গৌতম গম্ভীর।
নানা নাটক ও বিস্তর জলঘোলার পরে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বহু প্রতীক্ষিত ক্রিকেট অ্যাডভাইসরি কমিটি (সিএসি) চূড়ান্ত হওয়ার মুখে। সব কিছু ঠিকঠাক চললে আজ, রবিবার, মুম্বইয়ে নতুন বোর্ডের শীর্ষ কর্তাদের একান্ত বৈঠকে আলোচনা হয়ে তিন সদস্যের কমিটির নাম ঘোষণা হয়ে যেতে পারে।
শনিবার রাত পর্যন্ত বোর্ডের বিশ্বস্ত সূত্রে যা ইঙ্গিত, দু’জন প্রাক্তন ক্রিকেটারের নাম জোরালো ভাবে কমিটিতে থাকতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। এক জন তিরাশির কপিল দেবের বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম প্রধান সদস্য— মদন লাল। অন্য জন গৌতম গম্ভীর। বিশ্বকাপ জয়ে বড় অবদান রয়েছে গম্ভীরেরও। তিরাশির ফাইনালে মদন যেমন ভিভ রিচার্ডসের উইকেট নেন (যদিও এখনও অনেকে মনে করেন, ওটা আসলে পঁচিশ গজের উপরে পিছনে দৌড়ে গিয়ে ক্যাচ ধরা কপিল দেবের উইকেট) তেমনই ২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনালে গম্ভীর ছিলেন সর্বোচ্চ স্কোরার।
যে-হেতু গম্ভীর বিজেপি-র হয়ে নির্বাচনে লড়ে জেতা সক্রিয় রাজনীতিবিদ, তাঁকে নিয়ে দু’তিন রকম প্রশ্ন উঠছে। যেমন, আদৌ কি তিনি যোগ্যতামান পেরচ্ছেন? লোঢা সংস্কারের প্রভাব অনুযায়ী, এত দিন মন্ত্রীদের তো বটেই, ভোটের ময়দানে লড়াই করা সক্রিয় রাজনীতিবিদদেরও বোর্ডের পদে বসার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু এ নিয়ে বোর্ডের একটি অংশের পাল্টা বক্তব্য, পদাধিকারী হতে মানা থাকলেও উপদেষ্টা কমিটির পদে বসার ব্যাপারে বাধা থাকবে কেন? এঁদের বক্তব্য, গম্ভীর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ঠিকই কিন্তু মন্ত্রী নন। তাই ক্রিকেট অ্যাডভাইসরি কমিটিতে তাঁকে রাখা হলে নিয়ম লঙ্ঘন করা হবে না। বোর্ডের একাংশেই এই যুক্তি কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, তা সময়ই বলবে।
এটিকের সঙ্গে মোহনবাগানের চুক্তি প্রায় পাকা
এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়-পরিচালিত বোর্ডে শাসক বিজেপির প্রভাব বাড়ছে। অমিত শাহের পুত্র জয় শাহ স্বয়ং বোর্ডের সচিব। নিজের শহর দিল্লিতে ভোটে লড়াই করা গম্ভীরকে এমন উচ্চ পদে নিয়ে আসা আরও বেশি করে বোর্ডের অন্দরে বিজেপি ডালপালা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়াস কি না, সেই তর্ক-বিতর্ক উঠতেই পারে। যদিও প্রাক্তন ক্রিকেটার হিসেবে গম্ভীরের যোগ্যতা বা দক্ষতা নিয়ে বিশেষ প্রশ্ন ওঠার অবকাশ নেই। ৫৮ টেস্টে ৪১৫৪ রান তাঁর। টেস্ট গড় বেশ ভাল, ৪১.৯৫। সেঞ্চুরি ৯টি। সর্বোচ্চ ২০৬ ব্রেট লি, মিচেল জনসনদের অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দিল্লিতে করা। ১৪৭টি ওয়ান ডে খেলে করেছেন ৫২৩৮ রান। গড় ৩৯.৬৮, স্ট্রাইক রেট (প্রত্যেক ১০০ বলে কত রান) ৮৫.২৫। ভারতীয় জনতার কাছে বিশ্বকাপ জেতানো বাঁ-হাতি ওপেনার, কলকাতার ক্রিকেট ভক্তদের কাছে আরও বেশি কিছু। আইপিএল ট্রফির স্বাদ দেওয়া প্রথম কেকেআর ক্যাপ্টেন। এখন পর্যন্ত শাহরুখ খানের নাইট রাইডার্সের ঘরে থাকা দু’টি আইপিএল ট্রফিই গম্ভীরের নেতৃত্বে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, স্বার্থ সংঘাতের দাঁড়িপাল্লায় যেখানে সচিন তেন্ডুলকরও রক্ষা পাচ্ছেন না, গম্ভীরের নির্বাচন বিতর্কহীন থাকবে কি না? এই ক্রিকেট অ্যাডভাইসরি কমিটির তিন মহাতারকা সদস্য ছিলেন সচিন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং ভি ভি এস লক্ষ্মণ। স্বার্থ সংঘাতের কারণে প্রত্যেককেই সরে দাঁড়াতে হয়েছে। এর পরে তিন সদস্যের কমিটিতে ছিলেন কপিল দেব, অংশুমান গায়কোয়াড় এবং শান্তা রঙ্গস্বামী। এই ত্রয়ীই কোহালিদের হেড কোচ হিসেবে রবি শাস্ত্রীর মেয়াদ বাড়িয়েছেন। কিন্তু স্বার্থ সংঘাতের প্রশ্ন ওঠার পরে কপিল দেবরাও সরে দাঁড়িয়েছেন।
ভারতীয় বোর্ডের অন্দরমহল থেকে পাওয়া জোরালো ইঙ্গিত বলছে, গম্ভীরের নাম নিয়ে বড় কোনও প্যাঁচে পড়তে হবে না ধরে নিয়েই এগোচ্ছে প্রভাবশালী মহল। কেউ কেউ উল্টে স্বার্থ সংঘাত নিয়মের ফলে তৈরি হওয়া ‘অসুবিধার’ কথা তুলছেন। এঁদের কথায়, ‘‘স্বার্থ সংঘাতের নিয়ম দেখতে গিয়ে বড় কোনও নাম পাওয়াই যাচ্ছে না। প্রত্যেকেই কোনও না কোনও কাজের সঙ্গে যুক্ত। সব ছেড়ে দিয়ে তারা কেনই বা আসবে কমিটি সদস্য হতে?’’ সচিন, লক্ষ্মণদের মতো তারকারা আইপিএলের সঙ্গে যুক্ত। কেউ মেন্টর, কেউ কোচ, আবার সহবাগ বা হরভজনের মতো কেউ বা ধারাভাষ্যকার এবং টিভি বিশেষজ্ঞ হিসেবে মোটা টাকা কামাচ্ছেন।
গম্ভীর, মদন লালের সঙ্গে তৃতীয় সদস্য হিসেবে নেওয়া হবে সম্ভবত কোনও প্রাক্তন মহিলা ক্রিকেটারকে। যেমন আগের কমিটিতে ছিলেন শান্তা রঙ্গস্বামী। তাঁদের প্রথম দায়িত্ব হবে মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া দু’জন জাতীয় নির্বাচকের পরিবর্তে নতুন নির্বাচক নিয়োগ করা। উপদেষ্টা কমিটির পরের কাজ কী হবে, কেউ জানে না। বিদায়ী নির্বাচকদের এক জন, চেয়ারম্যান এম এস কে প্রসাদ। তাঁর জায়গায় দক্ষিণ থেকে জোরালো ভাবে শোনা যাচ্ছে শ্রীনিবাসনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ, প্রাক্তন লেগ স্পিনার শিবরামকৃষ্ণনের নাম। চার বছরের মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে মধ্যাঞ্চলের নির্বাচক গগন খোড়ারও।
কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটে এখন এমন এক সময় যে, নির্বাচক নয়, যত নজর নির্বাচকদের নির্বাচকের ওপর!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy