Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
SC East Bengal

ISL 2021-22: ডার্বির ভাগ্য দুলছে চাণক্যের চালে

ডার্বিকে কেন্দ্র করে আবেগ, বাড়তে থাকা রক্তচাপ, উন্মাদনা চরম পেশাদার দুই কোচ ম্যানুয়েল দিয়াস ও আন্তোনিয়ো লোপেস হাবাসকেও স্পর্শ করেছে।

ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান দ্বৈরথ।

ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান দ্বৈরথ। —ফাইল চিত্র।

শুভজিৎ মজুমদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২১ ০৮:০০
Share: Save:

বঙ্গসমাজকে দু’ভাগ করে দেওয়া শতবর্ষের ডার্বি। ফুটবল মাঠে নায়ক হয়ে ওঠার মঞ্চ। ব্যর্থতার যন্ত্রণা নিয়ে হারিয়ে যাওয়ার আতঙ্ক। হাসি-কান্নার কোলাজ। আবেগের বিস্ফোরণ।

বিশ্বের যে প্রান্তেই খেলা হোক, ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান দ্বৈরথকে কেন্দ্র করে বাঙালির উন্মাদনা চিরকালীন। কে বলবে, আজ শনিবার আইএসএলে গোয়ার তিলক ময়দানে মুখোমুখি হচ্ছে এসসি ইস্টবেঙ্গল ও এটিকে-মোহনবাগান? কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ। হাওড়া থেকে সল্টলেক। উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা। কোথাও লাল-হলুদের ড্যানিয়েল চিমা, অরিন্দম ভট্টাচার্য, মহম্মদ রফিক, হীরা মণ্ডলদের ছবি। কোথাও আবার সবুজ-মেরুনের রয় কৃষ্ণ, হুগো বুমোস, প্রীতম কোটাল, অমরিন্দর সিংহদের কাট-আউটে সাজানো হয়েছে রাস্তা। চায়ের দোকানে, মাছের বাজারে ইলিশ ও চিংড়ি কেনার হিড়িকও ইতিউতি দেখা যাচ্ছে। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের গেটগুলিও দুই প্রধানের তারকাদের ছবি দিয়ে এমন ভাবে সাজানো হয়েছে, দেখে মনে হবে যেন শনিবার এখানেই ডার্বির শতবর্ষে মুখোমুখি কৃষ্ণ-চিমারা।

ডার্বিকে কেন্দ্র করে আবেগ, বাড়তে থাকা রক্তচাপ, উন্মাদনা চরম পেশাদার দুই কোচ ম্যানুয়েল দিয়াস ও আন্তোনিয়ো লোপেস হাবাসকেও স্পর্শ করেছে। হবে না-ই বা কেন? ভারতীয় ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অনেক আগে থেকেই তো তাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বী। রিয়াল মাদ্রিদের যুব দলে দীর্ঘদিন ম্যানুয়েল কোচিং করিয়েছেন। রিয়ালের চিরশত্রু আতলেতিকো দে মাদ্রিদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন হাবাস।

এটিকে-মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে লাল-হলুদ কোচ বললেন, ‘‘কলকাতা ডার্বি আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দ্বৈরথের মাহাত্ম্য সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল।’’ যোগ করেছেন, ‘‘স্পেন ও মেক্সিকোতেও অনেক ডার্বি দেখেছি। এই ম্যাচে নিজেদের সেরাটাই দেওয়ার চেষ্টা করব।’’ হাবাসের কথায়, ‘‘দু’দলের কাছেই এই ম্যাচটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে খেলা গোয়ায় হচ্ছে বলে কোনও দলেরই সমর্থক থাকবে না।’’

ম্যানুয়েলের সঙ্গে হাবাসের মিল শুধু একটি ব্যাপারেই। দু’জনেই স্পেনের। তবে ফুটবল-দর্শন থেকে মানসিকতা— সব ব্যাপারেই তাঁরা সম্পূর্ণ ভিন্ন মেরুর বাসিন্দা। সবুজ-মেরুন কোচ বিশ্বাস করেন, ‘সুন্দর’ ফুটবল নয়, যে কোনও মূল্যে দলের জয়টাই আসল। রক্ষণ মজবুত করে গোলের জন্য ঝাঁপানোর রণকৌশলই প্রধান অস্ত্র হাবাসের। এই মরসুমে আক্রমণ ভাগে কৃষ্ণ, বুমোস, মনবীর, লিস্টন কোলাসো থাকা সত্ত্বেও পরিকল্পনা বদলাতে রাজি নন হাবাস।

সন্দেশ জিঙ্ঘন দল ছেড়েছেন। আর এক ডিফেন্ডার তিরিও সুস্থ নন। রক্ষণের ভুলেই কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে দু’টি গোল খেয়েছিল এটিকে-মোহনবাগান। ডার্বিতেও তিরির খেলার সম্ভাবণা ক্ষীণ। শুধু তাই নয়, চিন্তা বাড়াচ্ছে বল দখলে রাখতে না পারার ব্যর্থতা। কেরলের বিরুদ্ধে ৪-২ জিতলেও মাত্র ৪৪ শতাংশ বল ছিল লেনি রদ্রিগেসদের দখলে। হাবাস বলছেন, ‘‘বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকলেই যে জেতা যায়, এই যুক্তি মানি না। পরিসংখ্যান থেকে কখনও সত্যিটা বোঝা যায় না।’’ কেন? সবুজ-মেরুন কোচের ব্যাখ্যা, ‘‘আইএসএল, লা লিগা থেকে বুন্দেশলিগা— ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ গোল হয় প্রতিআক্রমণে। অথবা ঝড়ের গতিতে আক্রমণে উঠে। ৫-৬ শতাংশ গোল হয় সেট-পিস থেকে। বাকি ১০-১২ শতাংশ গোল হয় বল নিজেদের দখলে রেখে আক্রমণে উঠে। তাই শুধু বল নিজেদের দখলে বেশি রাখার রণনীতি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া সহজ নয়।’’ আরও বলেছেন, ‘‘খেলার জায়গা আমাদের তৈরি করে নিতে হবে। প্রতিপক্ষ অনুযায়ীই খেলতে হবে। বুঝতে পারি না, মানুষ কেন আমাদের কাছ থেকে একই ধরনের খেলা আশা করেন।’’ যদিও শুক্রবারের অনুশীলনে বল ধরে খেলার উপরেই জোর দিয়েছেন হাবাস!

লাল-হলুদ কোচের পছন্দ আগ্রাসী ফুটবল। রিয়াল মাদ্রিদের মতো ‘ডিরেক্ট’ ফুটবল তিনি খেলাতে চান দলকে। ম্যাচের আগের দিন হাল্কা অনুশীলনের পরে তিনি বলেছেন, ‘‘অনেকেই আমাদের পিছিয়ে রাখছে। ও সব নিয়ে ভাবছি না। আমরা নিজেদের শক্তি অনুযায়ী খেলব। মাঠে যথাসম্ভব কম ভুল করতে হবে এবং বিপক্ষের দুর্বলতাগুলোকে কাজে লাগাতে হবে।’’ যোগ করেছেন, ‘‘এটিকে-মোহনবাগান গত বার দারুণ খেলেছিল। অধিকাংশ ফুটবলারকেই ধরে রেখেছে। কোচও দুর্দান্ত। তবে আমরাও তৈরি।’’

গত মরসুমে আইএসএলে দু’বারই এসসি ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়েছে এটিকে-মোহনবাগান। এ বারও কৃষ্ণদের এগিয়ে রাখছেন বিশেষজ্ঞরা। সতর্ক হাবাস বললেন, ‘‘ওরা এই মরসুমে নতুন ভাবে দল গড়েছে। কোচও নতুন। তবে ভারতীয় ফুটবলে সব কিছু খুব দ্রুত তৈরি করে নিতে হয়। এই কারণেই ডার্বিতে কেউ এগিয়ে আছে বলা যাবে না।’’

ডার্বিতে আকর্ষণের কেন্দ্রে শুধু দুই চাণক্যের মস্তিষ্কের লড়াই নয়, কৃষ্ণ-বুমোস বনাম চিমা-আন্তোনিয়ো পেরোসেভিচের দ্বৈরথ নিয়েও আগ্রহ তুঙ্গে। সবুজ-মেরুনের দুই তারকাই দুরন্ত ছন্দে রয়েছেন। যতই পুরনো গোলমেশিন চিমা ওকোরির সঙ্গে নামের মিল থাকুক, নতুন চিমা এখনও নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। পেরোসেভিচ দুর্দান্ত খেলেছিলেন। লাল-হলুদ আক্রমণ ভাগের দুই প্রধান অস্ত্রকে আটকানোর পরিকল্পনা কী? হাবাস বলেছেন, ‘‘এসসি ইস্টবেঙ্গল দলটাকে আটকানোই আমার লক্ষ্য। ওদের দু’জনকে শুধু নয়।’’

সবুজ-মেরুনের দুই তারকাকে কী ভাবে আটকাবেন? ম্যানুয়েল বলছেন, ‘‘পুরোটাই নির্ভর করবে ম্যাচের পরিস্থিতির উপরে। বল যদি আমাদের বক্সের কাছাকাছি অঞ্চলে থাকে, তা হলে ওদের জন্য বিশেষ পাহারা থাকবে।’’ এর পরেই যোগ করলেন, ‘‘আমরা কৃষ্ণ ও বুমোসের বিরুদ্ধে খেলছি না। ম্যাচটা এটিকে-মোহনবাগানের সঙ্গে। ওরা হয়তো অসাধারণ। মনে রাখতে হবে গোল করার জন্য ওদের দলের বাকিদের সাহায্যেরও প্রয়োজন হবে। তাই আমরা ওদের পুরো দলটাকে আটকানোর চেষ্টাই করব।’’

মর্যাদার দ্বৈরথের আগে স্বস্তিতে নেই দুই বিদেশি চাণক্যও!

অন্য বিষয়গুলি:

SC East Bengal ATK Mohun Bagan kolkata derby ISL 2021-22
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy