আলোচনায়: ম্যাচের শেষ দিকে নেমে কিয়ানের লড়াই। আইএসএল
ডার্বিতে হ্যাটট্রিক করে পিছিয়ে পড়া এটিকে-মোহনবাগানকে ৩-১ জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন তিনি। সবুজ-মেরুন সমর্থকেরা তাই বৃহস্পতিবার আইএসএলে এখনও জিততে না পারা মুম্বই এফসির বিরুদ্ধে কিয়ান নাসিরির বিক্রমে জয় পাওয়ার আশায় টিভির সামনে বসেছিলেন। আইএসএলে এর আগে যে চার বার মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে খেলেছে এটিকে-মোহনবাগান, সব ম্যাচেই হেরেছে। গত বছরে তিন বার। আর এ বার প্রথম পর্বের ম্যাচে ১-৫ হারের পরে ‘সুপার সাব’ কিয়ানকে ঘিরেই মুম্বই বিজয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন কলকাতা ময়দানের ফুটবলপ্রেমীরা। কিন্তু সবুজ-মেরুনের স্পেনীয় কোচ জুয়ান ফেরান্দো ম্যাচের ৮৫ মিনিটে কিয়ানকে নামানোয় এটিকে-মোহনবাগান সমর্থকদের তোপের মুখে। গণমাধ্যমে ম্যাচের পরে তাই ফেরান্দোর উপরে বিষোদগার করেছেন অনেকেই।
সবুজ-মেরুন সমর্থকেরাই শুধু নন, মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ময়দানের নতুন তারা কিয়ানের সাফল্য দেখতে মুখিয়ে ছিলেন প্রাক্তন তারকারাও। তাঁরাও ৮৫ মিনিটে কিয়ানকে নামানোর সিদ্ধান্তে খুশি নন। কেউ হতাশ। কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করলেন আনন্দবাজারের কাছে। মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে রয় কৃষ্ণকে বাদ দিয়েই খেলতে নেমেছিলেন প্রীতম কোটালেরা। ডার্বিতে কৃষ্ণকে অতিরিক্ত তালিকায় রাখা হলেও এ দিন ছিলেন না তিনি। বড় ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা কিয়ান নাসিরিকেও রাখা হয়েছিল অতিরিক্ত তালিকায়। তখনই বোঝা গিয়েছিল ‘সুপার সাব’ হিসেবেই জামশিদ নাসিরির পুত্রকে ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে সবুজ-মেরুন কোচ ফেরান্দোর।
শেষ পর্যন্ত ৮৫ মিনিটে কিয়ানকে নামতে দেখে প্রবল ক্ষুব্ধ গৌতম সরকার। ফোনে বলছিলেন, ‘‘একটা বাচ্চা বড় ম্যাচে গোল করেছে। কলকাতার স্ট্রাইকাররা যখন উধাও হয়ে যাচ্ছে ভারতীয় ফুটবল থেকে, তখন দলমত নির্বিশেষে সকলেই কিয়ানকে দেখার জন্যই মুখিয়ে ছিল। কিন্তু ৮৫ মিনিটে কেন ওকে নামানো হল বুঝলাম না। ওর আত্মবিশ্বাসটাই এতে চূর্ণ হয়ে যেতে পারে। ৭০ মিনিটে নামালে ভাল হত। ছেলেটার ইচ্ছাশক্তি প্রবল। কে বলতে পারে, আজও কিয়ান গোল করে দলকে জিতিয়ে ফিরত না?’’ কিয়ানের বাবা জামশিদ নাসিরির সঙ্গে খেলা প্রাক্তন ভারতীয় গোলকিপার ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়ও হতাশ। বললেন, ‘‘টিভির সামনে বসেছিলাম, কখন কিয়ান মাঠে নামে সেটা দেখতেই। কোচ ওকে পরে নামিয়ে ভাল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু এত পরে অর্থাৎ ৮৫ মিনিটে ওকে নামানোর যুক্তি মানতে পারি না। ভাইচুংকে প্রথম যখন কলকাতায় আনি, তখন শ্যামলদা (ঘোষ) ওকে সব ম্যাচে ৬৫-৭০ মিনিটে নামাত। এতে আত্মবিশ্বাস আরও বাড়ে। কিয়ান কিন্তু আজ শেষের দিকে নেমে ওই পাঁচ-সাত মিনিটেই এক বার মুম্বইয়ের গোলমুখে হানা দিয়েছিল। একটু আগে নামালে ভাল লাগত।’’ যোগ করেন, ‘‘মুম্বইয়ের দুই সাইডব্যাকই সে রকম ছন্দে ছিল না। প্রবীর দাশ, লিস্টন ও কিয়ান যদি শেষ ২০ মিনিট মুম্বই রক্ষণের সামনে দৌড়ত, তা হলে মোর্তাদা ফলদের রক্ষণ কিন্তু চাপে পড়ে যেতে পারত।’’ কিয়ানের গুরু ও কলকাতা ময়দানের সফল স্ট্রাইকার শ্যাম থাপাও একমত। তিনি বললেন, ‘‘শেষ ২০ মিনিট ওকে খেলানোই যেত। ছেলেটার আত্মবিশ্বাস রয়েছে। এতেই অনেক কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কামাল করে মাঠ ছাড়া যায়।’’
কলকাতা ময়দানের সফল বাঙালি স্ট্রাইকার শিশির ঘোষও কিয়ান পরে নামায় ক্ষুব্ধ। বলছেন, ‘‘ছেলেটা আগের ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছে। শেষ ২০-২৫ মিনিট মাঠে রাখলে মুম্বই রক্ষণ চাপে থাকত। এতে সুবিধা হত মোহনবাগানেরই। ছেলেটার নড়াচড়া ভাল। বিপক্ষ রক্ষণের দুই স্টপারকে বিব্রত করতে পারে ভাল। কোচ কেন ওকে খেলা শেষ হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে নামাবেন? মনবীরকে এতক্ষণ মাঠে রাখার যুক্তি কী?’’
মোহনবাগানের প্রাক্তন ফুটবলার মানস ভট্টাচার্যের ব্যাখ্যা, ‘‘এটাই ভারতীয় কোচেদের সঙ্গে বিদেশিদের পার্থক্য। ভারতীয় কোচ হলে কিয়ানের আবেগ, আত্মবিশ্বাস কাজে লাগানোর চেষ্টা করতেন। কিন্তু ফেরান্দোরা অঙ্ক ছাড়া কিছুই বোঝেন না। কিয়ানদের এ রকম ম্যাচে খেলিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে তো? শেষ পাঁচ মিনিট ওকে মাঠে দেখতে ভাল লাগেনি। আরও আগে কিয়ানকে নামানো যেতে পারত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy