজ ছিল। তবে আমার ব্যবসায়িক বুদ্ধি নেই। সারা বিশ্বের ভাল ভাল প্রশিক্ষকের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে। একজন দাবাড়ুকে কী ভাবে তৈরি করতে হয়, সেই জ্ঞানটা আমার আছে। সেটাই কাজে লাগাই আমি।
Trivia: Find the 6yrs old @ChessMishra in these 2 pics.
— Surya Sekhar Ganguly (@suryachess64) July 1, 2021
Student: Coach, Abhi is looking at my answer sheet
Abhi: No!! He is wrong.
Me: Silently waiting.
Abhi: I was looking at his answer sheet (pointing at another student) 😆
The sharp little kid is a GM now. #Respect pic.twitter.com/L4jjRLFBcZ
প্রশিক্ষক হিসেবে ছাত্রদের কী দেওয়ার চেষ্টা করেন?
সূর্যশেখর: আমি যখন দাবা খেলা শিখছি, তখন গ্র্যান্ডমাস্টারের থেকে শেখা তো পরের কথা, তাঁদের সঙ্গে দেখা হওয়াটাই ছিল বড় ব্যাপার। এক বছর অপেক্ষা করতে হত। কবে গোর্কি সদনে প্রতিযোগিতা হবে, তবে আমি একজন গ্র্যান্ডমাস্টারকে দেখতে পাব। এখনও একজন গ্র্যান্ডমাস্টারের থেকে ব্যক্তিগত ভাবে প্রশিক্ষণ নিতে হলে প্রচুর খরচ করতে হয়। সেটা সবার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। আমি জানি প্রশিক্ষণ নেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও সেটা কতটা কঠিন। নেটমাধ্যমে সেটাই অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। বিশ্বের সেরা প্রশিক্ষকদের এক জায়গায় আনা গিয়েছে। পরের প্রজন্মকে তৈরি করতে এটা খুব জরুরি।
খেলা এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্পূর্ণ আলাদা। সেটা কী ভাবে সম্ভব হল?
সূর্যশেখর: (বিশ্বনাথন) আনন্দের থেকে শেখা। একজন দাবাড়ুকে কী ভাবে গ্র্যান্ডমাস্টার তৈরি করতে হবে, সেটা আগে নিজেকে শিখতে হবে। আনন্দের সঙ্গে দীর্ঘদিন অনুশীলন করার ফলে প্রচুর অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেটাই আমাকে সাহায্য করেছে।
ভারতের দাবার ভবিষ্যৎ কাদের হাতে?
সূর্যশেখর: ভারতে দাবার ভবিষ্যৎ খুব ভাল। নিহাল সারিন (১৪ বছর বয়সে গ্র্যান্ডমাস্টার), রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ (কনিষ্ঠতম গ্র্যান্ডমাস্টারদের মধ্যে পঞ্চম স্থানে), রৌনক সাধওয়ানি (১৩ বছর বয়সে গ্র্যান্ডমাস্টার), অর্জুন এরিগাইসি (১৪ বছর বয়সে গ্র্যান্ডমাস্টার) প্রত্যেকেই অসাধারণ।
আর বাংলায়?
সূর্যশেখর: এটা দুঃখের যে বাংলার অবস্থা ততটা ভাল নয়। অন্য রাজ্যগুলোর তুলনায় বেশ পিছিয়ে রয়েছে।
কারণ?
সূর্যশেখর: নিহাল, রৌনক, অর্জুনরা ছোটবেলা থেকেই প্রচুর প্রতিযোগিতা খেলে এবং ওদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে কোনও না কোনও গ্র্যান্ডমাস্টার। বাংলায় সেটারই অভাব। একটা সময়ের পর যে পেশাদার প্রশিক্ষণ প্রয়োজন হয়, সেটা নেই। আমরা এখানেই পিছিয়ে। ছোটবেলা থেকেই প্রশিক্ষণটা দরকার, সেটা পাচ্ছে না এখানকার দাবাড়ুরা।
জাতীয় দাবা ফেডারেশনে গণ্ডগোল চলছে। তার প্রভাব পড়ছে দাবাড়ুদের মধ্যে?
সূর্যশেখর: একটা সময় প্রভাব ফেলেছে। ভয়ানক ক্ষতি হয়েছে। তবে এখন সেটা হচ্ছে না। বর্তমানে ভেতরে ভেতরে গণ্ডগোল যা হওয়ার হচ্ছে, তবে তা কোনও খেলোয়াড়ের ওপর প্রভাব ফেলছে না। কারণ তারা বাইরে অনেক প্রতিযোগিতা খেলে নিজেদের তৈরি করছে।
চেন্নাই থেকে প্রচুর দাবাড়ু উঠে আসছে। কেন?
সূর্যশেখর: ছোটবেলা থেকে ভাল অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাচ্ছে ওরা। ওখানের গ্র্যান্ডমাস্টাররা ছোটদের সেই প্রশিক্ষণটা দিচ্ছে।
ভবিষ্যতে আপনার অ্যাকাডেমি তৈরি করার কোনও পরিকল্পনা রয়েছে?
সূর্যশেখর: রয়েছে, তবে তা এখন অনেক দূরের পরিকল্পনা। আমি এখন খেলোয়াড়। অবসর নেওয়ার পর অ্যাকাডেমি নিয়ে ভাবব। তবে অ্যাকাডেমি খুললেই যে সঙ্গে সঙ্গে সাফল্য আসবে, তেমনটা নয়। যদি না অভিমন্যুর মতো কেউ যোগ দেয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy