Advertisement
E-Paper

Krishanu Dey: ও থাকলে ইস্টবেঙ্গলে এখন এত ঝামেলা হত না, কৃশানুর ৬০-তম জন্মদিনে লিখলেন বন্ধু বিকাশ পাঁজি

আমাদের বন্ধুত্ব হওয়ার পিছনে নির্দিষ্ট কোনও কারণ ছিল না। পুরোটাই হয়েছে খেলতে খেলতে। ওর আর আমার মধ্যে একটা দুর্দান্ত যোগাযোগ ছিল মাঠের মধ্যে।

কৃশানুর ৬০-তম জন্মদিনে লিখলেন বিকাশ পাঁজি

কৃশানুর ৬০-তম জন্মদিনে লিখলেন বিকাশ পাঁজি ফাইল ছবি

বিকাশ পাঁজি

বিকাশ পাঁজি

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৯:৩৪
Share
Save

আমার সঙ্গে কৃশানুর ভাল করে আলাপ ১৯৮২ সালে, মোহনবাগানে সই করার সময় থেকে। তবে তার আগে ১৯৮১ সালে আন্তঃরেল খেলার সময় থেকেই ওকে চিনি। তখন আমি সাউথ-ইস্টার্নের হয়ে খেলছিলাম। এমন সময় বলরামদা (তুলসীদাস বলরাম) আমাকে বলেন, তোমাকে আমি বিএনআর-এ চাকরি দেব। তুমি বিএনআর-এ যোগ দাও। আমি রাজি হয়ে যাই। কৃশানু খেলত পোর্ট ট্রাস্টের হয়ে। ওরাও তখন খেলত আন্তঃরেল প্রতিযোগিতায়। সে বার প্রতিযোগিতা হয়েছিল বেনারসে। ওদের কাছে আমরা ফাইনালে তিন গোল খাই। তখন কৃশানু সবে জুনিয়র ইন্ডিয়া খেলেছে। ওর একটা আলাদা গ্ল্যামার হয়েছিল। লোকে আস্তে আস্তে ওকে চিনতে পারছিল। তখনও আমার সঙ্গে ওর খুব একটা ভাল সম্পর্ক তৈরি হয়নি।

সন্তোষ ট্রফি খেলার আগে নাইজেরীয় রেলওয়ে আমাদের সর্বভারতীয় রেলওয়ে দলকে সে দেশে খেলতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। তার জন্য শিবিরও হয়েছিল। সে বারই প্রথম পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীনে খেলি। কিন্তু নাইজেরিয়াগামী দল থেকে ও বাদ পড়ে যায়। তার পর সন্তোষ ট্রফি দলে ওর সঙ্গেই খেলতে গেলাম ত্রিচূরে। ভাল খেলেছিলাম সে বার।

ফাইল ছবি

তখন ১৯৮২ এশিয়ান গেমস খেলতে মোহনবাগান থেকে অনেক ভাল ফুটবলার চলে গিয়েছিল। ওরা তাই ঠিক করল এক ঝাঁক তরুণকে নেবে। সে সময় কৃশানু, আমি, অমিতাভ মুখোপাধ্যায় এ রকম বেশ কিছু ফুটবলার মোহনবাগানে সই করি। তখন থেকেই কৃশানুর সঙ্গে বন্ধুত্ব শুরু হল। দুটো বছর একসঙ্গে কাটালাম। এর পর ১৯৮৪ সালে প্রদীপদা কোচ হয়ে আসেন। আমি, কৃশানু এবং বাবু মানিকে নিয়ে দারুণ একটা মুভমেন্ট শেখালেন প্রদীপদা। সেই পরিকল্পনা খুব সফল হয়েছিল। তার পরে একটা প্রতিযোগিতা খেলতে গিয়ে ওর সঙ্গে দারুণ বন্ধুত্ব তৈরি হয়ে গেল। এমন বন্ধুত্ব হল যে আমরা ঠিক করেই নিলাম, যেখানে খেলব একসঙ্গেই খেলব।

আমাদের বন্ধুত্ব হওয়ার পিছনে নির্দিষ্ট কোনও কারণ ছিল না। পুরোটাই হয়েছে খেলতে খেলতে। ওর এবং আমার মধ্যে একটা দুর্দান্ত যোগাযোগ ছিল মাঠের মধ্যে। আমি কোথায় দাঁড়াব সেটা ওকে বলে দিতে হত না। ও না দেখেই বুঝতে পারত এবং বল বাড়িয়ে দিত। একই জিনিস হত আমার ক্ষেত্রেও। আমি যেন জানতামই যে মাঠের কোথায় কৃশানু থাকবে। শুধু ময়দান নয়, গোটা দেশ বুঝে গিয়েছিল আমরা দু’জনে একে অপরকে ছাড়া অচল। তাই ওকে নিতে গেলে আমাকেও নিতে হবে। আমাদের এই বন্ধুত্ব মাঠ বা অনুশীলনের ওই সামান্য সময়ে হয়নি। এর পিছনে আমাদের চাকরি জীবনও দায়ী। আমরা একই সংস্থায় চাকরি করতাম। অন্তত ১২-১৩ ঘণ্টা দু’জনে এক সঙ্গে থাকতাম। চাকরির পরে দু’জনে এক সঙ্গে আড্ডা মারতাম, গল্প করতাম।

ফাইল ছবি

ইস্টবেঙ্গলে যোগ দেওয়াটাও আর এক গল্প। সত্যি বলতে, আমরা মোহনবাগান ছাড়ব, এটা কোনও দিন ভাবিনি। আমি এ দেশীয়। বাবা-দাদা প্রত্যেকে কট্টর মোহনবাগান সমর্থক। স্বাভাবিক ভাবেই আমিও তাই। মোহনবাগানে খেলতে পেরে নিজে কতটা গর্বিত বোধ করতাম, সেটা হয়তো ভাষায় বলে বোঝানো যাবে না। কিন্তু তাতেও আমাদের যোগ দিতে হল ইস্টবেঙ্গলে।

তখন ইস্টবেঙ্গলের এই ফুটবলার নির্বাচনের ব্যাপারটা দেখতেন জীবনদা-পল্টুদা (জীবন চক্রবর্তী, পল্টু দাস)। পল্টুদার ডানহাত ছিল নীতুদা (দেবব্রত সরকার)। নীতুদাকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আমাদের দু’জনকে ক্লাবে সই করানোর। ইস্টবেঙ্গলে যে কোনও ভাবে আমাদের সই করানো ওর কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল। এ দিকে, আমরাও তখন মোহনবাগানে ভাল খেলছি। ওরাও কিছুতেই আমাদের ছাড়তে নারাজ। তা-ও আবার বিপক্ষ ক্লাবে। কোনও ভাবেই যেতে দেবে না তারা। সে যেন এক যুদ্ধং দেহি পরিস্থিতি।

চিমার সঙ্গে কৃশানু।

চিমার সঙ্গে কৃশানু। ফাইল ছবি

কোনও দিন দেখছি মোহনবাগান কর্তারা আমার বাড়ির সামনে, তো ইস্টবেঙ্গল কর্তারা কৃশানুর বাড়িতে। আবার কখনও উল্টোটা। এমনকী এ-ও হয়েছে, দু’দলের কর্তারাই আমাদের বাড়ির সামনে হাজির। এক দল সই করাবেই, আর এক দল কিছুতেই ছাড়বে না। ১৫-২০ দিন এ রকম চলল। তখনকার সময় সেটা ছিল একটা বিরাট ব্যাপার। দু’জন ফুটবলারকে সই করানো নিয়ে এ রকম ঘটনা সত্যিই বিরল। ফুটবল-সমর্থকরাও তখন দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছেন। সবুজ-মেরুন সমর্থকদের ক্ষোভ বাড়ছে। আমাদের দুই বাড়ির লোকেরাই তখন অতিষ্ঠ।

আমরা নিজেরাও আসলে ঠিক করতে পারছিলাম না কী করব। মোহনবাগান তখন বলল, তোমাদের ষাট হাজার টাকা দেব। কিন্তু টাকাটা বিষয় ছিল না। ইস্টবেঙ্গলে যোগ দেওয়ার আসল কারণ ছিল নীতুদার আন্তরিকতা। এতটাই সবিনয়ে ইস্টবেঙ্গলের তরফে আবেদন এসেছিল যে, সেটা ফেলতে পারিনি। আমার বাবা-দাদাকেও বারবার অনুরোধ করছিল ওদের ক্লাবে যোগ দেওয়ার জন্য। আমি তখন ঠিক করে ফেললাম, ইস্টবেঙ্গলে যোগ দেব। কৃশানুকেও সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিলাম। বললাম, যা হবে দেখা যাবে। এত করে যখন অনুরোধ করছে তখন দেখাই যাক না কী হয়। টাকার অঙ্কটাও দ্বিগুণ ছিল। ওরা যে টাকা দেবে বলেছিল তাতেই রাজি হয়ে যাই। দরাদরি করিনি। চাইলেই করতে পারতাম। কোনও দিনই আসলে এ কাজ করিনি। নীতুদা তখন আমাদের অভিভাবক হয়ে উঠেছিল। আমাদের সব রকম সাহায্য করেছিল তখন। ক্লাবের পরিবেশের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিতে সাহায্য করেছিল।

বিকাশের সঙ্গে কৃশানু।

বিকাশের সঙ্গে কৃশানু। ফাইল ছবি

কৃশানু আমার অভিন্নহৃদয় বন্ধু ছিল। তবে ওর মৃত্যুতে আমি একা নই, আঘাত পেয়েছিল গোটা বাংলা, গোটা দেশের লোক। ও এমন একজন ছিল, যে ফুটবলার বা মানুষ, দুটো ভূমিকাতেই খুব ভাল ছিল। কোনও দিন ওকে রাগতে দেখিনি, খেলার মাঠে মাথা গরম করতে দেখিনি। কার্ডও খায়নি সেই জন্য। সবাই ওকে শ্রদ্ধা করত, সে সিনিয়রই হোক বা জুনিয়র। আমরা কোথাও খেলতে গেলে বরাবর ওর আর আমার জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকত। এমনি এমনি তো আর ওকে ‘ভারতীয় ফুটবলের মারাদোনা’ বলা হত না। ওর মতো ফুটবলার এ দেশে খুব কমই জন্মেছে। এটা সবাই স্বীকার করবেন একবাক্যে।

আজ ওর ৬০-তম জন্মদিন। সত্যি বলতে, এখনও প্রচণ্ড মিস করি ওকে। প্রতি মুহূর্তে ওর কথা মনে হয়। শুধু আমি কেন, গোটা ইস্টবেঙ্গল ক্লাব ওকে মিস করে। এই যে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের এত ঝামেলা চলছে, আমি নিশ্চিত এ থাকলে এটা হত না। ও নিশ্চয়ই কোনও একটা কমিটিতে থাকত। ঠিক একটা সমাধানসূত্র বের করে ফেলত। তা ছাড়া, বাংলা তথা ভারতের ফুটবলেরও সামগ্রিক ভাবে উন্নতি হত। কোচ হোক বা অন্য কোনও পদে থেকে ফুটবলের উন্নতি করতে কখনও পিছিয়ে আসত না ও। আমি এখনও ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে গেলে ওর কথা এক বার উঠবেই। বাংলার ফুটবলে কোনও দিন কৃশানুর নাম মোছা যাবে না। কৃশানু বেঁচে থাকবে আমাদের মধ্যেই।

Krishanu Dey Bikash Panji footballer East Bengal mohun bagan

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।