Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Copa America 2024 Final

আবার কোপা আমেরিকা মেসির, পর পর দু’বার চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা, ফাইনালে হার কলম্বিয়ার

পর পর দু’বার কোপা আমেরিকা জিতল আর্জেন্টিনা। ফাইনালে কলম্বিয়াকে হারাল তারা। যদিও পুরো ম্যাচ খেলতে পারলেন না লিয়োনেল মেসি। চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে হল তাঁকে।

football

কোপা আমেরিকা জিতে সতীর্থদের সঙ্গে উল্লাস লিয়োনেল মেসির (ট্রফি হাতে)। ছবি: রয়টার্স।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৪ ০৯:৩৯
Share: Save:

চোট পেয়ে যখন লিয়োনেল মেসি মাঠ ছাড়ছেন তখন স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনা সমর্থকদের চোখে জল। কোপা আমেরিকা জেতার জন্য যে খেলোয়াড়ের উপর তাঁরা ভরসা করেছিলেন, সেই তিনিই তো তখন মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না মেসিও। বেঞ্চে বসে হাউ হাউ করে কাঁদলেন। ঠিক যে ভাবে ২০১৬ সালের ফাইনালে চিলির বিরুদ্ধে টাইব্রেকারে পেনাল্টি ফস্কে কেঁদেছিলেন তিনি। তবে সে বার হারের বোঝা মাথায় নিয়ে বিদায় নিতে হয়েছিল তাঁকে। এ বার মেসিহীন আর্জেন্টিনা জিতল। লাউতারো মার্তিনেস জেতালেন মেসির আর্জেন্টিনাকে। চলতি কোপায় যখনই নেমেছেন, গোল করেছেন মার্তিনেস। আরও এক বার সেই কাজটা করলেন তিনি।

খেলা শুরুর আগেই বিঘ্ন। ম্যাচ দেখতে ভিড় করেন টিকিট না থাকা অনেক দর্শক। তাঁরা ব্যারিকেড ভেঙে স্টেডিয়ামে ঢুকে পড়েন। পরিস্থিতি সামলাতে নাজেহাল হন নিরাপত্তারক্ষীরা। ফলে স্টেডিয়ামের গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট সময়ের থেকে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট দেরিতে শুরু হয় খেলা। শুরুতেই আক্রমণে ওঠে আর্জেন্টিনা। অ্যাঙ্খেল দি মারিয়ার ক্রস ধরে বক্সের মধ্যে থেকে শট মারেন ইউলিয়ান আলভারেস। কিন্তু গোলে রাখতে পারেননি তিনি। পরের মিনিটেই কলম্বিয়ার বক্সে ঢুকে পড়েন ট্যাগলিয়াফিকো। তিনিও গোলের মুখ খুলতে পারেননি।

প্রাথমিক চাপ সামলে আক্রমণে উঠতে শুরু করে কলম্বিয়া। গতি ও শক্তি, দুই-ই ব্যবহার করছিল তারা। আর্জেন্টিনার ফুটবলারদের গতিতে পরাস্ত করছিলেন হামেস রদ্রিগেস, লুইস দিয়াজ়েরা। ৬ মিনিটে সুযোগ চলে আসে কলম্বিয়ার কাছে। বক্সের বাইরে থেকে শট মারেন কর্ডোবা। তাঁর শট পোস্টে লেগে বেরিয়ে যায়। প্রান্ত ধরে আক্রমণ করছিল কলম্বিয়া। প্রতিটি বলের জন্য প্রেস করছিলেন ফুটবলারেরা। আর্জেন্টিনা খেলার গতি কিছুটা কমানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু পারছিল না। মেসি, দি মারিয়ারা বল ধরলেই কলম্বিয়ার দু’-তিন জন ফুটবলার তাঁদের ঘিরে ধরছিলেন। ফলে বল বেরিয়ে যাচ্ছিল।

প্রথম ২০ মিনিট সে ভাবে দেখা যায়নি মেসিকে। ২০ মিনিটের মাথায় প্রথম বার দলগত আক্রমণ তুলে আনে আর্জেন্টিনা। বক্সে ঢুকে শট মারেন মেসি। যদিও ডিফেন্ডার ও গোলরক্ষকের যৌথ প্রচেষ্টায় তা আটকে যায়। ৩০ মিনিটের পরে আরও কয়েকটি সুযোগ তৈরি করে কলম্বিয়া। আর্জেন্টিনার গোলের নীচে থাকা এমিলিয়ানো মার্তিনেসকে পরাস্ত করা সহজ ছিল না। মেসিকে দেখে মনে হচ্ছিল, ১০০ শতাংশ সুস্থ নন তিনি। তার মাঝেই ৩৬ মিনিটের মাথায় শট মারতে গিয়ে চোট পান মেসি। বেশ কিছু ক্ষণ পড়ে থাকেন তিনি। পরে আবার মাঠে নামলেও একটু খোঁড়াচ্ছিলেন মেসি। কিছুটা গা বাঁচিয়ে খেলার চেষ্টা করছিলেন। কলম্বিয়ার ফুটবলারেরা মাঝেমাঝে ফাউল করছিলেন। ফলে খেলার গতি থমকে যাচ্ছিল। প্রথমার্ধের বাকি সময়ে আর কোনও গোল আসেনি। গোলশূন্য অবস্থায় বিরতিতে যায় দু’দল।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেও একই পরিকল্পনা নিয়ে খেলতে থাকে কলম্বিয়া। সেই প্রেসিং ফুটবল। তবে দ্বিতীয়ার্ধে খেলার ধরন কিছুটা বদলায় আর্জেন্টিনা। তারাও গতি বাড়িয়ে খেলার চেষ্টা করে। কলম্বিয়ার ফুটবলারদের শারীরিক ক্ষমতার কাছে একটু হলেও পিছিয়ে পড়ছিল আর্জেন্টিনা। ৫৩ মিনিটের মাথায় কর্নার থেকে ফাঁকায় হেড করার সুযোগ পান ডেভিডসন স্যাঞ্চেজ়। কিন্তু গোলে বল রাখতে পারেননি তিনি।

চাপ সামলে খেলায় ফেরার চেষ্টা করে আর্জেন্টিনা। বাঁ প্রান্ত ধরে সচল ছিলেন দি মারিয়া। দ্রুত কয়েকটি আক্রমণ তুলে আনেন তিনি। ৫৮ মিনিটের মাথায় একক দক্ষতায় বক্সে ঢুকে শট মারেন দি মারিয়া। ভাল বাঁচান গোলরক্ষক। যখনই আর্জেন্টিনা আক্রমণে উঠছিল তখনই ফাউল করছিল কলম্বিয়া। মারকুটে ফুটবল খেলছিল তারা। মাথা ঠান্ডা রাখতে পারেননি আর্জেন্টিনার কোচ লিয়োনেল স্কালোনি। সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে রেগে যান তিনি। তাঁকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন সহকারীরা।

৬৪ মিনিটের মাথায় বড় ধাক্কা খায় আর্জেন্টিনা। প্রথমার্ধের চোট সামলে দ্বিতীয়ার্ধে নামলেও ভাল দেখাচ্ছিল না তাঁকে। একটি স্প্রিন্ট টানতে গিয়ে নিজেই পড়ে যান তিনি। বোঝা যাচ্ছিল, হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট লেগেছে। কোনও ভাবেই আর খেলা চালাতে পারেননি তিনি। মাঠ ছাড়েন মেসি। বেঞ্চে বসে নিজেকে সামলাতে পারেননি তিনি। প্রথমে এক পায়ের জুতো ছুড়ে ফেলেন। হাত দিয়ে মুখ ঢেকে হাউ হাউ করে কাঁদছিলেন মেসি। বোঝা যাচ্ছিল, ফাইনালে খেলতে না পারার যন্ত্রণা তাঁর চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল। মেসি ওঠার পরে কাঁদতে দেখা যায় আর্জেন্টিনার সমর্থকদেরও।

খেলা যত গড়াচ্ছিল, তত উত্তেজনা বাড়ছিল। গাজোয়ারি ফুটবল খেলে আর্জেন্টিনার ছন্দ ভেঙে দিচ্ছিল কলম্বিয়া। তার মাঝেই ৭৫ মিনিটের মাথায় গোল করেন মেসির পরিবর্ত হিসাবে নামা নিকো গঞ্জালেস। কিন্তু অফসাইডে সেই গোল বাতিল হয়। ৮৭ মিনিটের মাথায় আবার একটি সুযোগ পায় আর্জেন্টিনা। এ বারও গোল হয়নি। খেলা ধীরে ধীরে টাইব্রেকারের দিকে এগোচ্ছিল।

ঠিক তখনই জাদু দেখালেন পরিবর্ত হিসাবে নামা লাউতারো মার্তিনেস। এ বারের কোপায় বার বার আর্জেন্টিনার ত্রাতা হয়ে উঠেছেন তিনি। আরও এক বার হলেন। ১১২ মিনিটের মাথায় লো সেলসোর পাস ধরে বক্সে ঢুকে গোলরক্ষককে পরাস্ত করে গোল করেন লাউতারো। তার পরে সোজা ছুটে যান মেসির দিকে। গিয়ে জড়িয়ে ধরেন। মেসিকে দেখে মনে হচ্ছিল, ধড়ে প্রাণ ফিরে পেয়েছেন তিনি।

খেলার বাকি সময় আরও মারামারি হল। বিশেষ করে গোল শোধ করার জন্য শারীরিক শক্তি ব্যবহার করছিলেন কলম্বিয়ার ফুটবলারেরা। তাতে কাজের কাজ হয়নি। লাউতারোর করা একমাত্র গোলে কোপা জিতে মাঠ ছাড়ে আর্জেন্টিনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE