Advertisement
E-Paper

ডুবন্ত জাহাজ এবং দিশাহীন নাবিক, আর্জেন্টিনার সাফল্যের সময়ে আরও অতলে ব্রাজিলের ফুটবল

আন্তর্জাতিক ফুটবলে আর্জেন্টিনা যত সাফল্য পাচ্ছে, ততই যেন অতলে তলিয়ে যাচ্ছে ব্রাজিলের ফুটবল। আর্জেন্টিনার কাছে হার যার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ। দিশাহীন নাবিকের কারণে ডুবছে ‘সেলেকাও’ জাহাজ।

football

ব্রাজিলের বিখ্যাত সমর্থক ক্লোভিস আকোস্তা ফের্নান্দেস, যিনি নিজেকে ‘দ্বাদশ ব্যক্তি’ পরিচয় দিতেই ভালবাসতেন। ছবিটি ২০১৪ বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে ১-৭ হারের দিন তোলা। পরের বছরই প্রয়াত হন ক্লোভিস। — ফাইল চিত্র।

অভীক রায়

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৫ ০৮:৫৬
Share
Save

পাঁচ বারের বিশ্বকাপজয়ী। সাফল্যের নিরিখে ফুটবলবিশ্বের সফলতম দল। ফুটবলারদের পায়ের জাদু, শৈল্পিক পাস দেখতে হাঁটা যেত হাজার হাজার মাইল। হ্যাঁ, ‘হাঁটা যেত’। অতীত। কারণ ব্রাজিলের ফুটবল আজ ভগ্নপ্রায়, বিধ্বস্ত, দীর্ণ। গত শতকে যে দেশের ফুটবলারদের পায়ের জাদু প্রায় গোটা বিশ্বকে হলুদ-নীল জার্সির প্রেমে পড়তে বাধ্য করেছিল, গত ১৫ বছরে তাদেরই এতটাই পতন হয়েছে যে, সব এখন মনে রাখা পর্যন্ত কঠিন।

২০১৪ বিশ্বকাপে দেশের মাটিতে জার্মানির কাছে ১-৭ হার কি ব্রাজিলের ফুটবলে লজ্জার তালিকায় সবার উপরে থাকবে? নিঃসন্দেহে। মঙ্গলবার রাতে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ১-৪ গোলে হারও পিছিয়ে থাকবে না। এই হার বুকের উপর সেই হাতুড়ির ঘা, যার ব্যথা মিলিয়ে গেলেও চিহ্ন থেকে যাবে আজীবন। গত কয়েক বছরে এই আঘাত এত বার এসেছে যে, শরীরে ক্ষতচিহ্ন থেকে যাওয়ার জায়গাও এ বার কম না পড়ে!

ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকেরা যেমন মোহনবাগানের কাছে হার মেনে নিতে পারেন না, লিভারপুলের সমর্থকেরা যেমন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের কাছে হার মানতে পারেন না, বোকা জুনিয়র্সের সমর্থকেরা যেমন রিভার প্লেটের কাছে হার মানতে পারেন না— ঠিক তেমনই ব্রাজিলের সমর্থকেরাও আর্জেন্টিনার কাছে লজ্জার এই হার মানতে পারছেন না। তবে পরিস্থিতি অস্বীকার করার উপায়ও নেই। ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার মধ্যে এখন গুণমানের এতটাই তফাত যে তার মধ্যে দিয়ে অতলান্তিক মহাসাগর গলে যায়। শুধু আর্জেন্টিনা কেন, এই ব্রাজিল খাবি খায় কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলার মতো দলের বিরুদ্ধেও। এই অবস্থায় ‘সেলেকাও’দের ডুবন্ত জাহাজকে যিনি টেনে তুলবেন, সেই নাবিকও যে দিশাহীন! আগামী যে খুব একটা সুখকর নয়, তা হয়তো এখন থেকেই বলা যায়।

ধারাবাহিক ব্যর্থতা এবং লজ্জা

বছর দেড়েক আগের কথা। বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনের প্রথম পর্বে রিয়ো ডি জেনিরোতে আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হয়েছিল ব্রাজিল। সদ্য বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে লিয়োনেল মেসির আর্জেন্টিনা তখন টগবগ করে ফুটছে। তুলনায় অনেক দুর্বল ব্রাজিলকে সেই ম্যাচে প্রত্যাশিত ভাবেই হারতে হয়েছিল। সেই হারে যে অভিঘাত তাতে তৈরি হয়েছিল, সেটা বিশাল। ওই হারের পর লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে ব্রাজিল নেমে গিয়েছিল ছ’নম্বরে। মহাদেশের দুর্বলতম দেশ ভেনেজুয়েলাও ছিল ব্রাজিলের উপর। আর এক দুর্বল দল ইকুয়েডরের পয়েন্ট কাটা যাওয়া সত্ত্বেও তারা ব্রাজিলকে টপকে গিয়েছিল। পেলের দেশের পক্ষে এর চেয়ে অপমানজনক আর কী হতে পারে!

football

হেরে হতাশ হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়েছেন ব্রাজিলের ফুটবলারেরা। ছবি: রয়টার্স।

এ কথা ঠিক যে, আর্জেন্টিনার কাছে বুধবার (ভারতীয় সময় অনুযায়ী) হারার পরেও বিশ্বকাপে ব্রাজিলের যোগ্যতা অর্জনের রাস্তায় কাঁটা ছড়িয়ে থাকার কথা নয়। ফিফার সৌজন্যে এখন লাতিন আমেরিকা থেকে ছ’টি দেশ বিশ্বকাপে যেতে পারবে। প্লে-অফে জিতলে সাতটি দেশ। ব্রাজিল এখন চারে। সপ্তম স্থানে থাকা ভেনেজুয়েলার থেকে ছ’পয়েন্টে এগিয়ে। ফলে আমেরিকায় যাওয়ার টিকিট পেতে খুব একটা অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবে সাম্প্রতিক ফলাফলে বোঝা যাচ্ছে, ব্রাজিলের ফুটবলে এখন আগুন নিয়ে খেলা চলছে। মুহূর্তের অসতর্কতায় দাবানল লাগতেই পারে। এই ব্রাজিল বিশ্বকাপে গেলেও গ্রুপ পর্ব পেরোতে পারবে তো? কী হবে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, জার্মানির মতো শক্তিধর দেশের সঙ্গে খেলা হলে? চোরাস্রোত বইতে শুরু করে দিয়েছে।

ফিকে ‘সাম্বা ম্যাজিক’, খেলায় নেই জৌলুস

বুধবারের ফলাফল বাদ দিলে, আগের তুলনায় ব্রাজিলের সামান্য উন্নতি হয়েছে। তবে তার মানে এই নয় যে, তারা ভাল খেলছে। গত বছরের কোপা আমেরিকায় মারকুইনহোস, রাফিনহাদের খেলা দেখে অনেকে বিস্মিত হয়েছিলেন, এ কোন ব্রাজিল! কোথায় সেই পায়ের কাজ, কোথায় সেই ড্রিবলিং! জাতীয় দলের খেলোয়াড়েরা এখন ইউরোপে খেলার কারণে ব্রাজিলের সহজাত ফুটবল অনেক দিনই অস্তাচলে। তা বলে ন্যূনতম নিজস্ব ফুটবলটুকুও উধাও! গত বছরের কোপার পর থেকে যতগুলি ম্যাচ হয়েছে, প্রায় প্রতিটিতেই একই চিত্র। ব্রাজিলের খেলা দেখে কিছু শেখা তো দূর, ফুটবল শিক্ষার্থীরা অনুপ্রেরণাটুকু পাবেন না। না আছে সেই পায়ের কাজ, না আছে সেই শৈল্পিক ফুটবল, না আছে দলগত প্রয়াস।

মঙ্গলবার আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ব্রাজিল গোলে মাত্র দু’টি শট নিতে পেরেছে! ক্রিশ্চিয়ান রোমেরোর ভুলে ম্যাথেউস কুনহা গোল না করলে এবং লিয়ান্দ্রো পারেদেসের শট গোলরক্ষক বেন্টো না বাঁচালে ব্রাজিলকে ০-৫ গোলে হারের লজ্জা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হত। কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে আগের ম্যাচে ভিনিসিয়াস ব্যক্তিগত দক্ষতায় গোল না করলে সে দিনও আটকে যেত ব্রাজিল। ওই গোলের পর রিয়াল মাদ্রিদের ফুটবলার বলেছিলেন, “আশা করি এই গোল নতুন দিশা দেখাবে।” দিশা দেখানো তো দূর, আরও অতলে তলিয়ে যেতে বসেছে ব্রাজিল।

দিশাহীন কোচের পরিকল্পনাহীন ফুটবল

বিস্তর চেষ্টার পরেও আনচেলোত্তিকে না পেয়ে গত বছরের জানুয়ারিতে দোরিভাল জুনিয়রকে দায়িত্ব দিয়েছিল ব্রাজিল। ঘরোয়া ফুটবলে তাঁর সাফল্য নিয়ে সংশয় ছিল না। এমনও বলা হচ্ছিল, তিনি ব্রাজিলকে খাদের কিনারা থেকে তুলে আনতে পারেন। পরিসংখ্যানের দিক থেকে যদি ধরা হয়, তা হলে দোরিভাল নিঃসন্দেহে নিজের কাজ করেছেন। বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনের পথে ব্রাজিলের রাস্তা আপাতত নিরাপদ। তবে প্রশ্ন উঠছে, এই ব্রাজিলের হাল ফেরানোর জন্য কৌশলী ভাবনাচিন্তা কি তাঁর মধ্যে রয়েছে?

দোরিভাল চান, তাঁর দলের তিন ফরোয়ার্ড রদ্রিগো, ভিনিসিয়াস এবং রাফিনহা আরও বেশি স্বাধীনতা নিয়ে খেলুন। তবে কঠিন রক্ষণের সামনে পড়লেই এই তিন জন আটকে যাচ্ছেন। দোরিভালের সিস্টেমে ব্রাজিলের মিডফিল্ডে বড় বড় ফাঁক তৈরি হচ্ছে, যা কাজে লাগাচ্ছে বিপক্ষ। আর্জেন্টিনার রদ্রিগো দি পল, আলেক্সিস ম্যাক আলিস্টার, জুলিয়ান আলভারেজ়রা দাপিয়েছেন বুধবারের ম্যাচে। পাল্লা দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না ব্রাজিলের। তা ছাড়া, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মস্তিষ্কের চালে ব্রাজিলকে ম্যাচে ফেরাতে পারছেন না দোরিভাল। তাঁর কাছে কোনও ‘প্ল্যান বি’ তৈরি থাকছে না। যে কারণে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে তিনটি গোল হজম করলেও দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিলের খেলায় প্রত্যাশিত আগ্রাসন দেখা যায়নি। কলম্বিয়া ম্যাচের পর দোরিভাল অনুযোগ করেছিলেন, তাঁর বার্তা বোধহয় সব খেলোয়াড় ঠিক ভাবে বুঝতে পারছেন না। কিন্তু সেই দায়িত্ব তো তাঁকেই নিতে হবে।

football

বুধবারের ম্যাচে ব্রাজিলের কোচ দোরিভাল জুনিয়র (বাঁ দিকে)। ছবি: রয়টার্স।

আরও একটি মন্তব্যের জেরে তিনি এখন নিজের দেশেই হাসির খোরাক হচ্ছেন। কলম্বিয়া ম্যাচের পর বলেছিলেন, “প্রত্যেকটা ম্যাচের পরেই দলের ভাল রকম উন্নতি দেখতে পাচ্ছি।” এতেই ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম এবং সমর্থককুল খেপে যায়। এক সাংবাদিক লেখেন, “উন্নতি দেখতে গেলে এ বার বোধহয় আতশকাচ নিয়ে বসতে হবে।” প্রাক্তন ফুটবলার টোস্টাও লেখেন, “আমাদের অন্য ভাবে ভাবতে হবে। ব্রাজিলের ফুটবলের আসল জাদু ফিরিয়ে আনতে হবে।”

আর্জেন্টিনার উত্থানে ঈর্ষা?

ব্রাজিলের দুরবস্থা যত গভীর হচ্ছে, ততই যেন শক্তিশালী হচ্ছে আর্জেন্টিনা। কেউ ব্রাজিলের কট্টর সমর্থক হলে, আর্জেন্টিনার ধারাবাহিক সাফল্য তাঁকে ঈর্ষান্বিত করবেই। ব্রাজিলের মানুষজনের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। আর্জেন্টিনা একের পর এক ট্রফি জিতছে, আর ব্রাজিলের মানুষের দীর্ঘশ্বাস দীর্ঘতর হচ্ছে। ২০২২ সালে বিশ্বকাপ জেতা ছাড়াও পর পর দু’বার কোপা আমেরিকা জিতেছে আর্জেন্টিনা। ব্রাজিল শেষ বার জিতেছিল ২০১৯ সালে। তবে এখন সে সব অনেক যুগ আগের কথা মনে হবে। গত ছ’বছরে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ব্রাজিলের লড়াই একতরফা হয়ে গিয়েছে।

আর্জেন্টিনীয় সমর্থকেরা জানেন, তাঁদেরও একই অবস্থার মধ্যে দিয়ে দীর্ঘ দিন যেতে হয়েছে। ১৯৭৮ এবং ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জেতার পর ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠেছিল আর্জেন্টিনা। মাঝের সময়টায় তাদের সাফল্য ছিল কোথায়? কলকাতার আর্জেন্টিনা-পাগল সমর্থকেরা দেশটির নাম পাল্টে রেখে গিয়েছিলেন, ‘আর-জিতিনা’। সেই অবস্থা থেকে এখনকার আর্জেন্টিনার উত্থান হয়েছে বিদ্যুৎগতিতে। এই সাফল্যের জন্য যদি নির্দিষ্ট একজনের নাম করতে হয়, তিনি নিঃসন্দেহে লিয়োনেল স্কালোনি। আর্জেন্টিনার ‘তরুণ’ কোচ।

এমন নয় যে তিনি কোনও জাদুদণ্ডে সব সমস্যা দূর করে দিয়েছেন। গত বছরই ফেডারেশনের সঙ্গে ঝামেলায় কোচের চাকরি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। তখনকার মতো বুঝিয়ে-সুঝিয়ে রাখা হয়। তবে কোচ হিসাবে স্কালোনি নিষ্ঠুর রকমের পেশাদার। ব্রাজিলের সঙ্গে আর্জেন্টিনার মূল পার্থক্য হল, কোচের সঙ্গে ফুটবলারদের একাত্মতা। আর্জেন্টিনা দলে যতটা ভারসাম্য এবং সংহতি রয়েছে, ব্রাজিল যেন ততটাই ছন্নছাড়া। লিয়োনেল মেসিকে ছাড়া কী করে জিততে হয় সেটা আর্জেন্টিনা শিখে গিয়েছে। কিন্তু নেমারকে ছাড়া কী করে জিততে হয় সেটা এখনও ব্রাজিল শিখতে পারেনি। গত সপ্তাহেই অধিনায়ক মারকুইনহোস বলেছিলেন, ‘‘আমরা এখনও একে অপরকে চিনছি।” সেখানে আর্জেন্টিনার ফুটবলারেরা একে অপরের সঙ্গে একাত্ম। দারুণ বন্ধুত্ব রয়েছে প্রত্যেকের মধ্যেই। তার প্রভাব পড়ছে ম্যাচে। ব্রাজিলে সেটাই যে উধাও।

সমর্থকদের দূরে চলে যাওয়া

আর্জেন্টিনার সাফল্য বা বিশ্বকাপ জয়ের কথা বলা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে, যদি সে দেশের সমর্থকদের কথা না বলা হয়। আর্জেন্টিনার প্রতিটা ম্যাচের পর সে দেশের বিভিন্ন শহরে মানুষের আবেগ, উচ্ছ্বাসের যে বিস্ফোরণ দেখা গিয়েছিল, তা এখনও চোখে ভাসতে বাধ্য। গাড়ির মাথায়, ল্যাম্পপোস্টে উঠে সমর্থকদের সেই নাচগান ঘোর লাগিয়ে দিতে বাধ্য। কাতারে আর্জেন্টিনা যে ক’টা ম্যাচ খেলেছে, প্রতিটিতে নীল-সাদা জার্সিধারীদের আধিক্য দেখা গিয়েছে। মেট্রো স্টেশনে আর্জেন্টিনার পতাকা গায়ে শুয়ে থাকা সমর্থকদের ছবি এখনও ভাইরাল হয়। আসলে আর্জেন্টিনীয়রা ফুটবল নিয়ে এতটাই আবেগপ্রবণ, যে ফুটবলারদের নিজেদের মতোই মনে করেন। ফুটবলারদের সাফল্যের মাধ্যমে নিজেদের পরিচিতি জাহির করতে চান। মনে করেন, মেসি, আলভারেজ়, দি পলেরাই বিশ্ব দরবারে তাঁদের প্রতিনিধি।

football

বুধবারের ম্যাচে গ্যালারিতে আর্জেন্টিনার সমর্থকের উল্লাস। ছবি: রয়টার্স।

এখানেই ব্রাজিলের সঙ্গে পার্থক্য তৈরি হয়ে গিয়েছে। গত কয়েক বছর, বলা ভাল, এক-দু’দশক ধরেই ব্রাজিল ফুটবল দলের সঙ্গে সমর্থকদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। ব্রাজিল দলকে এখন সে দেশের বাসিন্দারাই নিজেদের দল বলে ভাবতে পারেন না। ফলে ব্রাজিল হারলে যেমন আর বিক্ষোভ, ভাঙচুর হয় না, জিতলেও বিরাট উচ্ছ্বাস হয় না। দেশের ফুটবল দল নিয়ে এতটাই নিস্পৃহ হয়ে গিয়েছে সে দেশের জনগণ। ব্রাজিলের ফুটবল পণ্ডিতেরা অনেক দিন ধরেই এই সম্ভাবনার কথা বলছিলেন। জাতীয় দলের ফুটবলারদের কাছে অনুরোধ করছিলেন দেশের মানুষের কথা আরও একটু বেশি ভাবার জন্য। কিন্তু ইউরোপের বিলাসবহুল জীবনযাপন এবং অর্থের লোভে বুঁদ থাকা ব্রাজিলের তরুণ প্রজন্ম সে সবে পাত্তাই দেয়নি। স্থানীয় ক্লাবে একটু নাম করলেই ইউরোপের ক্লাবগুলি টাকার থলি নিয়ে এগিয়ে এসেছে। ব্রাজিলের ফুটবলারেরা সেই হাতছানিতে সাড়া দিয়ে পাড়ি দিয়েছেন ইউরোপে। তাই ভিনিসিয়াস, রদ্রিগো, এনদ্রিকদের সমর্থক এখন নিজের দেশেই খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ সে দেশের মানুষ ফুটবলারদের সঙ্গে দীর্ঘ দিন কোনও একাত্মতা বোধ করেন না। তাঁদের সাফল্য-ব্যর্থতায় তা হলে দেশের মানুষের যাবে-আসবে কেন! দায় এড়াতে পারে না ফুটবল ফেডারেশনও। প্রদর্শনী ম্যাচগুলি দেশে আয়োজন করার বদলে তারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে চলে যায়। ফলে নিজের দেশের খেলা দেশে বসেই দেখার সুযোগ থাকে না। এখানেও সেই অর্থই অনর্থের কারণ।

তবে দেশটির নাম যে হেতু ব্রাজিল, তাই এত সহজে তাদের হিসাবের বাইরে রাখলে চলবে না। আজ না হোক কাল, ব্রাজিল ফিরে আসবেই। তবে কী ভাবে, কবে সে উত্তর আপাতত অজানাই।

Brazil Football Argentina Football

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}