ডুরান্ড কাপ চ্যাম্পিয়ন গোকুলম।
গোকুলম — ২ মোহনবাগান — ১
(জোসেফ পেনাল্টি-সহ ২) (চামোরো)
আজ সব ঠিক থাকলে কিবু ভিকুনার জায়গায় মোহনবাগানের কোচ হতেই পারতেন ফের্নান্দো স্যান্টিয়াগো। শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবের কোচের হট সিটে বসার জন্য তিনিও ছিলেন দৌড়ে। শেষ পর্যন্ত কিবু ভিকুনাকে বেছে নেন বাগান-কর্তারা। স্যান্টিয়াগোর গন্তব্য হয় কেরল।
আজ, শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে শেষ হাসি তোলা রইল স্যান্টিয়াগোর জন্য। রেফারির শেষ বাঁশির পরে সৌজন্যের হাত কিবুর দিকে বাড়িয়ে দিলেন স্যান্টিয়াগো। বাগান-কোচ তখন ক্ষোভে ফুঁসছেন। রেফারির সিদ্ধান্ত তিনি মেনে নিতে পারছেন না। খেলার একেবারে শেষ লগ্নে পেনাল্টির দাবিতে সোচ্চার হয বাগান-শিবির। তাদের দাবি, ফ্রান গঞ্জালেজের সেন্টার মহম্মদ ইরশাদের হাতে লাগে। রেফারি বাগানের দাবিতে কর্ণপাত করেননি। পেনাল্টিও দেননি মোহনবাগানকে। উল্টে রিজার্ভ বেঞ্চে বসে থাকা ফ্রান মোরান্তেকে লাল কার্ড দেখিয়ে দেন রেফারি। গোটা মোহনবাগান শিবিরের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে রেফারির ওই সিদ্ধান্তে। রেফারির সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি বাগান কোচ। খেলার শেষ বাঁশির পরে তিনি ছুটে যান রেফারির দিকে। তাঁর সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেন। দিনটা তাঁরও ছিল না। মোহনবাগানেরও নয়। স্যান্টিয়াগো হাসলেন। হতাশ মুখে মাঠ ছাড়লেন কিবু।
গত বছরটা এখনও ভুলতে পারেননি হেনরি কিসেক্কা। অনেক আশা নিয়ে গোকুলম থেকে মোহনবাগানে সই করেছিলেন তিনি। আট বছর পরে কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন হয় সবুজ-মেরুন শিবির। ঠিকঠাকই এগোচ্ছিলেন তিনি। আই লিগ শুরু হতেই ছন্দ নষ্ট হয় বাগানের। আই লিগের শেষের দিকে শঙ্করলাল চক্রবর্তীকে সরিয়ে খালিদ জামিলকে কোচ করে আনা হয়। তখন থেকেই দুর্দিন নেমে আসে হেনরির জীবনে। মরশুমের শেষের দিকে তাঁকে ছেঁটে ফেলা হয়। নীরবে নিভৃতে চোখের জল ফেলতেন তিনি। রাতের ঘুম চলে গিয়েছিল তাঁর। মনে মনে প্রশ্ন করতেন, ‘‘আমি কি এতটাই খারাপ যে ছেঁটে ফেলা হল আমাকে?’’ বিশ্বাস হত না তাঁর। সেই হেনরি ফিরে গেলেন তাঁর পুরনো ক্লাব গোকুলমে।
আরও পড়ুন: মোহনবাগানকে হারিয়ে ডুরান্ড চ্যাম্পিয়ন গোকুলম
আজ ডুরান্ড ফাইনালে প্রথমার্ধের একেবারে শেষের দিকে বক্সের ভিতরে সবুজ-মেরুন গোলকিপার দেবজিৎ মজুমদার ফেলে দেন হেনরিকে। পেনাল্টি পায় গোকুলম। মার্কাস জোসেফ গোল করে এগিয়ে দেন কেরলের দলকে। গোল করলেন মার্কাস। স্কোর লাইনে লেখাও হয়ে গেল তাঁরই নাম। কিন্তু, গোলের আসল কারিগর তো ওই হেনরি। নিজে গোল করলেন না ঠিকই। কলকাতার বুকে উগান্ডান স্ট্রাইকার প্রমাণ করে দিয়ে গেলেন, তাঁকে ছেড়ে দিয়ে সে দিন ভুল করেছিল মোহনবাগান।
এ দিন মার্কাস জোসেফ-হেনরি যুগলবন্দি প্রথমার্ধে মোহনবাগান রক্ষণকে যথেষ্ট বেগ দেন। বিরতির ঠিক আগে গোকুলম এগিয়ে যায় ১-০ গোলে। দ্বিতীয়ার্ধে অন্য চিত্রনাট্য। ত্রিনিদাদ-টোব্যাগোর স্ট্রাইকার মার্কাস জোসেফ একাই বাগান রক্ষণে ‘ত্রাহি ত্রাহি’ রব তুলে দেন। ৫১ মিনিটে বাঁ দিক থেকে বল ধরে তরতর করে তিনি উঠে যান বাগানের পেনাল্টি বক্সে। তাঁকে থামানোর জন্য এগিয়ে এলেন না মোহনবাগানের কোনও ডিফেন্ডার। এমন শিক্ষানবিশের মতো ভুল কেন? ফাইনালে এরকম ভুল কি কেউ করে? মোহনবাগান করে বসল সেই ভুল। তার খেসারতও দিতে হল। বিনা বাধায় জোসেফ গোল করে আসেন।
বাগান রক্ষণের দুর্বলতা প্রকট হয়ে ধরা দেয়। গ্যালারিতে বসা সমর্থকদের তখন মাথায় হাত। গোকুলমের একের পর এক আক্রমণে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে কিবুর দলের ডিফেন্স। ব্রায়ান লারার দেশের জোসেফ একাই ম্যাচের রাশ নিজের হাতে তুলে নেন। দেবজিৎ একাধিক বার মোহনবাগানকে রক্ষা করেন। না হলে কী যে হত!
ম্যাচে ফেরার জন্য মরিয়া বেইতিয়া-চামোরোরা গোল করার জন্য উঠে যাচ্ছিলেন। গোকুলম ডিফেন্সে লোক বাড়িয়ে রক্ষণ করে তুলছিল নিশ্ছিদ্র। উল্টে কাউন্টার অ্যাটাকে আক্রমণ তুলে আনছিল গোকুলম। আর প্রতিবারই বাগান সমর্থকদের বুকে হৃৎকম্প হচ্ছিল। বেইতিয়ার ফ্রি কিক থেকে ৬৪ মিনিটে হেডে গোল করেন বাগানের দীঘল স্ট্রাইকার চামোরো সালভা।
৭৪ মিনিটে হেনরিকে তুলে ব্রুনো পেলিসারিকে নামান স্যান্টিয়াগো। বাগান ম্যাচে ফেরার মরিয়া চেষ্টা করে। কিন্তু, গোকুলমের গোলমুখ সে ভাবে খুলতে পারেননি বেইতিয়ারা। ৮৭ মিনিটে লাল কার্ড দেখে বেরিয়ে যান গোকুলমের জেস্টিন জর্জ। গোকুলম নেমে যায় দশ জনে। শেষ কয়েকমিনিট মরণকামড় দেয় বাগান। কিন্তু, গোকুলমের ডিফেন্স খুবই শক্তিশালী। সেই ডিফেন্স ভাঙা সম্ভব হয়নি মোহনবাগানের পক্ষে। শেষের দিকে ফ্রান গঞ্জালেজের সেন্টার মহম্মদ ইরশাদের হাতে লাগলেও রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজাননি। সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি কিবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy