পেনাল্টি নষ্টের পর হতাশ রোনাল্ডো (বাঁ দিকে) এবং মেসি। ছবি: রয়টার্স।
১ জুলাই ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। ৪ জুলাই লিয়োনেল মেসি।
মাঝে মাত্র তিন দিনের ব্যবধান। দুই তারকা ফুটবলার মহাদেশীয় প্রতিযোগিতায় ব্যর্থতার কারণে শিরোনামে চলে এলেন। ইউরো কাপের প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে স্লোভেনিয়ার বিরুদ্ধে পেনাল্টি নষ্ট করে কাঁদতে দেখা গিয়েছিল রোনাল্ডোকে। ২০ মিনিট পরে টাইব্রেকারে গোল করে শাপমোচন করেছিলেন তিনি। আর শুক্রবার ভোরে মেসিকে টাইব্রেকার মিস্ করতে দেখা গেল। তিনি অবশ্য কাঁদেননি। তবে সেই মুহূর্তে মুখ দেখে বোঝা গিয়েছে, তিনি কতটা হতাশ হয়েছিলেন।
দু’টি ম্যাচেই একটি জিনিসের মিল রয়েছে। তা হল, গোলকিপারদের নায়ক হয়ে যাওয়া। পর্তুগাল ম্যাচে সেভের হ্যাটট্রিক করে দিয়োগো কোস্তা নায়ক হলেন, আর্জেন্টিনার সম্মান বাঁচালেন এমিলিয়ানো মার্তিনেস। তবে গোলকিপারদের কৃতিত্ব নয়, আলোচনায় এসেছে রোনাল্ডো-মেসির ব্যর্থতা। ৩৯ বছরের রোনাল্ডো এবং ৩৭ বছরের মেসির সামনে আর বেশি দিন পড়ে নেই। রোনাল্ডো আগেই বলে দিয়েছেন, এটা তাঁর শেষ ইউরো কাপ। মেসি জানাননি যে শেষ কোপা খেলতে নেমেছেন কি না। তবে ইঙ্গিত সে দিকেই। প্রশ্ন উঠছে, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পড়ার কারণেই কি এ ভাবে ব্যর্থতার শিকার হচ্ছেন?
কাতার বিশ্বকাপে পর্তুগালের তৎকালীন কোচ ফের্নান্দো সান্তোসকে সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে দেখা গিয়েছিল। নকআউট ম্যাচগুলিতে তিনি বসিয়ে দিয়েছিলেন দলের সেরা ফুটবলার রোনাল্ডোকেই। তবে নতুন কোচ রবার্তো মার্তিনেসের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। তাঁর দলে রোনাল্ডোই চালিকাশক্তি। তিনি তারুণ্যে জোর দেন। আবার অভিজ্ঞতাতেও ভরসা রাখতে চান। তবে রোনাল্ডোকে রাখার মূল্যও চোকাতে হচ্ছে।
৩৯ বছরের রোনাল্ডো যে আগের রোনাল্ডো নেই, তা বোঝা গিয়েছে প্রতিটি ম্যাচেই। নড়াচড়া, ফ্রিকিক, ড্রিব্ল, পাসিং— সবেতেই সেই খামতি লক্ষ করা গিয়েছে। অভিজ্ঞতার দিক থেকে রোনাল্ডো আরও সমৃদ্ধ হয়েছেন। কিন্তু শরীর তাঁকে যে সঙ্গ দিচ্ছে না এটা স্পষ্ট। এ বারের ইউরোয় এখনও রোনাল্ডো একটি গোলও করতে পারেননি।
মেসিও রোনাল্ডোর মতো একটিও গোল করতে পারেননি। তাঁর দলের কাছে পেনাল্টির সুযোগও আসেনি। পর্তুগালে যেমন রোনাল্ডোর অভাব ঢেকে দিচ্ছেন ব্রুনো ফের্নান্দেস, বের্নার্দো সিলভা, ফ্রান্সিসকো কনসেসাওরা, তেমনই আর্জেন্টিনাতেও মেসিকে বাঁচাচ্ছেন রদ্রিগো দে পল, লিসান্দ্রো মার্তিনেস, লাউতারো মার্তিনেসরা। রোনাল্ডোর থেকে মেসি এখনও বেশি ক্ষুরধার ঠিকই। কিন্তু বয়সের ছাপ লক্ষ করা যাচ্ছে তাঁর খেলাতেও।
বয়সের কারণে যে রোনাল্ডো, মেসি পেনাল্টি মিস্ করছেন, এটা মানতেই চাইলেন না প্রাক্তন ফুটবলার গৌতম সরকার। তাঁর কথায়, “একদমই বাজে কথা। যে কেউ পেনাল্টি মিস্ করতে পারে। রোনাল্ডো, মেসি পেনাল্টি থেকে গোল করলে এত আলোচনা হয় না কেন? অভিজ্ঞতা বাড়লে বরং আরও ভাল করে পেনাল্টি মারা যায়। একটা দিন খারাপ যেতেই পারে। তা বলে রোজ রোজ তো পেনাল্টি মিস্ করবে না। এ ধরনের খেলায় চাপ থাকে মানছি। কিন্তু ওদের মানসিকতা এমনই যে এই চাপ অনায়াসে সামলে দিতে পারে।”
একই কথা শোনা গেল মেহতাব হোসেনের কথাতেও। দুই প্রধানে খেলা ফুটবলার আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছেন, “যত অভিজ্ঞতা বাড়ে, তত ফুটবলারেরা আরও ভাল পেনাল্টি মারে। ওরা কিংবদন্তি ফুটবলার। এই প্রজন্মের সেরা। দীর্ঘ দিন ধরে পৃথিবীর সেরা। পেনাল্টি মিস্ করলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এক-আধ দিন খারাপ যেতেই পারে। পরের দিন সুযোগ পেলে গোল করবেই।”
যে দুই ফুটবলার এক দশকেরও বেশি সময় দাপিয়েছেন ইউরোপীয় ফুটবলে, তাঁরাই গত এক-দেড় বছর ধরে প্রথম সারির সেই ফুটবল থেকে দূরে। গত বছরের শুরুর দিকেই ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড ছেড়ে সৌদি আরবের আল নাসেরে যোগ দিয়েছিলেন রোনাল্ডো। তার কয়েক মাস পরে প্যারিস সঁ জরমঁ ছেড়ে মেসি যোগ দিয়েছিলেন আমেরিকার ইন্টার মায়ামিতে। এই দুই দেশের ফুটবলের মান যে ইউরোপের তুলনায় অনেকটাই কম, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই কি দু’জনের খেলায় ক্ষিপ্রতা কমে গিয়েছে?
মেহতাব মানতে চাইলেন না। বললেন, “ওরা যে মানের খেলোয়াড়, তাতে যে কোনও লিগে গিয়েই তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। ওরা সব ধরনের ফুটবলের সঙ্গে অভ্যস্ত। ইউরোপে খেলে না মানে ইউরোপের ফুটবলের সম্পর্কে ধারণা নেই, ব্যাপারটা এমন নয়।”
সমর্থকেরা এই দুই ফুটবলারের পাশে রয়েছেন। বিশেষজ্ঞেরাও। রোনাল্ডো, মেসি ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠে আগামী দিনে জবাব দিতে পারবেন কি না, সেটাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy