মনোতোষের ফুটবলার হওয়ার কাহিনি ফাইল ছবি
কোনও দিন ফুটবলার হবেন, সেটা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি তিনি। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারে যে কোনও খেলাই ছিল তাঁদের কাছে বিলাসিতা। কিন্তু অভাবকে সঙ্গী করেই স্বপ্নে বুঁদ থেকেছিলেন মনোতোষ চাকলাদার। সোমবার কেরলের মঞ্জেরি স্টেডিয়ামে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড হাতে নামবেন তিনি। সন্তোষ ট্রফি তাঁর হাতে উঠবে কিনা সেটা সময়ই বলবে। কিন্তু স্বপ্নকে সত্যি করার লড়াইয়ে ইতিমধ্যেই জিতে গিয়েছেন মনোতোষ।
হুগলির শরৎচন্দ্র সরণির বাসিন্দা মনোতোষ দশ বাই দশের টালির চালের ঘর থেকে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পথচলা শুরু করেন। বাবা মন্টু চাকলাদার পেশায় রাজমিস্ত্রি। মা লীলা চাকলাদার পরিচারিকার কাজ করেন। ছেলে যখন রাজ্যের ফুটবল দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সেই সময় কালবৈশাখী ঝড় আর বৃষ্টিতে ঘরের টালির চাল ভেদ করে জল ঢুকে ঘর ভাসছে। ইটের ঘর বহু দিন ধরে মেরামতের অভাবে জীর্ণ। ঘরের মধ্যে জায়গা এতটাই কম যে একসঙ্গে পরিবারের সবাই খেতে বসতে পারেন না। ছোট্ট মিটার ঘরের মধ্যে মনোতোষের খেলার যাবতীয় সরঞ্জাম রাখা। পরিবারের অবস্থা বলতে গেলে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। কিন্তু তাতেও চাকলাদার পরিবারের মুখে হাসিটা এখনও অমলিন। কারণ সোমবার সন্ধ্যায় বাংলা ফাইনাল খেলতে নামছে। সেই ম্যাচে অধিনায়কত্ব করছে তাদেরই ঘরের ছেলে।
মনোতোষের উত্থান ২০১৬ সালে মহমেডান ক্লাবের হয়ে। তারপর গোকুলম কেরলের হয়ে ২০২০-র আই লিগে খেলার পর ইস্টবেঙ্গলে সই করেন। এ ভাবেই একের পর এক ধাপ পেরিয়ে বাংলার অধিনায়ক হয়ে উঠেছেন বছর বাইশের মনোতোষ। ডিফেন্ডার হিসেবে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন বহু বার। সন্তোষ ট্রফিতে এ বার গ্রুপ লিগে বাংলা পরাজিত হয়েছে একমাত্র কেরলের কাছেই। ফাইনালে মুখোমুখি সেই কেরলই। মনোতোষের নেতৃত্বে বাংলা দল প্রতিশোধ নিতে মরিয়া।
মনোতোষের মা লীলা দেবী জানান, ছোট থেকে অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে বড় হয়েছেন মনোতোষ। খেলার জুতো কিনে দেওয়ার মত সামর্থ্য ছিল না তাঁদের। পাড়া-প্রতিবেশীরা সাহায্য করেছেন। এখন তাঁর একটাই প্রার্থনা, বাংলাকে ফাইনালে জিতিয়েই ছেলে যাতে ঘরে ফেরে। বাবা মন্টু চাকলাদার বললেন, “ছেলে ছোট থেকে নিজের চেষ্টাতেই ফুটবলের যাবতীয় উন্নতি করেছে। আমরা যতটা পেরেছি ততটা সাহায্য করেছি। ওর খেলার প্রতি অদম্য জেদই এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে।”
মনোতোষের ফুটবল প্রশিক্ষক গোপী চক্রবর্তী বলেন, “আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবার থেকে উঠে এসেছে মনোতোষ। ও নিজেই একটি স্ফূলিঙ্গ। আমরা তাতে শুধু আগুন ধরাতে সাহায্য করেছি।” তিনি আরও বলেন, “আমরা আশাবাদী যে এক দিন মনোতোষ ভারতের জার্সি পরে খেলবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy