এখনও বল হাতে ভেল্কি দেখাতে পারেন সাকলিন। ছিটকে দিতে পারেন কোহালির উইকেটও। —ফাইল চিত্র।
তাঁর সময়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা অফ স্পিনার ছিলেন তিনি। একার হাতে পাকিস্তানকে বহু ম্যাচ জিতিয়েছেন সাকলিন মুস্তাক। খেলা ছেড়েছেন বহু দিন। কিন্তু সেই চেনা ছোবল যে এখনও হারাননি, তা এখনও তাঁর কথাতেই স্পষ্ট। বিরাট কোহালি থেকে ডেভিড ওয়ার্নার— আজকের বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানদের যে তিনি আউট করতে এখনও পারেন, তা নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই বর্ষীয়ান পাক অফস্পিনারের মনে। আনন্দবাজার ডিজিটালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে, কোহালিকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন প্রাক্তন পাক অফ স্পিনার।
দিনকয়েক আগে আপনার প্রাক্তন সতীর্থ শোয়েব আখতার করোনা-আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই সিরিজ থেকে যে অর্থ উঠবে তা দিয়ে আক্রান্ত মানুষদের সাহায্য করার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন শোয়েব। আপনি কি শোয়েবকে সমর্থন করেন?
আমি তো দীর্ঘদিন ধরেই দ্বিপাক্ষিক সিরিজের কথা বলে আসছি। এখন মারণ ভাইরাসের গ্রাসে গোটা বিশ্ব। এর হাত থেকে বাঁচতে পারেনি আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ইউরোপের একাধিক দেশ। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হোন বা ব্রিটেন বা ভারতের প্রধানমন্ত্রী— সবার একটাই কথা। বাড়িতে থাকুন, সুস্থ থাকুন। সবাই কেন এই কথা বলছে? এর একটাই উদ্দেশ্য, আর তা হল, মানুষকে বাঁচাতে হবে। মানবতাকে বাঁচাতে হবে। সেই কারণেই সারা বিশ্বে এখন সবাই মানবতার কথা বলছেন। ক্রিকেট, খেলাধুলোও তো ভালবাসার কথাই বলে। মানুষকে কাছাকাছি আনে খেলাধুলো। আমি মনে করি স্পোর্টসের মধ্যে অন্য কোনও বিষয়কে টেনে আনা উচিতই নয়। রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে রাখা উচিত। দুই দেশের মধ্যে ক্রিকেট অনেক আগেই চালু করা উচিত ছিল। এখন তো পরিস্থিতি সব অর্থেই খারাপ। আমি শোয়েবকে সমর্থন করছি না বা কপিল-সানিভাইয়ের বিরোধিতাও করছি না। আপনি যদি রুটি না পান, তা হলে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাবেন। খালি পেটে ক’দিন আর মানুষ বেঁচে থাকতে পারে? কাজ না করলে মানুষের হাতে অর্থও আসবে না। জীবন চালাতে গেলে অর্থেরই দরকার। তেমনই আক্রান্ত মানুষের পাশে থাকার জন্যও দরকার অর্থ। দুই দেশের মধ্যে যদি ক্রিকেট চালু করা হয়, তা হলে যে উপার্জন হবে, তাতে অনেকেই উপকৃত হবেন।
আরও পড়ুন: ধোনি আমার বদলে দলে চাইত রায়নাকে, বিস্ফোরক মন্তব্য যুবরাজের
আগে দু’দেশের খেলা হলে সচিন তেন্ডুলকরকে সেরা বলটাই করতে চাইতেন আপনি বা ওয়াসিম আক্রম। আবার সচিনও সেরা শটটাই খেলতে চাইতেন আপনাদের বিরুদ্ধে। এখন দুই দেশের ক্রিকেট হয় না বেশি। অনেকের মতে, এর ফলে ক্ষতি হচ্ছে ক্রিকেটেরই। আপনিও কি তেমনটাই মনে করেন?
অবশ্যই। ক্রিকেট মানে তো পরীক্ষা। স্কিল, পরিকল্পনা, ধৈর্য, বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষা দিতে হয় ক্রিকেটারদের। ব্যাটসম্যান ও বোলারকে শ্রেষ্ঠত্বের পরীক্ষা দিতে হয় ২২ গজে। ফলো আপের সময়ে বোলার ও ব্যাটসম্যানের মধ্যে দূরত্ব ১৬ বা ১৮ গজ হয়ে যায়। ব্যাটসম্যানকে আউট করার জন্য নানা পরিকল্পনা করতে হয় বোলারকে। কিন্তু সব সময়েই কি পরিকল্পনা খাটে? আমি তো সবাইকে বলি, বল করার সময়ে নিজের সব কিছু ঢেলে দাও। আবেগ, শক্তি, কৌশলের প্রয়োগ থাকে এক জন বোলারের ডেলিভারিতে। এটা যেমন এক জন বোলারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তেমনই ব্যাটসম্যানের ক্ষেত্রেও। আমাদের সময়ে দুই দেশের খেলা হলে ক্রিকেটাররা তাঁদের মনপ্রাণ ঢেলে দিত। প্রত্যেকেই নিজেদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করত। আমরা বোলাররা যেমন ব্যাটসম্যানকে আউট করার জন্য জাল ফেলতাম, তেমনই ব্যাটসম্যানরাও তো বোলারের বিরুদ্ধে নানা পরিকল্পনা করত। ফলে নিরন্তর বোলার ও ব্যাটসম্যানের মধ্যে লড়াই চলত। তার ফলে খেলাটাও পৌঁছত অন্য এক উচ্চতায়। আর এখন তো আইসিসি-র ইভেন্ট ছাড়া দুই দেশের দেখাই হয় না। ফলে দুই দেশের থেকে সেরাটা পাওয়া যাবে কোথা থেকে?
দু’ দেশের ক্রিকেট সম্পর্ক নিয়ে আপনার কী মনে হয়?
ক্রিকেটাররা একেক জন হিরো। তাঁদের ফলো করেন সবাই। পাকিস্তানে সাকলিন মুস্তাক হওয়ার জন্য কত যুবা যে সময় খরচ করেছে, তার ইয়ত্তা নেই। ক্রিকেট দেখে সময় ব্যয় করেছে আপনাদের দেশের অনেক ক্রিকেটভক্তও। ফলে আমরা যাঁরা ক্রিকেটার, তাঁরা একেক জন নায়ক। নায়কদের অনেক কর্তব্য থাকে। ফলে সব নায়কদের একই সুরে সুর মেলাতে হবে। আমি একরকম বললাম, আরেক জন অন্যরকম বললেন, তা হলে হবে না। আমাদের দেশ, আপনাদের দেশের নায়কদের বলতে হবে, বোঝাতে হবে, দু’দেশের ক্রিকেট কতটা জরুরি। তবেই হয়তো ক্রিকেটীয় সম্পর্ক আবার তৈরি করা সম্ভব হবে। আইসিসি-কেও ভাবতে হবে নতুন করে। আইসিসি ইভেন্ট হলেই দুই দেশের মধ্যে দেখা হবে। অন্য সময় কেন হবে না? তা হলে তো বলতে হবে আইসিসি নিজের কোষাগার ভরানোর জন্য দুই দেশের মধ্যে ক্রিকেট চাইছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আইসিসি-কেও।
আরও পড়ুন: ‘পাকিস্তানে ইমরানের চেয়েও বেশি জনপ্রিয় ছিল বালাজি’
সাকলিন মুস্তাক। টেস্ট ও ওয়ানডে-তে বল হাতে ফুল ফুটিয়েছেন।
আপনার মতো ফিঙ্গার স্পিনার এখন আর উঠে আসছে না কেন এখন? পৃথিবী জুড়ে ভাল মানের ফিঙ্গার স্পিনারের কেনই বা এত অভাব?
একটা কথাই বলবো। টি টোয়েন্টি সর্বনাশ করে দিচ্ছে ক্রিকেটের। টি টোয়েন্টি তো পালিয়ে যাওয়ার একটা ফরম্যাট। চার ওভার বল করে এক জন বোলারের কী পরিচয় পাওয়া যায়? আমি এই কারণেই সবাইকে বলি বড় ফরম্যাটে খেলো। বড় ফরম্যাটে এক জনের আসল পরীক্ষা হয়। এ রকমও হতে পারে সারা দিন মাথা খুঁড়ে মরেও আপনি উইকেট পাবেন না। তাই বলে হতাশ হলে চলবে না। পরের দিনের জন্য আবার নতুন করে নিজেকে তৈরি করতে হবে। ব্যাটসম্যানকে আউট করার জন্য আবার পরিকল্পনা করতে হবে। জাল বিছোতে হবে। ব্যাট প্যাডের মাঝখান দিয়ে উইকেট ভাঙার জন্য পরিকল্পনা করতে হয়, স্লিপে ক্যাচ তোলানোর জন্যও করতে হয় নতুন ভাবনাচিন্তা, রান আউট করার জন্যও অন্য রকম পরিকল্পনার দরকার। টেস্ট ক্রিকেটে এ রকমই সব পরিকল্পনা করে যেতে হয় সারা দিন। মনোসংযোগ নষ্ট হলে চলবে না। ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয় সব সময়ে। টি টোয়েন্টিতে এ সব কোথায়! নামলাম, ধুমধারাক্কা চালালাম, ব্যস হয়ে গেল। এ ভাবে চললে এ রকমই হবে।
আজকের সময়ে আপনি যদি খেলতেন, তা হলে তো আপনাকে বড় পরীক্ষা দিতে হত।
কেন?
এখন তো দাপট দেখাচ্ছেন বিরাট কোহালি, ডেভিড ওয়ার্নার। আর ওঁদের তো বল করতে ভয় পান বোলাররা।
শুনুন, আমি কোহালি, ওয়ার্নারকে বল করতে চাই। এখনও। সবার আগে নিজের উপরে বিশ্বাস রাখতে হবে। বোলারকেও যেমন নিজের দক্ষতার উপরে বিশ্বাস রাখতে হয়, ব্যাটসম্যানকেও তেমনই নিজের ক্ষমতায় আস্থা রাখতে হয়। কোহালি বা ওয়ার্নারকে যে বা যারা এখন বল করছে, তারা যে ওদের আউট করতে পারবে এই বিশ্বাস রাখতে হবে। আমি নেটে জো রুট, বেন স্টোকসকে বল করেছি। ওদের আউটও করেছি। আমি আত্মবিশ্বাসী এখনও যদি নেটে আমি বিরাটকে বল করি, তা হলে ওকেও আউট করতে পারব। ম্যাচে তো আর আমি নামতে পারব না। কারণ আমি এখন বুড়ো হয়ে গিয়েছি। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ এখন হচ্ছে না। কিন্তু কোনওদিন যদি তা শুরু হয়, আমি নেটে বিরাটকে বল করবো। এবং ওকে আউটও করবো। বিরাটকে আমার ওপেন চ্যালেঞ্জ রইল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy