Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

ক্যালিপসোর তরঙ্গে কিবুদের স্বপ্নভঙ্গ

শনিবারের যুবভারতী মার্কাস-ময়। দুটো হ্যাটট্রিক। ৫ ম্যাচে ১১ গোল। সাম্প্রতিককালে কোনও সর্বভারতীয় টুনার্মেন্টে  স্ট্রাইকারের এ রকম অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স শেষ কবে দেখেছে ভারতীয় ফুটবল, মনে পড়ছে না।

চ্যাম্পিয়ন: ডুরান্ড কাপ হাতে উল্লাস গোকুলম এফসি দলের ফুটবলারদের। শনিবার যুবভারতীতে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

চ্যাম্পিয়ন: ডুরান্ড কাপ হাতে উল্লাস গোকুলম এফসি দলের ফুটবলারদের। শনিবার যুবভারতীতে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

রতন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৯ ০৪:৩৭
Share: Save:

সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে সোনার বুট পেলেন কে? মার্কাস জোশেফ!

ডুরান্ড কাপের সেরা ফুটবলার? মার্কাস জোশেফ!

ক্লাবের ইতিহাসে প্রথম বার ডুরান্ড কাপ জেতার পর ট্রফি নিতে কাকে এগিয়ে দিলেন গোকুলম ফুটবলাররা ? মার্কাস জোশেফ!

আনন্দের বন্যায় ভাসতে ভাসতে কেরলের ক্লাবটির ফুটবলাররা কাকে প্রথম উপরে তুলে লোফালুফি করলেন? কোচ নয়, তাঁর নাম মার্কাস জোশেফই।

শনিবারের যুবভারতী মার্কাস-ময়। দুটো হ্যাটট্রিক। ৫ ম্যাচে ১১ গোল। সাম্প্রতিককালে কোনও সর্বভারতীয় টুনার্মেন্টে স্ট্রাইকারের এ রকম অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স শেষ কবে দেখেছে ভারতীয় ফুটবল, মনে পড়ছে না। ১৯৯৭তে কেরলের দল হিসাবে শেষ বার ডুরান্ড জিতেছিল এফসি কোচিন। আই এম বিজয়নরা হারিয়েছিলেন মোহনবাগানকে। সেই ছবিই ফিরল ।

ফাইনালের আগে ত্রিনিদাদ ও টোব্যাগোর স্ট্রাইকার ঘোষণা করেছিলেন, ট্রফি জিতলে ক্যালিপসোর মুর্ছনা ফেরাবেন মাঠে। নাচবেনও। যুবভারতীর দর্শকরা তা প্রত্যক্ষ করেনি। তবে যা দেখেছেন তা হল, দ্বিতীয় গোল করার পর সবুজ-মেরুন গ্যালারির দিকে দৌড়ে গিয়ে নিজের দশ নম্বর জার্সি তুলে ধরেছেন ব্রায়ান লারার দেশের স্ট্রাইকার। হয়তো বুঝিয়ে দিলেন, মোহনবাগানে জোসেবা বেইতিয়াকে নিয়ে যতই হইচই হোক, তিনিই ফাইনালের ‘মায়েস্ত্রো’।

স্প্যানিশ বেইতিয়া না, ক্যারিবিয়ান মার্কাস—দু’জনের লড়াই দেখার অপেক্ষায় বৃষ্টি ভেজা বিকেলে হাজির ছিলেন চল্লিশ হাজারেরও বেশি দর্শক। ম্যাচ শেষে তাঁকে অভিবাদন জানিয়েছে সবুজ-মেরুন পতাকা হাতে নিয়ে আসা জনতা। কোচ কিবু ভিকুনা স্বীকার করেন, ‘‘মার্কাসের কাছেই হেরে গেলাম। যে এত গোল করে, তাকে ভাল বলতেই হবে।’’

এ দিন শুরু থেকেই কেরলের দলটি ছিল অনেক চাঙ্গা। লক্ষ্যে অবিচল। দুটো লালকার্ড হল। হলুদ কার্ডও। ধাক্কাধাক্কিও। কিন্তু তাতে ম্যাচ কখনও পানসে হয়ে যায়নি। বিরক্তিকরও নয়। কিবুর অস্ত্রেই তাঁকে ঘায়েল করলেন গোকুলম কোচ ফার্নান্দো ভ্যালেরা। একসঙ্গে ছয়-সাতটি পাস খেলে চামোরোদের মুখের গ্রাস কেড়ে নেন গোকুলমের আর্জেন্টাইন কোচ।

পাসের ফুলঝুরির সঙ্গে কিবুর দলের শক্তিশালী অস্ত্র বেইতিয়াকে ভোঁতা করে দেয় গোকুলম। স্প্যানিশ মিডিয়ো বল পেলেই তাঁকে ঘিরে ধরছিলেন তিন-চার জন ফুটবলার। কিবু কোনও ‘প্ল্যান বি’ প্রয়োগ করতে পারেননি। তাঁর দলের রক্ষণ কেন এত খারাপ খেলছে, এই প্রশ্ন করলেই রেগে যাচ্ছেন কিবু। এ দিনও যেমন মুখ বেঁকিয়ে বলেছেন, ‘‘প্রথম গোলটা ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। তবে ওটা আগেই অফসাইড ছিল। আর হাতে বল লাগলেও পেনাল্টি পাইনি আমরা।’’ ম্যাচের মাঝে এবং পরে রেফারি অজিত কুমার মিতাইয়ের সঙ্গে তর্কে জড়ান তিনি। কিন্তু হোটেলে ফিরে ম্যাচের সিডি দেখলে তিনি নিশ্চয়ই বুঝবেন, তাঁর দুটো দাবিরই কোনও সারবত্তা নেই। বরং রক্ষণ এবং মাঝমাঠের সংগঠন, শুরুতে সুহেরকে নামানো নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।

গোকুলমের প্রথম গোল পেনাল্টি থেকে। কিমকিমার থেকে বল কেড়ে মার্কোস অসাধারণ পাস বাড়ান হেনরি কিসেক্কাকে। অসহায় দেবজিৎ পা টেনে দেন। পেনাল্টি থেকে গোল মার্কাসের। এই গোলের পরে গোকুলম ৪-৪-১-১ থেকে ৪-৪-২ হয়ে যায়। তখনই আবার গোল করেন মার্কাস। ফ্রান গনজালেস এবং রোমারিও জেসুরাজ নামার পরে মোহনবাগান তীব্র চাপ তৈরি করে। চামোরো ২-১ করে দেন। হতে পারত আরও দু’একটি গোল। ইস্টবেঙ্গলের পর মোহনবাগান। দু’টো দলকে পরপর হারাল গোকুলম। বাংলার ফুটবলের পক্ষে যা একেবারেই ভাল বিজ্ঞাপন নয়।

মোহনবাগান: দেবজিৎ মজুমদার, আশুতোষ মেহতা (শুভ ঘোষ), ফ্রান মোরান্তে (গনজালেস), লালচাওকিমা, গুরজিন্দর সিংহ, শেখ সাহিল, সুরাবুদ্দিন মল্লিক (জেসুরাজ), বেইতিয়া, ননগোম্বা নাওরেম, সুহের, সালভা চামোরো।

অন্য বিষয়গুলি:

Guokulam Durand Cup Kibu Mohun Bagan Football
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy