লক্ষ্য: আপোলন লেডিসের হয়ে খেলার অপেক্ষায় মনীষা। টুইটার
ভারতের প্রথম মহিলা ফুটবলার হিসেবে নজির গড়ার পথে মনীষা কল্যাণ। সাইপ্রাসের আপোলন লেডিসের হয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অভিষেকের অপেক্ষায় ভারতীয় ফুটবল দলের নতুন তারা।
স্কটল্যান্ডের বিখ্যাত রেঞ্জার্স এফসিতে তিন বছর আগে বালা দেবী যখন সই করেছিলেন, আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল। তাঁর আগে ভারতের কেউ ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার সুযোগ পাননি। ২০ বছরের মনীষা ছাপিয়ে গেলেন বালা দেবীকেও। দু’বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হলেন সাইপ্রাসের লিগ চ্যাম্পিয়ন ক্লাব আপোলনের সঙ্গে। প্রতিশ্রুতিমান এই ফুটবলারের উত্থানের পথ কিন্তু একেবারেই মসৃণ ছিল না।
পঞ্জাবের হোসিয়ারপুর জেলার মুগোওয়াল গ্রামে জন্ম মনীষার। ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলতেন বলে গ্রামবাসীদের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিলেন। জারি হয়েছিল ফুটবল না খেলার ফতোয়াও। দিনের পর দিন কটাক্ষের শিকার হতে হয়েছিল মনীষার পরিবারকে। কিন্তু হার মানেননি তিনি। অপমানের যন্ত্রণা নিয়েই স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে গিয়েছিলেন। পাশে পেয়েছিলেন বাবা ও মাকে।
মনীষার ফুটবলার হয়ে ওঠার কাহিনিও কম আকর্ষণীয় নয়। শৈশবে স্বপ্ন ছিল অ্যাথলিট হওয়ার। ১০০ ও ২০০ মিটার দৌড়তেন। পাশাপাশি বাস্কেটবলও খেলতেন। কিন্তু অষ্টম শ্রেণীতে ওঠার পরেই বদলে যায় তাঁর জীবনের লক্ষ্য। স্কুলের শারীরশিক্ষার শিক্ষক ছিলেন প্রাক্তন ফুটবলার। তিনি কিছুটা জোর করেই মনীষাকে জেলা ফুটবল দলের ট্রায়ালে নিয়ে গিয়েছিলেন। অসাধারণ খেলে জেলা দলে নির্বাচিত হয়ে এত আনন্দ হয়েছিল তাঁর যে, মাঠে দাঁড়িয়েই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন ফুটবলার হওয়ার।
কিন্তু মনীষা খেলবেন কার সঙ্গে? গ্রামের কোনও মেয়েই যে ফুটবল খেলে না। তাই ছেলেদের সঙ্গেই শুরু করলেন খেলা। শৈশবের প্রসঙ্গ উঠলেই মনীষা বলেন, ‘‘গ্রামে ছেলেদের সঙ্গে একমাত্রই আমিই খেলতাম। আর কোনও মেয়ে ফুটবল খেলত না। আমার খেলা নিয়েই গ্রামবাসীদের প্রবল আপত্তি ছিল। ওঁরা আমার বাবা-মায়ের কাছে নালিশও করতেন নিয়মিত। বলতেন, ছেলেদের সঙ্গে একা একটি মেয়ের ফুটবল খেলা ঠিক নয়। তোমরা ওকে বারণ করো। ও যদি খেলা চালিয়ে যায়, তা হলে কিন্তু কোনও দিন বিয়ে দিতে পারবে না।’’ যোগ করেন, ‘‘রাস্তায় বেরোলেই আমাকে নানা রকম কটূক্তি শুনতে হয়েছে দিনের পর দিন। প্রচণ্ড রাগ হত। কষ্ট হত। সেই সময় বাবা ও মা উৎসাহ দিতেন। ওদের জন্যই মনের জোর বেড়ে গিয়েছিল। প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, ফুটবল খেলেই সব অপমানেরজবাব দেব।’’
শুরু হল মনীষার জীবনের নতুন অধ্যায়। উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য গ্রামের স্কুল ছাড়েন তিনি। বাড়ি থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে নতুন স্কুলে প্রত্যেক দিন সাইকেল চালিয়ে যেতেন। অল্প দিনের মধ্যেই নজর কেড়ে নেন। ডাক পান কেঙ্কেরে এফসি ও সেতু এফসিতে। সেখান থেকে অনূর্ধ্ব-১৭ ভারতীয় দলে। স্বপ্ন দেখতেন সিনিয়র জাতীয় দলের হয়ে খেলার। গত বছরের ডিসেম্বরে চার দেশীয় প্রতিযোগিতায় ব্রাজিলের বিরুদ্ধে গোল করে আলোড়ন ফেলে দেন রোনাল্ডিনহোর ভক্ত মনীষা। যাঁরা এক সময় মনীষার ফুটবল খেলা বন্ধ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন, তাঁরাই সে দিন ভিড় করেছিলেন মনীষার গ্রামের বাড়িতে। অভিনন্দন জানিয়েছিলেন ভারতীয় ফুটবলের নতুন তারার বাবা-মাকে! রবিবার সন্ধ্যাতেও একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি দেখলেন মুগোয়ালগ্রামের বাসিন্দারা।
মনীষার সাফল্যে উচ্ছ্বসিত বালা দেবীও। অস্ত্রোপচারের পরে এই মুহূর্তে তিনি বেঙ্গালুরুতে রয়েছেন রিহ্যাবের জন্য। বলছিলেন, ‘‘মনীষার জন্য গর্ব হচ্ছে। আগে কেউ বিশ্বাসই করত না যে, আমাদেরও বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার যোগ্যতা রয়েছে।’’ যোগ করেন, ‘‘মনীষা ডাক পেয়েছে সাইপ্রাসের ক্লাব আপোলন লেডিসে। ডাংমেই গ্রেসের সঙ্গে চুক্তি করেছে উজ়বেকিস্তানের এফসি নাসাফ। ভবিষ্যতে ভারতের আরও অনেক মেয়ে-ই বিদেশের ক্লাবে খেলবে।’’
অনুজ মনীষার সাফল্য বালা দেবীকেও উজ্জীবিত করছে ফের বিদেশে খেলার জন্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy