স্মৃতি: ১৯৮৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে জোন্স। চেন্নাইয়ে। ফাইল চিত্র
ভারতের মাটিতেই তিনি তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা টেস্ট ইনিংসটি খেলেছিলেন। আর সেই ভারতের মাটিতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ডিন জোন্স। বৃহস্পতিবার দুপুরে মুম্বইয়ে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন অস্ট্রেলিয়ার এই কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান। ব্রেট লি চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেননি জোন্সকে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৯।
আইপিএলে ধারাভাষ্য দিতে ভারতে এসেছিলেন জোন্স। মুম্বইয়ে জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে থেকে কাজ করছিলেন তিনি। জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় ফাস্ট বোলার লি-র সঙ্গে ব্রেকফাস্টের পরে টিভি শোয়ের জন্য কিছু কাজও করেন জোন্স। এর পরে হোটেলের লবিতেই হঠাৎ করে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। সঙ্গী লি ‘সিপিআর’-এর সাহায্যে শ্বাস-প্রশ্বাস ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু লাভ হয়নি। জোন্সের ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা অস্ট্রেলীয় প্রচারমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এ দিন সকালেও নাকি তিনি দৌড়তে গিয়েছিলেন। আইপিএলের সম্প্রচারকারী চ্যানেল, স্টার স্পোর্টসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে ডিন মার্ভিন জোন্সের মৃত্যু সংবাদ জানাচ্ছি। হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।’’ জোন্সের এই মৃত্যু অনেককে মনে করিয়ে দিচ্ছে ২০০৭ বিশ্বকাপে বব উলমারের ঘটনাকে। আচম্বিতে হোটেলের ঘরে মৃত্যু হয়েছিল পাকিস্তান কোচের।
ক্রিকেটার, কোচ, ধারাভাষ্যকার— সবেতেই সাফল্যের মুখ দেখেছেন জোন্স। ওয়ান ডে ক্রিকেটে খেলার ধরন বদলে দেওয়ার পিছনেও জোন্সের ভূমিকার কথা বলেন অনেক প্রাক্তন ক্রিকেটার। ১৯৮৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেকে ৪৮ রান করেন তিনি। দু’বছর পরে চেন্নাইয়ের (তৎকালীন মাদ্রাজ) অবিস্মরণীয় টাই টেস্টে দুরন্ত ২১০ রান করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন জোন্স।
তৎকালীন চিপকের অসহ্য গরম সামলে ওই ইনিংস খেলেছিলেন জোন্স। ব্যাট করতে করতে মাঠেই বমি করেছেন। টেস্ট চলাকালীন তাঁকে হাসপাতালেও যেতে হয়েছিল। ১৯৮৬ সালে ভারতের বিরুদ্ধে ওই টাই টেস্টে ব্যাট করার সময় অসুস্থ জোন্সকে অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক অ্যালান বর্ডার বলেছিলেন, ‘‘তুমি না পারলে কঠিন মানসিকতার কোনও কুইন্সল্যান্ডের ক্রিকেটারকে নামাতে হবে দেখছি।’’ যা তাতিয়ে দেয় জোন্সকে।
১৯৬১ সালের ২৪ মার্চ, ভিক্টোরিয়ার মেলবোর্নে জন্ম হয় জোন্সের। ৫২টি টেস্টে তিনি ৩৬৩১ রান করেন। এগারোটি সেঞ্চুরি, ১৪টি হাফসেঞ্চুরি। গড় ৪৬.৫৫। সর্বোচ্চ ২১৬। এর পাশাপাশি ১৬৪টি ওয়ান ডে-তে রয়েছে ৬০৬৮ রান, সাতটি সেঞ্চুরি ও ৪৬টি হাফসেঞ্চুরি। তাঁর প্রজন্মের অন্যতম সেরা সাদা বলের ক্রিকেটার হিসেবে দেখা হয় জোন্সকে। তিনিই প্রথম দেখিয়েছিলেন কী ভাবে দ্রুত সিঙ্গলস নিয়ে স্কোরবোর্ড সচল রাখা যায়। ১৯৮৭ সালের বিশ্বজয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি।
জোন্সের মেন্টর বলে পরিচিত বর্ডার বলেছেন, ‘‘টেস্ট পর্যায়েও দারুণ ছিল ডিনো। কিন্তু ওয়ান ডে-তে যে আগ্রাসী ক্রিকেটটা ও খেলত, তার জন্য ওকে সবাই মনে রেখে দেবে। খেলাটায় বিপ্লব এনে দিয়েছিল।’’ জোন্সকে বাঁচানোর চেষ্টা করার জন্য লি-কে ধন্যবাদও দেন বর্ডার।
জোন্সের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ক্রিকেট মহলে। সচিন তেন্ডুলকর, স্টিভ স্মিথ, বিরাট কোহালিরা শোকবার্তা জানিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। সচিন লিখেছেন, ‘‘ডিন জোন্সের মৃত্যুর খবরটা সত্যিই হৃদয়বিদারক। এক জন সুন্দর মানুষ তাড়াতাড়ি চলে গেল।’’ কোহালির টুইট, ‘‘ডিন জোন্সের আকস্মিক ভাবে চলে যাওয়াটা বিশাল ধাক্কা দিয়ে গেল।’’ জোন্স রেখে গিয়েছেন স্ত্রী ও দুই মেয়েকে। ভিভ রিচার্ডস তাঁর শোকবার্তায় বলেছেন, ‘‘সকালে উঠে ভয়ঙ্কর একটা খবর পেলাম। তুমি বিপক্ষ দলের ক্রিকেটারের চেয়েও বড় ছিলে আমার কাছে। তুমি আমার ভাই, আমার বন্ধু ছিলে।’’
সেই টাই টেস্টের প্রতিদ্বন্দ্বী এবং পরে ‘প্রফেসর ডিনো’র সঙ্গে সহ-ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করা ভারতের হেড কোচ রবি শাস্ত্রী টুইট করেছেন, ‘‘এক জন সহকর্মী এবং বন্ধুকে হারালাম। অল্প বয়সে চলে গেল জোন্স।’’
সত্যিই কেউ ভাবেনি এত কম রানে জীবনের শেষ ইনিংসে আউট হয়ে যাবেন ডিন মার্ভিন জোন্স।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy