Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
স্টপার
ISL 2021-22

ISL 2021-22: সুযোগসন্ধানী রয় কৃষ্ণকে এখন আটকানো খুবই কঠিন

যদিও এ বার আমার মতে, এটিকে-মোহনবাগানই এগিয়ে এসসি ইস্টবেঙ্গলের চেয়ে। রয় কৃষ্ণকে এই এসসি ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের পক্ষে আটকানো কঠিন।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সুব্রত ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২১ ০৭:৩৪
Share: Save:

আমাদের সময়ে বঙ্গ জীবনের অঙ্গ মোহনবাগান বনাম ইস্টবেঙ্গলের এই ম্যাচটা এলে সাতদিন আগে থেকেই কলকাতা-সহ বাংলা অন্য ভাবে জেগে উঠত। কিন্তু সত্তর, আশি বা নব্বইয়ের সেই সময়টা এখন অতীত।

ডার্বির কোনও ভবিষ্যদ্বাণী হয় না। মাঠে নেমে অনেকবারই দেখা গিয়েছে ধারে ও ভারে একটু পিছিয়ে থাকা বড় দল বিশেষ কোনও স্ট্র্যাটেজি, ট্যাকটিক্সকে কাজে লাগিয়ে ঠিক ম্যাচ বার করে হাসতে হাসতে মাঠ ছেড়েছে। এ প্রসঙ্গে আমার মনে পড়ে ১৯৮১ সালের দার্জিলিং গোল্ড কাপের ফাইনালে মোহনবাগান বনাম ইস্টবেঙ্গল ম্যাচটার কথা। সপ্তমীর দিনে এই ম্যাচটায় এক সময়ে আমরা ২-০ এগিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত ২-৩ হেরে গিয়েছিলাম। আবার আমরাও অনেক বার সব হিসাব ওলটপালট করে দিয়ে এগিয়ে থাকা ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে দিয়েছি।

যদিও এ বার আমার মতে, এটিকে-মোহনবাগানই এগিয়ে এসসি ইস্টবেঙ্গলের চেয়ে। রয় কৃষ্ণকে এই এসসি ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের পক্ষে আটকানো কঠিন। ও সুযোগ পেলে ঠিক গোল করে যাবে। আন্তোনিয়ো লোপেস হাবাস দু’একটি পরিবর্তন ছাড়া প্রায় একই দল ধরে রাখতে পেরেছেন। সেই রয় কৃষ্ণ, ডেভিড উইলিয়ামস, প্রীতম কোটাল, শুভাশিস বসু, লেনি রদ্রিগেস—সবাই আগের মরসুমে সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে খেলেছে। এ বার তার সঙ্গে দলে এসেছে গত মরসুমের প্রতিযোগিতায় মাঝমাঠের সেরা ফুটবলার হুগো বুমোস। যে গোলের জন্য প্রায় ঠিকানা লেখা পাস বাড়িয়ে দিচ্ছে।

কৃষ্ণ-বুমোস ভয়ঙ্কর জুটি। আক্রমণে বৈচিত্র বেড়েছে হাবাসের দলে। গত বছর বল রক্ষণ বা মাঝমাঠ থেকে লম্বা বল তুলে দেওয়া হত রয় কৃষ্ণের উদ্দেশে। এ বার সেই রণনীতি থেকে সরে মাটিতে পাস খেলেই গোলের বল তৈরি করছে হাবাসের মাঝমাঠ। আর ইউরো ২০২০ খেলে আসা ফিনল্যান্ডের জনি কাউকো আসায় ওদের মাঝমাঠের সঙ্গে আক্রমণ ভাগের সেতুবন্ধনটাও হচ্ছে চমৎকার। জনি একজন প্রকৃত ৮ নম্বর খেলোয়াড়। এই ধরনের খেলোয়াড়েরা মাঝমাঠে খেলে আক্রমণ ও রক্ষণের সংযোগ তৈরি করে দেয়। সেটাই ও করছে। পাশাপাশি, ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যেও লেনি, লিস্টন কোলাসো, অমরিন্দর সিংহেরাও বেশ ভাল ফুটবলার। ইস্টবেঙ্গলের চেয়ে ফুটবলার চয়নে মোহনবাগানই এগিয়ে বলে আমি মনে করি। এসসি ইস্টবেঙ্গলে লগ্নিকারী বনাম ক্লাব কর্তাদের মধ্যে রেষারেষিতে দল তৈরির ব্যাপারেও ধাক্কা খেয়েছে। যে অসুবিধা মোহনবাগানের ছিল না।

টিভিতে আমি হাবাস ও ম্যানুয়েল দিয়াস— দুই কোচের দল পরিচালনাই দেখেছি। প্রথম ম্যাচে গোল পেয়ে যাওয়ায় রয় কৃষ্ণ বড় ম্যাচে খেলতে নামবে বেশ চনমনে মেজাজে। হুগো বুমোসের নেতৃত্বে ওদের মাঝমাঠ থেকে আক্রমণ ভাগে নিখুঁত ভাবে বলের জোগান অব্যাহত। ফলে ভুল পাস হচ্ছে না। যার অভাব রয়েছে এসসি ইস্টবেঙ্গলে। প্রথম ম্যাচে লাল-হলুদ মাঝমাঠ থেকে ভুল পাস বাড়ানোয় জামশেদপুর বেশ কয়েকটি প্রতি-আক্রমণ তৈরি করেছিল।

বল পায়ে কৃষ্ণকে দেখলে আমার সুভাষ ভৌমিককে মনে পড়ে। ওর খেলা অনেকটাই ভৌমিকদার মতো। সুন্দর স্বাস্থ্য। ড্রিবল করে এগোতে পারে। ফাঁকা জায়গা খুঁজে নেয়। গতি ভাল। দু’পায়ে জোরালো শট নিতে পারে। গত বছরও আইএসএলের এই বড় ম্যাচে ওকে আটকাতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে দুই পর্বেই হেরেছিল এসসি-ইস্টবেঙ্গল। হুগো বুমোস গতিতে আমাদের সময়ের সুরজিৎ সেনগুপ্তের মতো নয় কিন্তু প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, সমরেশ চৌধুরী, গৌতম সরকারের মতো নিখুঁত পাস বাড়াতে পারে। সেখানে ইস্টবেঙ্গলে স্বদেশি বা বিদেশিদের মধ্যে ড্যানিয়েল চিমা ছাড়া কেউ এই শক্তি প্রয়োগে সংঘর্ষের ফুটবল খেলা বা কাটিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বা শুটিং দক্ষতা প্রথম ম্যাচে খুব বেশি দেখাতে পারেনি। আন্তোনিয়ো পেরোসেভিচ ভাল ফুটবলার। কিন্তু শারীরিক ভাবে ওকে পোক্ত মনে হয়নি।

পাশাপাশি, এটাও মনে করিয়ে দিতে চাই, হাবাসের দলের রক্ষণেও ভুলভ্রান্তি প্রচুর রয়েছে। দুই স্টপার ও সাইড ব্যাকের সঙ্গে স্টপারের বা মাঝমাঠের সঙ্গে রক্ষণের দূরত্ব মাঝেমধ্যেই বেড়ে যাচ্ছে। দেরি করে ট্যাকল হচ্ছে রক্ষণে। সে সবের ফায়দা তুলে ইস্টবেঙ্গল অঘটন ঘটাতেই পারে। ডার্বিতে অঘটন তো ঘটেই!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE