—ফাইল চিত্র।
ঐতিহ্যশালী সেই মাঠ। যেখানে পা পড়েছে নানা কিংবদন্তির। এটিকে-মোহনবাগানের হাত ধরে সেখানে আবার দেখা যেতে পারে জাতীয় স্তরের মহারণ, আন্তর্জাতিক মানের ম্যাচ।
ছ’য়ের দশকে মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের হয়ে দাপিয়ে খেলা সুকুমার সমাজপতির মনে পড়ছে, ‘‘১৯৬০ সালে যখন মোহনবাগানে প্রথম সই করি, তখন আজ যেখানে ইস্টবেঙ্গল মাঠ সেখানেই দুই বড় দল একসঙ্গে অনুশীলন করত। এখন যেটা এরিয়ান তাঁবু, সেটা তখন ছিল মোহনবাগানের।’’ যোগ করেন, ‘‘মোহনবাগানের আধুনিকতার রূপকার প্রয়াত ধীরেন দে। তিনিই ইস্টবেঙ্গল থেকে আলাদা হয়ে মোহনবাগানকে নিয়ে উঠে গিয়েছিলেন ক্যালকাটা মাঠে।’’
ধীরেন দে-র তৎকালীন আপ্ত সহায়ক ধীরাজ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘এখন যেটা মোহনবাগান মাঠ, সেটা তখন ছিল ক্যালকাটা ফুটবল ও ক্রিকেট ক্লাবের মাঠ। ওখানে যাওয়ার ব্যবস্থা মোহনবাগান করে ফেলেছিল সপ্তাহ দু’য়েকের ঝটিকা বৈঠকের পরেই। যে ঘটনার পিছনেও ছিল ধীরেনবাবুর প্রয়াস।’’
কী ভাবে মখমলের মতো হয়ে উঠেছিল মোহনবাগান মাঠ? সুকুমারবাবু বলেন, ‘‘ওটা ওই মাঠের বিশেষত্ব। আমার বাবাও তিনের দশকে প্রথম ডিভিশনে ফুটবল খেলতেন। বড় দলে আসার আগে আমি যখন এরিয়ানে খেলতাম, তখন তাঁকে বার বার বলতে শুনেছি, ক্যালকাটা মাঠ সেরা খেলাটা বার করে আনে।’’ তিনি আরও বলছেন, ‘‘ক্যালকাটা মাঠ পরিচর্যা করতেন জর্জ ইয়ার্ডি সাহেব। তাঁর থেকেই কাজটা শিখেছিলেন মোহনবাগান কর্তারা।’’ আর মোহনবাগান মাঠে যাতে জল জমে গিয়ে খেলা পণ্ড না হতে পারে, তার জন্য গোটা মাঠে দুর্দান্ত নিকাশি ব্যবস্থা করা হয়েছিল ধীরেন দে-র আমলেই। মোহনবাগানের ‘ঘরের ছেলে’ সুব্রত ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘ক্লাবে কংক্রিটের সদস্য গ্যালারি তৈরির সময়ে সেনাবাহিনী এসে কাজ বন্ধ করে দিয়ে গিয়েছিল। ধীরেনদা এক ফোনে প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে ধরে ব্যবস্থা করে নিয়েছিলেন।’’ ভারতের কোনও ফুটবল মাঠে প্রথম ফ্লাডলাইটও বসে মোহনবাগান মাঠে। দিনটা ছিল ১৯৭৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। ধীরাজবাবু বলছেন, ‘‘ধীরেনবাবুর বিশ্বস্ত বন্ধু ছিলেন অভিনেতা জহর গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি মাঠের পরিচর্যার দিকটি ভাল ভাবে বোঝাতে পেরেছিলেন। জহরবাবু মাঠ সচিবের দায়িত্বও সামলেছেন।’’
জহরবাবুর আত্মীয় সমর (বদ্রু) বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি মেলবোর্ন অলিম্পিক্সে চতুর্থ স্থান পাওয়া ভারতীয় ফুটবল দলের অধিনায়কত্ব করেছেন। তিনিও বলছেন, ‘‘বর্তমান মোহনবাগান মাঠে পরিচর্যার দিকে সতর্ক নজর ছিল ধীরেনবাবুর। আধুনিকতা তো ওর হাত ধরেই।’’
তবে আশি শতাংশ কিনে নেওয়া সংস্থা যতই শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবের ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দিক, সমর্থকদের একাংশের মনে প্রশ্ন উঠছে, মোহনবাগান আর সেই মোহনবাগান থাকল কি না। শুক্রবার সারা দিন ধরে এই নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলতেই থাকল সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাঁরা বলতে থাকেন, ‘‘আশি শতাংশ তো চলে গিয়েছে। বাণিজ্যিক ভাবে যতই শক্তিশালী হোক, সেই পুরনো মোহনবাগান আর থাকবে কী করে?’’ আবার অন্য অংশের বক্তব্য, ‘‘যুগ পাল্টেছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েই চলতে হবে।’’ এটিকে-মোহনবাগান বোর্ডের অন্যতম কর্তা সৃঞ্জয় বসু বললেন, ‘‘নতুন বোর্ড মোহনবাগানের ঐতিহ্যশালী সবুজ-মেরুন রঙের জার্সি ও প্রতীক পালতোলা নৌকো অপরিবর্তিত রাখায় আমরা দারুণ খুশি।’’
এটিকে-মোহনবাগানকে স্বাগত জানিয়ে এফএসডিএল-এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপার্সন নীতা অম্বানি বলেছেন, ‘‘এটিকে ও মোহনবাগানের এই ঐতিহাসিক মেলবন্ধনে আমরা উচ্ছ্বসিত। এই দুই শক্তিধরের সমন্বয়ে ভারতীয় ফুটবল আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও উন্নতি করবে।”
রজার মিল্লা, দিয়েগো মারাদোনা, ফিফা প্রেসিডেন্ট সেপ ব্লাটারেরা ঘুরে গিয়েছেন মোহনবাগান মাঠে। সেখানেই যদি এটিকে-মোহনবাগানের ম্যাচ হয়, ইতিহাসের সরণি দিয়ে ফের হাঁটবে ফুটবল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy