Advertisement
E-Paper

গত চার বারের ইপিএল জয়ীদের টানা চার ম্যাচে হার! শেষের শুরু না শেষ? ম্যাঞ্চেস্টার সিটির কেন এই হাল

তারা একটা ম্যাচ হারলেই খবর। সেখানে ম্যাঞ্চেস্টার সিটি গত চারটি ম্যাচ হেরেছে। জল্পনা শুরু হয়েছে, সিটির দাপট কি ফুরিয়ে এল? কেন এই অবস্থা গুয়ার্দিওলার দলের?

football

ম্যাঞ্চেস্টার সিটির ফুটবলার আর্লিং হালান্ড। ছবি: রয়টার্স।

অভীক রায়

শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৫৮
Share
Save

শুধু ইংল্যান্ড নয়, এই মুহূর্তে ইউরোপের অন্যতম সেরা দল তারা। বেশির ভাগ দলই তাদের মতো খেলতে চায়। কেউই পারে না। বিশ্বের সেরা দলও তাদের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে। সেই ম্যাঞ্চেস্টার সিটির টানা চারটি ম্যাচে হার অবাক হওয়ার মতোই। এই সিটিকে চেনা যাচ্ছে না। যে দলের সামনে কিছু দিন আগে পর্যন্ত রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখ বিধ্বস্ত হয়েছে, তারাই এখন হেরে যাচ্ছে স্পোর্টিং লিসবন, ব্রাইটনের মতো তুলনামূলক অনেক কমজোরি দলের কাছে।

শেষ বার যখন সিটি টানা চারটে ম্যাচে হারে তখনও পেপ গুয়ার্দিওলার কোচিং জীবন শুরুই হয়নি। তখন কেরিয়ারের সায়াহ্নে তিনি। মেক্সিকোর একটি ক্লাবে খেলছিলেন। তখনও সিটিকে কিনে নেয়নি আবু ধাবির রাজপরিবার। ইংল্যান্ডের ফুটবলে তখন দাপট চলছিল চেলসির। রোমান আব্রামোভিচের মালিকানাধীন দলের কোচ তখন হোসে মোরিনহো। সবে গোটা বিশ্বে বিখ্যাত হতে শুরু করেছেন। সিটির একটানা হারের দিকে কারও নজরও পড়েনি। স্টুয়ার্ট পিয়ার্সের কোচিংয়ে ২০০৬ সালে সে বার টানা ছ’টি ম্যাচ হেরেছিল সিটি।

১৮ বছর আগের সেই সিটির সঙ্গে এখনকার সিটির কোনও মিল নেই। এই সিটিতে খেলেন বিশ্বের সেরা ফুটবলারেরা। দায়িত্বে বিশ্বের অন্যতম সেরা কোচ। মালিক বিশ্বের অন্যতম ধনী রাজপরিবার। এখন সিটি একটা ম্যাচে হারলেও কাটাছেঁড়া হয়। সমালোচিত হন কোচ গুয়ার্দিওলা থেকে ফুটবলারেরা। টানা চার হারের পর ফুটবল বিশেষজ্ঞেরাও স্তম্ভিত। প্রশ্ন উঠেছে, এটা কি শেষের শুরু? না কি এখানেই সিটির দাপট শেষ? সাফল্য পেয়ে কি গুয়ার্দিওলা এবং তাঁর ফুটবলারেরা ক্লান্ত হয়ে গিয়েছেন? আর কোনও খিদে কি বেঁচে নেই? বের্নার্দো সিলভার ‘ক্লাব গভীর অন্ধকারে রয়েছে’ মন্তব্য নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছে।

রদ্রি-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারের চোট

হয়তো চোটই সিটির অবনমনের কারণ। আবার হয়তো নয়। গুয়ার্দিওলার সাম্রাজ্যের দুই গুরুত্বপূর্ণ সেনাপতি কেভিন দ্য ব্রুইন এবং রদ্রি দীর্ঘ দিনের জন্য চোট পেয়ে বাইরে চলে গিয়েছেন। খেলা তৈরি করা থেকে রক্ষণ করা— দুই বিভাগেই দাপট দেখিয়েছেন এই দু’জন। এ ছাড়া রুবেন দিয়াস, জ্যাক গ্রিলিশ, জেরেমি ডোকু, ইলখাই গুন্ডোয়ান, নাথান একে, ম্যানুয়েল আকাঞ্জি এবং ফিল ফোডেনরাও বার বার চোট পেয়েছেন। যাঁরা ফিরেছেন তাঁরা এখনও আগের মতো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেননি। বের্নার্দো এবং কাইল ওয়াকারকে ক্লান্ত লেগেছে। ম্যাথেউস নুনেস এবং স্যাভিনহোর মতো তরুণ ফুটবলারেরা এখনও দলের কৌশলের সঙ্গে মানাতে পারেননি। ক্লান্তিও একটা কারণ। ভরা ক্লাব মরসুমের পর বেশির ভাগ ফুটবলারকে ইউরো কাপ এবং কোপা আমেরিকা খেলতে হয়েছে। চোট, ফর্ম হারানো, ক্লান্তি, বয়স এবং গুয়ার্দিওলার ভবিষ্যৎ— সব মিলিয়ে ভাল জায়গায় নেই সিটি। টিভিতে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে নিয়মিত ধারাভাষ্য দেন ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ফুটবলার অর্ণব মণ্ডল। সিটির বেহাল দশা নিয়ে তাঁর মত, “গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারদের চোট সিটিকে অনেকটা ভোগাচ্ছে। রদ্রির মতো ফুটবলার যে কোনও দলেই অমূল্য। ও যতটা জায়গা নিয়ে খেলতে পারে সেটা কেউ পারে না। সিটির চালিকাশক্তি ও। রদ্রি না থাকা যদি প্রথম ধাক্কা হয়, দ্বিতীয় ধাক্কা দ্য ব্রুইনের চোট। গোলের সময় ও যে রকম পাস বাড়ায়, সেটা বাকি কাউকে করতে দেখি না।”

গুয়ার্দিওলার কৌশলের সুবিধা এবং সমস্যা

সিটি আজ যে জায়গায় রয়েছে তার পিছনে গুয়ার্দিওলার অবদান অনস্বীকার্য। সেরা ফুটবলারদের তো পেয়েছেনই, তাঁদের থেকে সেরাটা বার করে আনতেও পেরেছেন। অনেক বেশি আগ্রাসী ফুটবল খেলে তাঁর দল। গতি নয়, নিখুঁত পাসিংয়ে প্রতিপক্ষকে শেষ করে দেয়। ডোকু, স্যাভিনহো, নুনেসরা বল ধরে খেলার মতো স্ট্রাইকার নন। তবে বুদ্ধিতে মাত করে দেন। আর্লিং হালান্ডকেও বিভিন্ন ভাবে খেলিয়ে দেখে নিয়েছেন গুয়ার্দিওলা। জুলিয়ান আলভারেস ক্লাব ছাড়ায় গোল করার জন্য এখন হালান্ডই আসল ভরসা সিটির। অর্ণব বললেন, “হালান্ড বড্ড একা পড়ে যাচ্ছে। ওকে সাহায্য করার মতো কেউ নেই। বল পাচ্ছে না। আরও একটা কথা বলব, ফোডেনের অফ ফর্ম সিটিকে মারাত্মক ভোগাচ্ছে। ফোডেনের গতি, আচমকা নেওয়া শট, ড্রিবলিং বাকিদের থেকে অনেক পরিণত। সেটার অভাব বোঝা যাচ্ছে।”

ম্যান সিটির কোচ পেপ গুয়ার্দিওলা।

ম্যান সিটির কোচ পেপ গুয়ার্দিওলা। ছবি: রয়টার্স।

ক্লাবের হাল কী ভাবে গুয়ার্দিওলা ফেরাতে পারেন সে দিকে নজর থাকবে। তিনি যদি আবার গতি এবং আক্রমণ-নির্ভর ফুটবলে ফিরে যান তা হলে সঠিক ফুটবলার নেই দলে। মাতেয়ো কোভাসিচের পাসিং ক্ষমতা আকর্ষণীয়। কিন্তু রদ্রির মতো শারীরিক সক্ষমতা নেই। মাঝে মাঝে মন্থর হয়ে পড়েন, যে দুর্বলতা কাজে লাগিয়েছে স্পোর্টিং বা ব্রাইটন। পাস করতে পারেন, এমন ফুটবলারে মিডফিল্ড ভরিয়েছিলেন গুয়ার্দিওলা। বল হারালে তাঁদের কারও ক্ষমতা নেই নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার। দিয়াস এবং জন স্টোনসের মতো খেলোয়াড়দের অভাব বোঝা যাচ্ছে।

আক্রমণে বাড়তি জোর

সমস্যা মেটাতে হয়তো গুয়ার্দিওলা মিডফিল্ডের চাপ কমিয়ে ফরোয়ার্ড লাইনকে নিখুঁত করতে চাইবেন। তবে কোনওটাই এখনও নিশ্চিত নয়। আন্তর্জাতিক বিরতির আগে গুয়ার্দিওলা বলেছেন, “হাতে ১০ দিন রয়েছে। আপাতত মাথার চাপ ফাঁকা করতে চাই। খেলোয়াড়েরা ফিট হয়ে ফিরুক। তার পর নতুন করে ভাবব।”

প্রত্যাবর্তন গুয়ার্দিওলার হাত ধরেই?

এ মরসুমের শেষে গুয়ার্দিওলার সঙ্গে চুক্তি শেষ হচ্ছে সিটির। তিনি আর ইংরেজ ক্লাবে থাকবেন কি না জল্পনা চলছে। তবে সিটি এমন একটা দল যারা বার বার ঘুরে দাঁড়াতে জানে। যে ভাবে তাদের অধঃপতন হয়েছে তা সাম্প্রতিক অতীতে দেখা যায়নি। তবে গুয়ার্দিওলা নিজে খুব একটা ভাবিত নন। আগের মতোই সাংবাদিক বৈঠকে ফুরফুরে মেজাজে দেখা যায় তাঁকে। মজার মজার উত্তরও দেন। স্পেন, জার্মানি, ইংল্যান্ডের নানা ক্লাবে কোচিং করানো গুয়ার্দিওলা ১৭ বছরের কোচিং কেরিয়ারে কোনও দিন টানা চারটি ম্যাচে হারেননি। তাঁর কাছে এটি সঙ্কট তো বটেই। যদিও ব্রাইটনের কাছে হারের পর তিনি বলেছেন, “জীবনের এক বার তো এ ধরনের পরিস্থিতি আসবেই। সব কিছুরই প্রথম থাকে।” একই কথা শোনা গেল অর্ণবের গলাতেও। তিনি বললেন, “আসলে যে কোনও কোচেরই একটা খারাপ সময় যায়। সিটি তো টানা চার বার ইপিএল জিতেছে। সেটা তো কেউ বলছে না। গুয়ার্দিওলা নিজেই তো বলেছে, এ বার অন্য কেউ ট্রফি পেলেও ওর সমস্যা নেই। আমার ধারণা, কয়েকটা ফুটবলার ফিরে পেলেই সিটি আবার আগের রূপে ফিরবে।”

Manchester City Pep Guardiola Erling Haaland Phil Foden

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।