চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে উল্লাস রিয়াল মাদ্রিদের ফুটবলারদের। ছবি: রয়টার্স।
৯ মিনিটের ঝড়়ে উড়ে গেল বরুসিয়া ডর্টমুন্ড। প্রথম ৭০ মিনিটের খেলায় বেশি সুযোগ তৈরি করেছিল জার্মানির ক্লাব। কিন্তু ঠিক সময়ে ঠিক কাজটা করল রিয়াল মাদ্রিদ। ফুটবলে গোলই শেষ কথা বলে। সেটাই করে দেখাল তারা। ৯ মিনিটের মধ্যে জোড়া গোল করে খেলার ফল নিশ্চিত করে দিলেন ড্যানি কার্ভাহাল ও ভিনিসিয়াস জুনিয়র। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১৮ বার ফাইনালে উঠে নিজেদের ১৫তম ট্রফি জিতে নিল স্পেনের ক্লাব। আরও এক বার রিয়াল প্রমাণ করে দিল যে তারাই ‘ইউরোপের রাজা’।
রিয়ালকে এক সময় ‘ইউরোপের রাজা’ বলা হত। ১৯৫৬ সালে এই প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার পর থেকে টানা পাঁচ বার ট্রফি জিতেছিল তারা। আরও একটি জিতেছিল ১৯৬৬ সালে। ষষ্ঠ ট্রফি জেতার পরে ৩২ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল তাদের। কিন্তু গত ১০ বছরে ছ’বার ইউরোপের সেরা হয়েছে তারা। তাই আর এক বার ‘ইউরোপের রাজা’র খেতাব জিতেছে মাদ্রিদ।
যদিও ওয়েম্বলিতে ম্যাচের শুরুটা হয়েছিল অন্য ভাবে। খাতায়-কলমে রিয়াল অনেক শক্তিশালী হলেও ম্যাচের প্রথমার্ধে দাপট দেখায় ডর্টমুন্ড। খেলা শুরুর পরেই মাঠে দর্শক ঢুকে যাওয়ায় কিছু ক্ষণ বন্ধ থাকে খেলা। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল শুরু করে ডর্টমুন্ড। রক্ষণ জমাট রেখে আক্রমণে ওঠে তারা। রিয়াল হয়তো ভাবেনি শুরু থেকে ডর্টমুন্ড এতটা আক্রমণে উঠবে। কিছুটা অবাক হয়ে যায় তারা।
১৪ মিনিটের মাথায় এগিয়ে যেতে পারত ডর্টমুন্ড। শ্লটারবেকের লম্বা বল বক্সে ধরেন নিকোলাস ফুলক্রুগ। তিনি বল বাড়িয়ে দেন ইউলিয়ান ব্র্যান্ডকে। ডিফেন্ডারদের সামলে ডান পায়ের আউটস্টেপ ব্যবহার করেন ব্র্যান্ড। কিন্তু বল পোস্টের বাইরে চলে যায়।
গোটা মরসুমে লুনিন গোলরক্ষকের ভূমিকায় থাকলেও ফাইনালে থিবো কুর্তোয়ার উপর ভরসা দেখিয়েছিলেন রিয়ালের কোচ কার্লো আনচেলোত্তি। প্রথমার্ধেই বেশ কয়েক বার কঠিন পরিস্থিতির সামনে পড়তে হয় তাঁকে। ২১ মিনিটের মাথায় ভাল সুযোগ পান করিন আদেয়েমি। তাঁর সামনে শুধুমাত্র ছিলেন কুর্তোয়া। কিন্তু দেরি করে ফেলায় গোল করতে পারেননি তিনি। দু’মিনিট পরেই ফুলক্রুগের শট পোস্টে লেগে বেরিয়ে যায়। প্রথম ৩০ মিনিটে ডর্টমুন্ড ৩-০ এগিয়ে যেতে পারত। রিয়ালের মতো দলের বিরুদ্ধে যে ভাবে তারা সুযোগ নষ্ট করল তা অপরাধ।
রিয়ালের আক্রমণ সে রকম দানা বাঁধছিল না। যাঁর উপর আক্রমণের প্রধান দায়িত্ব ছিল সেই ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে আটকে রেখেছিল ডর্টমুন্ডের রক্ষণ। ভিনিসিয়াসের গতির কথা মাথায় রেখে তাঁকে জোনাল কভারিংয়ে রাখা হয়েছিল। ফলে তিনি বল পেলেই একসঙ্গে তিন জন ফুটবলার চলে আসছিলেন। তাতেই আটকে যাচ্ছিল রিয়ালের আক্রমণ। ম্যাটস হামেলসের নেতৃত্বে খেলা ডর্টমুন্ডের জমাট রক্ষণ ভেঙে সুযোগ তৈরি করতে পারছিলেন না জুড বেলিংহ্যামেরা।
৪১ মিনিটের মাথায় প্রতি আক্রমণ থেকে আবার সুযোগ পায় ডর্টমুন্ড। বক্সের বাইরে থেকে শট নেন মার্সেল সাবিতজ়ার। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে সেই বল বার করে দেন কুর্তোয়া। প্রথমার্ধের শেষ দিকে পর পর দু’টি কর্নার পায় ডর্টমুন্ড। তা কাজে লাগাতে পারেনি তারা। গোলশূন্য অবস্থায় বিরতিতে যায় দু’দল।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়ায় রিয়াল। ৪৮ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে ভিনিসিয়াসকে ফাউল করায় ফ্রি কিক পায় রিয়াল। টনি ক্রুজ়ের বাঁক খাওয়ানো শট ডান দিকে ঝাঁপিয়ে বাঁচান কোবেল। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে দুই প্রান্ত ধরে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করে ডর্টমুন্ড। প্রথমার্ধে ঠিক এটাই করছিল তারা।
রিয়ালের দুই প্রান্তে ভিনিসিয়াস ও রদ্রিগো বল পেতে শুরু করায় চাপ বাড়ে ডর্টমুন্ডের বক্সে। ৫৬ মিনিটের মাথায় বক্সে ভাল বল পান ড্যানি কার্ভাহাল। যদিও ডান পায়ের ভলিতে গোল করতে পারেননি তিনি। প্রতিটি বলের জন্য লড়াই হচ্ছিল। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জায়গা ছাড়ছিলেন না। ৬২ মিনিটের মাথায় আদেয়েমির ক্রস থেকে ভাল সুযোগ পান ফুলক্রুগ। তাঁর জোরাল হেট পাঞ্চ করে বার করে দেন কুর্তোয়া। বার বার গোলের সামনে এসেও গোল করতে পারছিল না ডর্টমুন্ড। ফলে হতাশা বাড়ছিল হলুদ জার্সিধারীদের মধ্যে।
প্রথমার্ধে একাধিক সুযোগ নষ্টের শাস্তি দ্বিতীয়ার্ধে পেতে হয় ডর্টমুন্ডকে। ৭৩ মিনিটের মাথায় ক্রুজ়ের কর্নার থেকে হেডে গোল করেন কার্ভাহাল। এগিয়ে যায় রিয়াল। এক বার ডর্টমুন্ডের রক্ষণ ভাঙার পরে আক্রমণের গতি আরও বাড়ায় রিয়াল। দু’মিনিট পরেই ব্যবধান বাড়াতে পারতেন বেলিংহ্যাম। বক্সের মধ্যে থেকে দ্বিতীয় পোস্টে বল রাখার চেষ্টা করেন তিনি। শ্লটারবেকের পায়ে লেগে বল পোস্টের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। ৭৯ মিনিটে ক্রুজ়ের ফ্রি কিক ভাল বাঁচান কোবেল।
গোল করার জন্য আক্রমণে লোক বাড়াতে বাধ্য হন ডর্টমুন্ড কোচ এডিন টারজিচ। প্রথম ৭০ মিনিট তাঁরা যে ফুটবল খেলছিলেন গোল খাওয়ার পরে তা এলোমেলো হয়ে যায়। রিয়াল অনেক বেশি সুযোগ পেতে শুরু করে। ৮২ মিনিটের মাথায় খেলার ফল নিশ্চিত করে দেন ভিনিসিয়াস। ম্যাটসনের ভুলে বল পেয়ে যান বেলিংহ্যাম। তিনি পাস বাড়ান ভিনিসিয়াসকে। ঠান্ডা মাথায় গোল করেন ব্রাজিলীয় ফুটবলার। ২-০ এগিয়ে যায় রিয়াল।
৮৭ মিনিটে হেডে ফুলক্রুগ গোল করলেও অফসাইডে তা বাতিল হয়। বাকি সময়ে গোল করতে পারেনি ডর্টমুন্ড। আরও এক বার ইউরোপের সেরা হয়ে মাঠ ছাড়ে রিয়াল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy