Advertisement
০৫ অক্টোবর ২০২৪
UEFA Euro 2024

ইউরো কাপে আর নেই রোনাল্ডো, টাইব্রেকারে পর্তুগালকে হারিয়ে সেমিতে এমবাপের ফ্রান্স

নির্বিষ ফুটবলে ১২০ মিনিটেও কোনও গোল হল না। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে পর্তুগালকে হারিয়ে ইউরো কাপের সেমিফাইনালে উঠে গেল ফ্রান্স। এ বারের মতো ইউরো কাপ শেষ হয়ে গেল ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর।

football

ইউরো থেকে বিদায় নিয়ে হতাশ রোনাল্ডো। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৪ ০৩:১৪
Share: Save:

পর্তুগাল ০ — ফ্রান্স ০
(টাইব্রেকারে ফ্রান্স ৫-৩ ব্যবধানে জয়ী)

নির্বিষ ফুটবলে ১২০ মিনিটেও কোনও গোল হল না। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে পর্তুগালকে ৫-৩ ব্যবধানে হারিয়ে ইউরো কাপের সেমিফাইনালে উঠে গেল ফ্রান্স। এ বারের মতো ইউরো কাপ শেষ হয়ে গেল ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর। হয়তো আর ইউরো কাপে দেখাই যাবে না তাঁকে। আগের ম্যাচে তিনটি পেনাল্টি বাঁচিয়ে নায়ক হয়েছিলেন দিয়োগো কোস্তা। এ দিন পাঁচটি শটের একটিও বাঁচাতে পারলেন না তিনি। উল্টে টাইব্রেকারে পোস্টে শট মেরে পর্তুগালের খলনায়ক জোয়াও ফেলিক্স। সেমিফাইনালে ফ্রান্স খেলবে স্পেনের বিরুদ্ধে।

গোটা ম্যাচে খুঁজেই পাওয়া গেল না ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে। একই রকম নিষ্প্রভ থাকলেন কিলিয়ান এমবাপেও। আদর্শ বনাম শিষ্যের দ্বৈরথ এই ম্যাচে আলোচ্য বিষয় ছিল। দু’জনেই একই রকম খেললেন। মন ভরাতে পারলেন না কেউই। এমবাপের অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধের পর তাঁকে তুলে নিলেন কোচ দিদিয়ের দেশঁ। ফলে টাইব্রেকারে শট মারা হল না এমবাপের। তবে টাইব্রেকারের সময়ে সতীর্থদের গোলে উল্লাস করলেন বার বার। আগের ম্যাচে পেনাল্টি নষ্ট করে কেঁদেছিলেন রোনাল্ডো। কিন্তু টাইব্রেকারে গোল করেছিলেন। এ দিনও টাইব্রেকারে গোল করলেন। কিন্তু দলের বিদায়ের পর পাথরের মতো মুখ করে থাকতে দেখা গেল। চোখ দিয়ে জল পড়ল না। আগের ম্যাচের পর রোনাল্ডোর কথা ধরলে, এটাই তাঁর শেষ ইউরো। সেই যাত্রা কোয়ার্টার ফাইনালেই শেষ হয়ে গেল।

ম্যাচের শুরু থেকে বল নিজেদের পায়ে রেখে আক্রমণে উঠছিল ফ্রান্স। শুরুর কয়েক মিনিট পর্তুগালকে দাঁড়াতে দেয়নি তারা। রবার্তো মার্তিনেসের দল ব্যস্ত ছিল বল ক্লিয়ার করতেই। ধীরে ধীরে খেলায় দখল নিতে শুরু করে পর্তুগাল। তবে ফ্রান্সের মতো আক্রমণে ওঠার বদলে তারা নিজেদের মধ্যে পাস খেলে খেলার গতি কমিয়ে দেয়।

মাঝমাঠের দখল নিতে এ দিন অরেলিয়েঁ চুয়ামেনি এবং এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গাকে একসঙ্গে নামিয়ে দিয়েছিলেন ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশঁ। দু’জনেই অবশ্য প্রথমার্ধে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারেননি। অন্য দিকে, পর্তুগালের বেশির ভাগ আক্রমণ হতে থাকে বাঁ দিক দিয়ে। সে দিক দিয়ে খেলছিলেন রাফায়েল লিয়াও। কিন্তু আগের ম্যাচগুলিতেও দেখা গিয়েছে লিয়াওয়ের বল ধরে রাখার প্রবণতা। এ দিনও তার অন্যথা হয়নি। পাশাপাশি তাঁর ক্রস বা পাস কোনওটিতেই নিয়ন্ত্রণ ছিল না। ফলে পর্তুগালের কাছে বলার মতো কোনও আক্রমণ তৈরি হচ্ছিল না।

ফ্রান্সের আক্রমণ তুলনামূলক ভাবে ভাল হচ্ছিল। তারা অনেক বেশি ‘ডিরেক্ট’ ফুটবল খেলছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে গিয়ে তাদের সব আক্রমণ তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছিল। পর্তুগালের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছিল একই জিনিস। কিছুতেই আক্রমণ দানা বাঁধছিল না। রোনাল্ডো ফরোয়ার্ডে মাঝখানে খেলছিলেন। সতীর্থদের থেকে বল পাচ্ছিলেন প্রয়োজন মতো। এই রোনাল্ডো এখন আগের মতো নীচে নেমে বল কেড়ে নিতে পারেন না। ফলে তাঁকে অপেক্ষা করতে হচ্ছিল কখন বল আসে। সেই বল আসছিল না কিছুতেই। প্রথমার্ধের শেষের দিকে বক্সের একটু বাইরে ফ্রিকিক পেয়েছিল পর্তুগাল। রোনাল্ডো তৈরি হয়ে দাঁড়ালেও ফ্রিকিক নেন ব্রুনো ফের্নান্দেস। বারের উপর দিয়ে বল বেরিয়ে যায়।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আচমকা চোট পান এমবাপে। পর্তুগালের এক ফুটবলারের হেড লাগে তাঁর মাথার পাশে। ফেস গার্ড খুলে ফেলে বার বার নাকে হাত বোলাতে থাকেন। অনেকেই আশঙ্কিত হয়েছিলেন এই ভেবে যে, পুরনো জায়গায় চোট লাগল কি না। তবে কিছু ক্ষণের মধ্যেই আবার ফেস গার্ড পরে মাঠে নামতে দেখা যায়। ৫৯ মিনিটের মাথায় ভাল জায়গায় বল পেয়েও সোজা গোলকিপারের দিকে মারেন ব্রুনো। ফিরতি বলে সুযোগ নষ্ট করেন জোয়াও ক্যানসেলো।

৬৪ থেকে ৭০ মিনিটের মধ্যে দুই দলের কাছেই গোল করার সুযোগ এসেছিল। প্রথম মিস্‌ করে পর্তুগাল। ভিটিনহার শট বাঁচিয়ে দেন ফ্রান্সের গোলকিপার মাইক মাইগনান। দু’মিনিট পরে বিশ্বকাপের ধাঁচে মিস্‌ করেন কোলো মুয়ানি। পিছন থেকে ভেসে আসা বলে শট নিয়েছিলেন। বিশ্বকাপ ফাইনালে তা বাঁচিয়েছিলেন এমিলিয়ানো মার্তিনেস। এ বার পর্তুগালকে বাঁচায় রুবেন দিয়াসের পা। মিনিট চারেক পরে ওসমানে দেম্বেলে দু’ফুট দূরে একা গোলকিপারকে পেলেও বাইরে মারেন। অতিরিক্ত সময়ের শুরুর দিকে রোনাল্ডো একটি সহজ সুযোগ নষ্ট করেন। বক্সের মধ্যে অরক্ষিত অবস্থায় থাকলেও বারের উপর দিয়ে বল উড়িয়ে দেন।

অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হওয়ার আগে অনেকেই চমকে যান। এমবাপেকে তুলে নেন দেশঁ। রিজ়‌ার্ভ বেঞ্চে বসে নাকে বরফ লাগাচ্ছিলেন এমবাপে। তাঁর জায়গায় নামানো হয় বারকোলাকে। সেই অর্ধেও নির্বিষ খেলা হচ্ছিল। শেষ দিক একটি ভাল বল পেয়েছিলেন কনসেসাও। কিন্তু বেশি সময় নেওয়ার কারণে পাস ঠিকঠাক হয়নি। নুনো মেন্দেসের শট বাঁচিয়ে দেন মাইগনান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE