নির্বাচনের আগে হঠাৎই চমক মোহনবাগানে। সোমবার সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন টুটু বসু। বিদায়ী সচিব এবং কার্যকরী সমিতির সদস্যদের চিঠি লিখে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, মনের কথা ‘নির্দ্বিধায়’ সদস্যদের কাছে বলার কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। প্রশ্ন উঠছে, পুত্র সৃঞ্জয় বসুর হয়ে প্রচার করবেন বলেই কি টুটু ইস্তফা দিলেন?
মোহনবাগানের নির্বাচনে এ বার প্রবল ভাবে লড়াইয়ে রয়েছেন সৃঞ্জয়। সাম্প্রতিক অতীতে বিভিন্ন বিষয় দেখে মনে হয়েছে, তাঁর দিকেই পাল্লা ভারী। পুত্রের সচিবপদ নিশ্চিত করতেই টুটু ইস্তফা দিলেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। তাঁর ইস্তফাপত্র পেয়ে মোহনবাগানের বিদায়ী সচিব দেবাশিস দত্ত আনন্দবাজার ডট কমকে বলেছেন, “ওঁর সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি নই। তবে ইস্তফাপত্র গ্রহণ করার ক্ষমতা আমার একার নেই। কমিটির মিটিং ডেকে বাকিদের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
এ দিন টুটু ইস্তফাপত্রে লিখেছেন, “ক্লাবের নির্বাচন যেহেতু দোরগোড়ায়, তাই সদস্যদের উদ্দেশে আমারও কিছু বলার দরকার। কোন কমিটি আসবে, তাতে থাকবেন কারা, সেটা সদস্যেরা ঠিক করবেন। কিন্তু সভাপতির চেয়ারে বসে থেকে সেই কাজ আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়। সভাপতির চেয়ার থেকে এক পক্ষের হয়ে প্রচার করা উচিত নয়। চেয়ার বা পদের অপব্যবহার করে কখনও কিছু আমি করিনি, এ বারও করব না। তাই ঠিক করেছি, মোহনবাগান ক্লাবের সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেব আমি। দয়া করে ইস্তফাপত্র গ্রহণ করবেন, যাতে আমার মন যা বলছে, তা নির্দ্বিধায় আমি প্রিয় সদস্যদের বলতে পারি।”
টুটু কোন কথা ‘নির্দ্বিধায়’ সমর্থকদের বলতে চান বা কার হয়ে প্রচার করতে চান তা সময় বলবে। তবে ক্লাবের একাংশের ধারণা, আগামী দিনে পুত্র সৃঞ্জয়ের হয়ে প্রচার করতে দেখা যেতে পারে তাঁকে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অরূপ বিশ্বাস, অরূপ রায়, অতীন ঘোষ, কুণাল ঘোষের মতো শাসকদলের মন্ত্রী-নেতারা মোহনবাগান প্রশাসনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। সেই ক্লাবের অন্দরের রাজনীতি স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে সৃঞ্জয়ের প্রত্যাবর্তনের। সঙ্গে আসছে কিছু ‘সঙ্কেত’ও। যেমন, গত ১৪ এপ্রিল কালীঘাট স্কাইওয়াকের উদ্বোধনের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঠিক পিছনেই সৃঞ্জয়ের বসে থাকা। যেমন, সৃঞ্জয় যে দৈনিকের সম্পাদক, সেখানে তৃণমূলের দৈনিক মুখপত্র মুদ্রণের কাজ আবার শুরু হওয়া, যা পক্ষান্তরে মোহনবাগানের বর্তমান সচিব দেবাশিস দত্তের পক্ষে খুব সুখবর নয়।
আইএসএল কাপ জেতার পরে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েন্কাকে আবেগতাড়িত বার্তা পাঠিয়েছিলেন সৃঞ্জয়ের বাবা তথা পদত্যাগী মোহনবাগান সভাপতি টুটু। বর্তমান ক্লাবসচিব দেবাশিসকে তিনি কোনও অভিনন্দনসূচক বার্তা পাঠিয়েছেন, এমন কোনও খবর এখনও পর্যন্ত শোনা বা দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন:
পয়লা বৈশাখে অবশ্য তাঁর ভবানীপুর ক্লাবেই বারপুজো করেছিলেন সৃঞ্জয়। কিন্তু সব কিছু পরিকল্পনামতো এগোলে পরের বছর তাঁকে মোহনবাগানে বারপুজো করতে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট। সবুজ-মেরুনের এ বারের নির্বাচনের যা গতিপ্রকৃতি, তাতে দেবাশিসকে হারিয়ে সৃঞ্জয়ের মোহন-সচিব পদে ফিরে আসা নিয়ে ক্লাবের অন্দরে খুব একটা অনিশ্চয়তা এখনও দেখা যাচ্ছে না।
সৃঞ্জয় আনন্দবাজার ডট কমকে বলেছিলেন, “আমি সারা বছর সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। সমর্থকদের সঙ্গে গ্যালারিতে বসে খেলা দেখি। এমন নয় যে, নির্বাচন আসছে বলে মাঠে নেমেছি।” বস্তুত, মোহনবাগান ক্লাবের দায়িত্বে এলে কী করবেন, সে পরিকল্পনাও করা হয়ে গিয়েছে তাঁর, “ফুটবলটা এখন সুপার জায়ান্ট দেখছে। ফলে ক্রিকেট, হকি, টেনিসের মতো খেলাগুলোর দিকে নজর দেওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। প্রাক্তন খেলোয়াড়দের জন্য অনেক কিছু করার পরিকল্পনা আছে। ক্লাবের পরিবেশ আরও উন্নত করব।”