Advertisement
E-Paper

৬০ হাজারের যুবভারতীতে দেশের জার্সিতে শেষ ম্যাচ খেলে ফেললেন সুনীল, ড্র করে লড়াই কঠিন ভারতের

যুবভারতী স্টেডিয়ামে দলকে জিতিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানাতে পারলেন না সুনীল ছেত্রী। কুয়েতের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের ম্যাচ ড্র হল।

football

সুনীল ছেত্রী। ছবি: পিটিআই।

অভীক রায়

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২৪ ২১:০২
Share
Save

ভারত ০
কুয়েত ০

দেশের জার্সিতে জিতে মাথা উঁচু করে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানাতে পারলেন না সুনীল ছেত্রী। বৃহস্পতিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে কুয়েতের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে নিজেদের অবস্থান কঠিন করে ফেলল ভারত। ঘরের মাঠে ৬০ হাজার সমর্থককে পেয়েও জিততে পারল না। অবস্থা যা, তাতে খাতায়-কলমে টিকে থাকলেও বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে ভারতের তৃতীয় রাউন্ডে ওঠার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

গ্রুপ এ-তে সবার উপরে রয়েছে কাতার। তাদের ৪ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট। দ্বিতীয় স্থানে ৫ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে রয়েছে ভারত। ৫ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে কুয়েত উঠে এল তৃতীয় স্থানে। আফগানিস্তানের ৪ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট। বৃহস্পতিবার রাতের ম্যাচে কাতারের বিরুদ্ধে খেলা রয়েছে আফগানিস্তানের। সেই ম্যাচে আফগানিস্তান হারবে বলেই ধরে নেওয়া যায়। তারা ৪ পয়েন্টেই থাকবে সে ক্ষেত্রে। ষষ্ঠ তথা শেষ রাউন্ডে কুয়েত খেলবে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে। সেখানেও সমস্যা। কারণ ম্যাচটি ড্র হলে, গোলপার্থক্য ভাল হওয়ার কারণে কুয়েত দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসে ভারতকে ছিটকে দেবে। তাই ভারতের কাছে একটাই রাস্তা, অ্যাওয়ে ম্যাচে কাতারকে হারানো। দোহায় গিয়ে ভারত গত বারের বিশ্বকাপের আয়োজক দেশকে হারিয়ে দেবে, এটা অতি বড় ফুটবলপ্রেমীর পক্ষেও কল্পনা করা কঠিন। ফলে খাতায়-কলমে ভারত টিকে থাকলেও, কার্যত তারা ছিটকে যাওয়ার দিকেই এক পা বাড়িয়ে রেখেছে।

বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই যুবভারতীর আশপাশ ভরতে শুরু করে দিয়েছিল। সুনীলের শেষ ম্যাচ দেখার সুযোগ ছাড়তে চাননি কেউই। গ্যালারিতেও চাঁদের হাঁট। সুনীলের স্ত্রী সোনম ভট্টাচার্য, ছেলে ধ্রুব, বাবা খড়্গ ছেত্রী এবং মা সুশীলা এসেছিলেনই। প্রাক্তন ফুটবলারদের মধ্যে আলভিটো ডি’কুনহা, আইএম বিজয়নেরা ছিলেন। ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন আর এক প্রাক্তনী রবিন সিংহ। সঙ্গে যুবভারতীর প্রায় ষাট হাজার সমর্থক তো ছিলেনই। এত কিছুর পরেও দিনের শেষে মুখে হাসি ফুটল না কারওরই।

আরও একটি প্রশ্ন উঠছে। গোটা ম্যাচটিই কি বড্ড বেশি সুনীলময় হয়ে উঠেছিল? দেশের জার্সিতে খেলা অন্যতম সেরা ফুটবলারের অবসর উপলক্ষে যে আয়োজন, যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল, তাতে কি ম্যাচের উপর থেকে ফোকাস নড়ে গিয়েছিল? না হলের মাঠের পারফরম্যান্স এতটা খারাপ হবে কেন?

দেশের জার্সিতে এ দিন শেষ ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন শুধু সুনীলই। কিন্তু সতীর্থেরা কি তাঁকে জেতানোর জন্য নেমেছিলেন? ম্যাচের ফলাফল দেখে প্রশ্ন উঠতেই পারে। ৯০ মিনিট জুড়ে ভারতের ফুটবলারেরা যে হতশ্রী খেলা খেললেন, তা কল্পনা করাও কঠিন। কুয়েতের মতো দেশ বলে ম্যাচটা ড্র করতে পারল ভারত। অন্য কোনও দেশ হলে নিশ্চিত ভাবে অন্তত তিনটি গোল দিত। ভারতের গোলে গুরপ্রীত সিংহ সান্ধু ভাল না খেললে তিন গোল খেতে পারত ভারত। সেখানে নিজেদের গোলের সুযোগ বলতে দু’টি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে রহিম আলি ও-ই মিস্‌ না করলে হয়তো তিন পয়েন্ট আসত ভারতের ঘরেই।

এ দিন চার মিনিটের মাথাতেই সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল কুয়েত। ভারতের একটি আক্রমণের সময় আচমকাই বল ক্লিয়ার করে দেয় তারা। সেখান থেকে বল পান মহম্মদ আবদুল্লাহ। ভারতীয় ডিফেন্ডারদের এড়িয়ে উঠে যান বক্সে। সামনে একা গুরপ্রীত ছিলেন। কোনও মতে পা দিয়ে তিনি শটটি বাঁচিয়ে দেন।

৯ মিনিটের মাথায় আবার আক্রমণ করে কুয়েত। এ বার মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে গিয়েছিলেন আবদুল্লাহ। হেডে বল রিসিভ করে ক্রস করতে গিয়েছিলেন অধিনায়ক ইউসেফ আলসুলেমানের উদ্দেশে। তার আগেই গুরপ্রীত হাত বাড়িয়ে সেই বল ধরে নেন। পরের মুহূর্তে আবারও একটি সুযোগ নষ্ট করে কুয়েত।

ভারত প্রথম সুযোগ পায় ১১ মিনিটে। জয় পাস বাড়িয়েছিলেন লিস্টন কোলাসোর উদ্দেশে। লিস্টন বল নিয়ে কুয়েতের বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন। সেখান থেকে ডিফেন্ডারকে এড়িয়ে ক্রসও রেখেছিলেন। তবে সুনীল সেই বলে পা লাগানোর আগেই বিপন্মুক্ত হয়ে যায়। অনিরুদ্ধ থাপার কর্নারে সজোরে হেড করেন আনোয়ার আলি। অল্পের জন্য সেটি বারের উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। কিছু ক্ষণ পরে নিখিল পূজারির একটি ক্রস থেকে সুযোগ এলেও কাজে লাগাতে পারেনি ভারত।

এর পর বেশ কিছু ক্ষণের জন্য ম্যাচ নিজেদের দখলে নিয়ে নেয় কুয়েত। তাদের ফুটবলারেরা অনেক বেশি পাস খেলছিলেন নিজেদের মধ্যে। খুব কম পাসই ভুল হচ্ছিল। ছোট ছোট পাস খেলে আক্রমণে উঠছিলেন কুয়েতের ফুটবলারেরা। সেখানে ভারতীয়দের অপেক্ষা করে থাকতে হচ্ছিল কখন কুয়েত ভুল পাস দেবে তার উপরে। সুনীল একা বেশ কিছু ক্ষণ বল কাড়ার জন্য দৌড়েছিলেন। সুবিধা করতে পারেননি।

২৪ মিনিটের মাথায় সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল কুয়েত। একটি থ্রো থেকে শুরু হয়েছিল তাদের আক্রমণ। সেখান থেকে আলসুলেমান পাস দেন ইদ আলরশিদিকে। গুরপ্রীতকে অনেকটা এগিয়ে আসতে দেখে তাঁর মাথার উপর দিয়ে বল তুলে দিয়েছিলেন আলরশিদি। তা অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পরের মুহূর্তেই প্রতি আক্রমণে ওঠে ভারত। বাঁ দিক থেকে জয় ক্রস করেছিলেন সাহালের উদ্দেশে। তার আগেই বল ক্লিয়ার করে দেন কুয়েতের এক ডিফেন্ডার। আর একটু এদিক-ওদিক হলে সেটি আত্মঘাতী গোলও হতে পারত। সেই কর্নার থেকে আনোয়ারের একটি হেড বাঁচিয়ে দেন কুয়েতের গোলকিপার সুলেমান আব্দুলঘাফুর।

এর পরে প্রথমার্ধের বাকি সময়ে ভারতের খেলা দেখে মনে হয়নি এই ম্যাচ তারা জেতার জন্য নেমেছে। না ছিল খেলায় সেই আগ্রাসন, না ছিল তৎপরতা। অসংখ্য মিস্ পাস এবং নিয়ন্ত্রণহীন ফুটবল দেখে সমর্থকেরাও বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিলেন। মাঝমাঠে অনিরুদ্ধ এবং সাহালের খেলা চোখে দেখা যাচ্ছিল না। মোহনবাগানের হয়ে আইএসএলে যে ফর্মে তাঁদের দেখা গিয়েছে, তার ধারেকাছেও ছিলেন না। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হয়ে প্লে-মেকার হিসাবে যে ভূমিকা নেওয়ার কথা, সেটাও ছিল না তাঁদের।

সেটা স্তিমাচও বুঝতে পেরেছিলেন। বিরতিতে দু’জনকেই তুলে নিলেন। নামালেন ব্রেন্ডন ফার্নান্দেসকে। সঙ্গে ফরোয়ার্ডে সুনীলের সঙ্গে জুড়ে দিলেন রহিম আলিকে। সেই রহিম শুরুতেই যে সুযোগ মিস্‌ করলেন, সেখানেই ভারত ম্যাচটা শেষ করে দিতে পারত। মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে সামনে একা গোলকিপারকে পেয়েছিলেন। ধারেকাছে কেউ ছিল না। সেখানে সময় নিয়ে ডিফেন্ডারদের আরও কাছে চলে আসতে তো দিলেনই, তার উপর শটেও কোনও জোর ছিল না। অনায়াসে ডান হাত বাড়িয়ে তা বাঁচিয়ে দেন কুয়েত গোলকিপার। মাথার উপর দিয়ে বল রাখলেই নিশ্চিত গোল ছিল সেটি।

দু’দলের খেলোয়াড়দের মধ্যেই এর পর কিছুটা মন্থরতা লক্ষ করা যায়। পাস, আক্রমণ হচ্ছিল বটে। কিন্তু এমন কোনও আক্রমণ মনে রাখার মতো হয়নি যা থেকে গোল হয়। ভারতের মধ্যে মিস্‌ পাসের ধারা অব্যাহত ছিল। রহিম এবং ব্রেন্ডন কাউকেই কার্যকরী মনে হয়নি। ক্লাবের জার্সিতে যাঁরা এত ভাল খেলেন, দেশের জার্সিতে কেন এত নিষ্প্রভ তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। বল নিয়ে এগিয়ে গিয়ে ভারতের বাকি ফুটবলারেরা শুধু সুনীলকে লক্ষ্য করে ক্রস বা পাস দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। উল্টে গুরপ্রীত এমন কয়েকটি সেভ করলেন যা না হলে ম্যাচটা হেরে যেত ভারত।

সব শেষে কোচ স্তিমাচেরও নিজের পর্যালোচনা করা উচিত। তৃতীয় রাউন্ডে উঠলে তাঁর চাকরি থাকত। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি, তাতে সুনীলের পাশাপাশি স্তিমাচও নিজের বিদায়ের দিন গুণতে শুরু করে দিতে পারেন। কোচ হিসাবে না আছে তাঁর কোনও প্ল্যান বি, না ফুটবলারদের সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারার মতো ক্ষমতা। তিনি বরাবর বেশি সময়ের জাতীয় শিবিরের ধুয়ো তোলেন। ২৫ দিন জাতীয় শিবির করার পর তাঁর ফুটবলারেরা যদি এমন খেলেন, তাতে জিততে কত দিন লাগবে সেটাই প্রশ্ন ফুটবলপ্রেমীদের।

Sunil Chhetri Indian Football FIFA World Cup Qualifier

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।