Advertisement
E-Paper

Ritwik Das: ময়দানের ছোট ক্লাব থেকে আইএসএল, সবুজ-মেরুনের স্বপ্ন ভাঙা ঋত্বিকের চোখ আরও উঁচুতে

কলকাতার দুই বড় ক্লাবে কোনও দিন খেলেননি। বরং, ময়দানের তুলনামূলক ছোট ক্লাবে খেলে ধাপে ধাপে উঠতে উঠতে তিনি পৌঁছে গিয়েছেন আইএসএল-এ।

লক্ষ্য উঁচুতে, আনন্দবাজার অনলাইনে বললেন ঋত্বিক

লক্ষ্য উঁচুতে, আনন্দবাজার অনলাইনে বললেন ঋত্বিক ছবি টুইটার

অভীক রায়

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২২ ১৬:৫৬
Share
Save

কলকাতার দুই বড় ক্লাবে কোনও দিন খেলেননি। বরং, ময়দানের তুলনামূলক ছোট ক্লাবে খেলে ধাপে ধাপে উঠতে উঠতে তিনি পৌঁছে গিয়েছেন আইএসএল-এ। গত সোমবার তাঁর গোলে হেরেই শেষ হয়ে গিয়েছে এটিকে মোহনবাগানের লিগ-শিল্ড জেতার স্বপ্ন। বাঙালি ফুটবলার ঋত্বিক দাস এখন শুধু জামশেদপুর এফসি নয়, গোটা বাংলার ফুটবল সমর্থকদের কাছেই প্রিয় হয়ে উঠেছেন। সকলেই খোঁজ নিচ্ছেন, কে এই ঋত্বিক।

জামশেদপুরে খেললেও ঋত্বিকের জন্ম বার্নপুরে। আসানসোলের সেন্ট প্যাট্রিকস স্কুলে পড়েছেন। স্কুল দল থেকেই খেলা শুরু। সেখান থেকেই আস্তে আস্তে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেকে। সেই বেড়ে ওঠার পিছনে অন্যতম ভূমিকা ছিল তাঁর বাবা-মায়ের। বুধবার আনন্দবাজার অনলাইনকে ঋত্বিক বললেন, “যেখানে জন্ম, সেখানে ফুটবলের জনপ্রিয়তা সে ভাবে ছিল না। পারিবারিক দিক থেকে ফুটবলের কোনও ব্যাকগ্রাউন্ডও ছিল না। কিন্তু আমি ছোটবেলা থেকেই ফুটবল খেলতে ভালবাসতাম। এমনই পাগল হয়ে গিয়েছিলাম যে সারাক্ষণ ফুটবল নিয়ে মেতে থাকতাম। কোনও সময় ফুটবলকে কাছছাড়া করতাম না। ফুটবলার হবই, এটা ঠিক করে নিয়েছিলাম। বাবা প্ল্যান্টে কাজ করত। রাতে ডিউটি থাকত। তা সত্ত্বেও আমাকে ফুটবল খেলাতে নিয়ে যেত। নিজে ক্লান্ত থাকলেও কোনও দিন আমার খেলায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। মা-ও আমাকে সারাক্ষণ ফুটবল খেলতে দেখত। যেখানে থাকতাম, সেখানে আমাদের ফ্ল্যাটের সামনেই একটা মাঠ ছিল। সেখানে বড় দাদারা খেলত। ওদের সঙ্গেই খেলতাম। কিছু দিন পরে আমাদের স্কুলে ট্রায়াল হচ্ছিল বয়সভিত্তিক দলের। স্কুলের হয়েও খেলেছি। প্রথমে ট্রায়ালে সুযোগ পেতাম না। বড়রাই প্রাধান্য পেত। তার পরে এক দিন নির্বাচিত হয়ে গেলাম।”

কিন্তু ফুটবলার হিসেবে উন্নতি করতে গেলে আসানসোলে পড়ে থাকলে যে চলবে না, এটা বুঝতে পেরেছিলেন ঋত্বিকের মা মিতা দাস। এমন সময়েই তাঁর চোখে পড়ে যায় সংবাদপত্রের একটি বিজ্ঞাপন, যেখানে মোহনবাগান স্কুলের জন্য ট্রায়ালে ডাকা হচ্ছিল খুদে ফুটবলারদের। তখন তিনি নিজেই গিয়ে সব খোঁজখবর নিয়ে আসেন। ট্রায়াল দিয়ে সেখানে সুযোগও পেয়ে যান ঋত্বিক। কিন্তু প্রধান সমস্যা ছিল কলকাতায় নিত্য যাতায়াত। কিন্তু সেখানেও মুশকিল আসান হয়ে দাঁড়ান ঋত্বিকের মা-ই। ১৩ বছরের ছেলেকে সপ্তাহান্তে তিনি অনুশীলনে নিয়ে কলকাতায় আসতেন। আবার ফিরিয়েও নিয়ে যেতেন। স্কুলেরও সাহায্য পেয়েছিলেন ঋত্বিক। সপ্তাহান্তে অনুশীলন করতে যাওয়ার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। এমনকী, মাঝে মাঝে অতিরিক্ত ছুটিও পেয়ে যেতেন তিনি।

প্রায় দু’বছর কাটিয়েছিলেন মোহনবাগান স্কুলে। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা? ঋত্বিক বললেন, “এখানে শঙ্করলাল চক্রবর্তীর মতো অত বড় কোচের অধীনে অনুশীলন করতাম। সবাই খুব ভালবাসতেন আমাকে। অনেক কিছু শিখতেও পারছিলাম। কিন্তু নিজের খেলার উন্নতির জন্য ম্যাচ খেলতে হত। তখনই আমার সঙ্গে পরিচয় হয় ছোটকাদার (চিন্ময় সরকার)। উনি কালিকাপুরে একটি কোচিং ক্যাম্প চালাতেন। আমিও ও দিকেই থাকতাম। ওর কোচিং ক্যাম্পে অনুশীলন শুরু করে দিই। আমার মধ্যে প্রতিভা দেখতে পেয়েছিলেন উনি। আমাকে প্রথমে ক্যালকাটা কাস্টমসে খেলার ব্যবস্থা করে দেন। পরে কালীঘাটে খেলারও সুযোগ করে দেন। আমার জীবনে ওঁর অবদান অসামান্য।”

কাস্টমসে সে ভাবে খেলার সুযোগ না পাওয়ায় ঋত্বিক যোগ দেন কালীঘাটে। সেখানে কোচ অরুণ ঘোষের অধীনে তাঁর খেলায় অনেক বদল আসে। সেখান থেকেই আচমকা রিয়াল কাশ্মীরে সুযোগ। দলের ফুটবলার নেওয়ার জন্য কলকাতার সাইয়ে একটি ট্রায়ালের আয়োজন করেছিল রিয়াল কাশ্মীর। সেখান থেকেই সুযোগ পান। দ্বিতীয় ডিভিশন থেকে মূলপর্বে আই লিগ খেলার বছরে রিয়াল কাশ্মীরের হয়ে চার গোল ছিল ঋত্বিকের। কাশ্মীরে খেলার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে ঋত্বিক বললেন, “কাশ্মীরে খেলার অভিজ্ঞতা অন্য রকম। এখানকার সমর্থকরা ভাববেন যে আমরা বরফে খেলার মতো সুযোগ পাচ্ছি। কিন্তু সেটা যে কতটা কঠিন তা আমরাই জানি। গরমের এলাকা থেকে ওখানে গিয়ে মানিয়ে নেওয়া সহজ কথা নয়। প্রচণ্ড ঠান্ডা ছিল। এতটাই যে ম্যাচের দিন মোজার উপর প্লাস্টিকের একটা প্যাকেট গলিয়ে তার উপর জুতো পরতাম। কারণ খেলার মাঝে বরফ ঢুকে গেলে ঠান্ডায় পা জমে যেত। অবশ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। মাঠও ছিল কৃত্রিম ঘাসের। ফলে বিষয়টা সহজ ছিল না একেবারেই। তবে ওখানকার দর্শকরা খুব ভাল ছিলেন। খেলার দিন মাঠ ভরে যেত। সারাক্ষণ আমাদের তাতাতেন।”

জামশেদপুরে খেললেও ঋত্বিকের জন্ম বার্নপুরে। আসানসোলের সেন্ট প্যাট্রিকস স্কুলে পড়েছেন। স্কুল দল থেকেই খেলা শুরু।

জামশেদপুরে খেললেও ঋত্বিকের জন্ম বার্নপুরে। আসানসোলের সেন্ট প্যাট্রিকস স্কুলে পড়েছেন। স্কুল দল থেকেই খেলা শুরু।

কিবু ভিকুনার অধীনে কেরালা ব্লাস্টার্সে খেলা শুরু করেন। এর পর গত মরসুমের আগে যোগ দেন জামশেদপুরে। ব্রিটিশ কোচ আওয়েন কয়েলেরও ভূমিকা রয়েছে ঋত্বিকের জীবনে। তিনি বললেন, “শুধু আমাকে নয়, সবাইকে ভাল খেলার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন। উনি আশা করেন, সবাই নিজের সেরাটা দেবে। আমাদের আত্মবিশ্বাস জোগান। শুধু আমাকে আলাদা করে কিছু বলতেন তা নয়।”

মোহনবাগানের বিরুদ্ধে গোল করে আলাদা অনুভূতি রয়েছে ঋত্বিকের। বললেন, “মোহনবাগানের মতো দলের বিরুদ্ধে গোল করা তো আলাদা একটা অনুভূতি বটেই। ওদের দলে কত বড় ফুটবলাররা রয়েছে। তার উপর লিগ-শিল্ড জেতার সুযোগ ছিল আমাদের সামনে। সেই রকম একটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে গোল পেয়েছি। এটা নিঃসন্দেহে আলাদা আনন্দ দিচ্ছে।” তবে ভবিষ্যতে যে প্রধানের থেকেই ডাক আসুক, যোগ দিতে ইচ্ছুক তিনি। আলাদা করে কোনও দলের প্রতি ভালবাসা নেই। বললেন, “আমি পেশাদার ফুটবলার। নির্দিষ্ট কোনও ক্লাবের প্রতি ভালবাসা নেই। যেখানে সুযোগ পাব, সেখানেই খেলব। এখনও কোনও ক্লাবের তরফে প্রস্তাব আসেনি। কিন্তু ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে নিশ্চয়ই খেলব। এখন আমার মাথায় শুধুই সেমিফাইনাল।”

Jamshedpur FC ISL 2021-22 Ritwik Das Real Kashmir FC Calcutta Customs

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।