ফুরফুরে: অনুশীলনে দিমিত্রি, কামিংস ও সাদিকু। শনিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
ডার্বি মানেই আবেগের বিস্ফোরণ। বঙ্গসমাজে অবশ্যম্ভাবী বিভাজন। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান দ্বৈরথের অমোঘ আকর্ষণ ও উন্মাদনার কাছে হার মানল এশিয়া কাপে বাইশ গজে ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচও!
শনিবার বিকেলে দেশের অধিকাংশ মানুষের চোখ যখন টেলিভিশনের পর্দায় এশিয়া কাপে বিরাট কোহলি বনাম বাবর আজ়ম দ্বৈরথে, কলকাতায় তখন সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃশ্য। যুবভারতী থেকে ময়দান— প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রিয় দলের অনুশীলন দেখতে হাজির দুই প্রধানের সমর্থকরা। ১৯ বছর আগে দিল্লিতে ডুরান্ড কাপের ফাইনালে শেষবার মুখোমুখি হয়েছিল ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান। ২-১ গোলে ট্রফি
জেতে ইস্টবেঙ্গল।
সপ্তাহ তিনেক আগে যুবভারতীতে চলতি ডুরান্ড কাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচেও জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল। টানা নবমবার মোহনবাগানের ডার্বি জয়ের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিলেন নন্দ কুমার। রবিবাসরীয় ফাইনালের আগে সবুজ-মেরুনের স্পেনীয় কোচ জুয়ান ফেরান্দো যতই দাবি করুন তাঁর কাছে এই ম্যাচ বদলার নয়, মোহনবাগান জনতা শুনবেন কেন? ডার্বি তাঁদের কাছে মর্যাদার লড়াই। ডার্বিতে হার মানেই সব কিছু পেয়েও সর্বহারা হওয়ার যন্ত্রণা। লক্ষ লক্ষ সবুজ-মেরুন জনতার এই আবেগ ছুঁয়ে গিয়েছে জেসন কামিংস, দিমিত্রি পেত্রাতস, আর্মান্দো সাদিকু, হুগো বুমোসের মতো বিদেশিদেরও। সমর্থকদের সুরে গলা মিলিয়ে তাঁরাও শপথ নিচ্ছেন বদলার।
শনিবার সন্ধেয় অনুশীলন শেষ করে মাঠ থেকে বেরিয়ে দিমিত্রি যে ভাবে সমর্থকদের দেখে মুষ্টিবদ্ধ ডান হাত তুলে ‘জয় মোহনবাগান’ বললেন, বোঝা যাচ্ছিল মরসুমের প্রথম ডার্বিতে হারের যন্ত্রণা প্রতি মুহূর্তে ক্ষতবিক্ষত করছে তাঁকে। ব্যতিক্রম নন জেসন, সাদিকু এবং বুমোসও। বলেছিলেন, ‘‘এ বার জিততেই হবে। আমরাই চ্যাম্পিয়ন হব।’’
ফুটবলারদের হুঙ্কারে চমকে গিয়েছেন জুয়ানও। কিন্তু পেশাদারিত্বের বর্মে নিজেকে ঢেকে শনিবার সকালে যুবভারতীতে সাংবাদিক বৈঠকে সবুজ-মেরুনের স্পেনীয় কোচ বললেন, ‘‘অতীত নিয়ে ভাবছি না। প্রতিটি ম্যাচই কঠিন। আমরা এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বে পৌঁছেছি। ডুরান্ড কাপের ফাইনালে উঠেছি। রবিবার সেরা ফুটবল উপহার দেওয়া চেষ্টাই করব।’’
এর পরেই যোগ করলেন, ‘‘ডুরান্ড কাপ আমাদের কাছে প্রাক-মরশুম প্রস্তুতির অঙ্গ। কিন্তু পরপর ম্যাচ হওয়ায় আমরা তো ঠিক মতো প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগই পাইনি। গত ১০ দিনে চারটে ম্যাচ খেলতে হয়েছে। ফুটবলারদের ক্লান্তি দূর করতেই তো সময় চলে যাচ্ছে। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য যদি ঠিক মতো অনুশীলনই করতে না পারি, উন্নতি করা সম্ভব নয়। তবে আমি কোনও অজুহাত দিতে চাই না। এই পরিস্থিতিতে খেলা খুব কঠিন।’’
একই মত লা লিগায় খেলা স্পেনীয় ডিফেন্ডার হেক্তর ইউতসের। মরসুমের প্রথম ডার্বিতে তিনি ছিলেন না। রবিবার তাঁর উপরেই নন্দ, ক্লেটন সিলভাদের আটকানোর দায়িত্ব থাকবে। চিন্তিত হেক্তর বললেন, ‘‘ডার্বির বিষয়ে শুনেছি। খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠিন ম্যাচ। শারীরিকভাবে আমরা ১০০ শতাংশ ফিট নই। কিন্তু মানসিক ভাবে তৈরি।’’ সতীর্থ আনোয়ার আলির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে যোগ করলেন, ‘‘আনোয়ারের খেলা দেখে চমকে গিয়েছি। ও অসাধারণ। সাহালও দুর্দান্ত।’’
ফুটবলারদের ক্লান্তি নিয়ে যে জুয়ান উদ্বিগ্ন, শনিবার বিকেলেই বোঝা গিয়েছে। মিনিট দশেক দুই প্রান্ত দিয়ে আক্রমণের মহড়া দেওয়ার পরেই তিনি টাইব্রেকার অনুশীলন করাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। এর কারণ দু’টি— এক) বৃষ্টিতে ভেজা মাঠে ম্যাচ অনুশীলন করলে ফুটবলারদের আঘাত লাগার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তা ছাড়া পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। দুই) ইস্টবেঙ্গল কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত আগের ডার্বিতেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, রক্ষণ শক্তিশালী করে প্রতিআক্রমণ নির্ভর খেলাই তাঁর রণনীতি। ফলে টাইব্রেকারে ম্যাচ গড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ফাইনাল যদি টাইব্রেকারে গড়ায়, তার জন্য জেসনরা কতটা তৈরি পরীক্ষা করে নিলেন জুয়ান।
সবুজ-মেরুন কোচকে একবারই একটু আক্রমণাত্মক দেখাল রেফারিং নিয়ে প্রশ্ন ওঠায়। কুয়াদ্রাত বিদেশি রেফারির পক্ষে সওয়াল করলেও জুয়ান বলে দিলেন, ‘‘কোচ হিসেবে আমার কাজ নিজের দলের খেয়াল রাখা। রেফারিং নিয়ে কথা বলে নিজের শক্তির অপচয় করতে চাই না। আমরা ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি চাই। তাই ভারতের রেফারিদের আরও বেশি করে তুলে আনতে হবে। প্রয়োজন আরও বেশি অ্যাকাডেমি তৈরি করার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy