Advertisement
২৮ নভেম্বর ২০২৪

চায়ের দোকান থেকে রিও গেমস, স্বপ্নের উড়ান মণীশের

মায়ের সঙ্গে চা-পরোটা তৈরি করতে করতে অলিম্পিক্সে! কোনও সিনেমার গল্প? মোটেই নয়। কঠিন বাস্তব। সালটা ২০০২। উত্তরখণ্ডের চামোলি গ্রামের মণীশ রাওয়াতের বয়স তখন মাত্র দশ। ছোট্ট মণীশের চোখের সামনে মারা যান তার বাবা।

তৈরি হচ্ছেন ওয়াকার মণীশ রাওয়াত। ছবি: ফেসবুক।

তৈরি হচ্ছেন ওয়াকার মণীশ রাওয়াত। ছবি: ফেসবুক।

স্বপন সরকার
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৬ ০৪:০০
Share: Save:

মায়ের সঙ্গে চা-পরোটা তৈরি করতে করতে অলিম্পিক্সে!

কোনও সিনেমার গল্প?

মোটেই নয়। কঠিন বাস্তব।

সালটা ২০০২। উত্তরখণ্ডের চামোলি গ্রামের মণীশ রাওয়াতের বয়স তখন মাত্র দশ। ছোট্ট মণীশের চোখের সামনে মারা যান তার বাবা। চার-ভাই বোনের কষ্টের সংসার চালাতে মা তখন দিশেহারা। সম্বল বলতে এক ফালি চাষের জমি আর তার লাগোয়া টালির কুঠি। বাধ্য হয়ে মণীশের মা সামনের রাস্তাতেই বসে পড়েন চা-পরোটার দোকান খুলে। আর দোকানের ফাইফরমাস খাটতে লাগে মণীশ।

সেখান থেকে পাশের গ্রামে এক টি-স্টল মালিকের কাছে পার্ট টাইম চাকরি পাওয়া। সেই সামান্য মাইনেই তখন মণীশের পরিবারের কাছে অমূল্য বাড়তি রোজগার। “মায়ের দোকানের মতোই ওই টি-স্টলেও চা-পরোটা বানিয়ে লোকেদের খাওয়াতাম। বাড়িতে তখন আমার দুই অবিবাহিত বোন আর ছোট ভাই। সংসার চালাতে হিমসিম খেতে খেতেই আমার এক বন্ধুর পরামর্শে আমি অ্যাথলেটিক্সে আসি স্রেফ স্পোর্টস কোটায় একটা সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য। সারা দিন চায়ের দোকানে খাটাখাটনির পাশাপাশি রোজ বিকেলে চলত আমার সাধের অ্যাথলেটিক্স প্র্যাকটিস। মানে শুধু দৌড় আর দৌড়।”

বছরের পর বছর সেই অমানুষিক পরিশ্রমের পুরস্কার— চব্বিশের মণীশ রাওয়াত এই মুহূর্তে ভারত থেকে ২০১৬ অলিম্পিক্সের ছাড়পত্র পাওয়া ওয়াকার। রিওতে ২০ এবং ৫০ কিলোমিটার হাঁটা রেসে উত্তরখণ্ড পুলিশের এই কনস্টেবলই ভারতের প্রতিনিধি!

বর্তমানে উটিতে জাতীয় শিবিরে ভারতের রুশ অ্যাথলেটিক্স কোচ আলেকজান্ডার আর্টেসিবাশেভের কাছে অলিম্পিক্স-প্রস্তুতি চলছে মণীশের। সেখান থেকে ফোনে বললেন, “গত এপ্রিলে আইএএএফের আন্তর্জাতিক মিটে ২০ কিলোমিটার ওয়াকিং রেসে আমার সময় ছিল ১ ঘন্টা ২০ মিনিট ৫০ সেকেন্ড। আর বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ৫০ কিলোমিটার ওয়াকিংয়ে আমার ৩ ঘন্টা ৫৭ মিনিট ১১ সেকেন্ড সময়টা আমাকে এনে দিয়েছে রিও অলিম্পিক্সে ছাড়পত্র। ওখানে প্রথম দশে থাকাতেই আমি অলিম্পিক্সে যেতে পারছি। তবে আমার কাজ শেষ হয়নি। বলা যায়, সবে শুরু হয়েছে। রিওর পদক মঞ্চে ভারতের তেরঙ্গা উড়িয়েই আমার কাজ শেষ হবে।”

কথাবার্তায় একটা অদ্ভুত জোশ যেন রয়েছে মণীশের। কর্মস্থল পুলিশ বিভাগে চার সহকর্মীর আর্থিক সহায়তায় রিওতে হাঁটা রেসের জন্য চার জোড়া রেসিং শু কিনতে পেরেছেন যিনি তাঁর ভেতরে তো নিছক এক অলিম্পিয়ান্স থেকে অলিম্পিক্স পদকজয়ী হয়ে ওঠার তীব্র খিদে থাকবেই।

মণীশ রাওয়াত যে কোনও রিল লাইফের গল্প নয়। কঠিন রিয়েল লাইফ!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy