চোটের কান্না। (বাঁ দিকে) ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, লিয়োনেল মেসি (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
দু’জনের মধ্যে কে সেরা, তা নিয়ে তর্ক শেষ হওয়ার নয়। দু’জনের সমর্থকেরাই তাঁদের সর্বকালের সেরা ফুটবলার বলেন। কার সাফল্য কত, তা নিয়ে হাজার হাজার শব্দ খরচ হয়। সে সব তর্কে না গিয়েও এ কথা বলাই যায়, দু’জন ফুটবলের দুই পূজারি। ফুটবলকে অনেক কিছু দিয়েছেন তাঁরা। বছরের পর বছর ধরে সমর্থকদের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। আট বছর পরে আশ্চর্যজনক ভাবে মিলে গেলেন দু’জনে। ২০১৬ সালের ইউরো ফাইনালে চোটের কারণে মাঠ ছেড়েছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। কেঁদেছিলেন সিআর৭। আট বছর পরে ২০২৪ সালের কোপা আমেরিকা ফাইনালে লিয়োনেল মেসিও চোট পেয়ে মাঠ ছাড়লেন। তিনিও কাঁদলেন।
২০১৬ সালে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ফাইনালে ৯ মিনিটের মাথায় দিমিত্রি পায়েতের ট্যাক্লে চোট পেয়েছিলেন রোনাল্ডো। মাঠেই কিছু ক্ষণ পড়ে ছিলেন তিনি। পরে আবার খেলা শুরু করলেও বেশি ক্ষণ টানতে পারেননি। ২৫ মিনিটের মাথায় পায়েতের সঙ্গে আরও এক বার ধাক্কা লেগেছিল রোনাল্ডোর। এ বার আর উঠতে পারেননি। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল। প্রথমে স্ট্রেচারে করে সাইডলাইনে নিয়ে আসা হয়েছিল তাঁকে। সেখান থেকে খোঁড়াতে খোঁড়াতে বেঞ্চে গিয়ে বসেছিলেন। স্ট্রেচারে শুয়েই দু’হাতে চোখ ঢেকেছিলেন রোনাল্ডো। হয়তো তাঁর মনে তখন ভর করেছিল হারের ভয়। ভেবেছিলেন, দলের যখন তাঁকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সেই সময় তিনি খেলতে পারলেন না।
২০২৪ সালে কোপা ফাইনালে যেন সেই ঘটনার রিপ্লে হল। সে বার রোনাল্ডো ছিলেন। এ বার তাঁর জায়গা নিলেন মেসি। কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে খেলার ৩৬ মিনিটের মাথায় প্রথম চোট পান মেসি। বক্সে ঢুকে বল ক্রস করার চেষ্টা করেন। কলম্বিয়ার সান্তিয়াগো আরিয়াসের বুটের স্টাড তাঁর ডান পায়ের গোড়ালিতে লাগে। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন মেসি। বেশ কিছু ক্ষণ মাঠে পড়ে থাকেন। পরে খেলতে নামলেও দেখে বোঝা যাচ্ছিল, খোঁড়াচ্ছেন তিনি। সেই অবস্থায় প্রথমার্ধ শেষ করেন মেসি। দ্বিতীয়ার্ধে ৬৪ মিনিটের মাথায় ছুটতে গিয়ে হঠাৎ পড়ে যান মেসি। হ্যামস্ট্রিংয়ে হাত দিয়ে আবার যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন। এ বার আর খেলতে পারেননি। মাঠ ছাড়তে হয়। গোড়ালিতে আইসপ্যাক বেঁধে বেঞ্চে বসে হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকেন তিনি। বোঝা যাচ্ছিল, ফাইনাল খেলতে না পারার যন্ত্রণা গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে।
তবে চোট পাওয়ার পরেও বাকি সময় সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে সতীর্থদের উৎসাহ দিয়েছিলেন রোনাল্ডো। সেই অবস্থাতেই লাফাচ্ছিলেন। নির্দেশ দিচ্ছিলেন। কোনও কোনও সময় বোঝা যাচ্ছিল না, পর্তুগালের কোচ তিনি, না ফের্নান্দো স্যান্তস। তবে মেসি বেঞ্চে বসেই কাঁদছিলেন। লাউতারো মার্তিনেসের গোলে দল এগিয়ে যাওয়ার পরে হাসি ফোটে তাঁর মুখে। তখন উঠে দাঁড়ান তিনি। সতীর্থদের সঙ্গে উল্লাসে মাতেন।
শুধু রোনাল্ডো ও মেসি নন, দুই ফাইনাল মিলিয়ে দিল দু’দলের সমর্থকদেরও। রোনাল্ডো মাঠ ছাড়ার পরে যে ভাবে পর্তুগালের সমর্থকেরা কেঁদেছিলেন, ঠিক একই ভাবে মেসি উঠে যাওয়ার পরে আর্জেন্টিনার সমর্থকদের কাঁদতে দেখা গেল। দেশের সেরা ফুটবলার মাঠে না থাকলে হারের ভয় মনে ঢুকে যায়। সেটাই হয়তো হয়েছিল সমর্থকদের।
আরও একটা বিষয় আট বছর পরে মিলিয়ে দিলে রোনাল্ডো ও মেসিকে। চোট পেয়ে মাঠ ছাড়লেও শেষ হাসি হেসেছিলেন তাঁরা। ইউরোর ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে ১১৬ মিনিটে গোল করেছিলেন পর্তুগালের এডার। কোপার ফাইনালেও অতিরিক্ত সময়ে ১১২ মিনিটে গোল করলেন আর্জেন্টিনার লাউতারো মার্তিনেস। পর্তুগাল ফ্রান্সকে হারিয়েছিল ১-০ গোলে। আর্জেন্টিনাও কলম্বিয়াকে ১-০ গোলেই হারাল। অধিনায়ক হিসাবে রোনাল্ডো ও মেসি দু’জনেই ট্রফি তুললেন। তবে আরও একটি পার্থক্য থেকে গেল দু’জনের মধ্যে। সেটি ছিল পর্তুগালের জার্সিতে রোনাল্ডোর প্রথম ইউরো কাপ। এ বার আর্জেন্টিনার হয়ে দ্বিতীয় কোপা জিতলেন মেসি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy