ফিফার শাস্তির হুঁশিয়ারির পর ‘ওয়ান লাভ’ বাহুবন্ধনী পরার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এল ইংল্যান্ড-সহ সাত দেশ। ছবি: টুইটার।
বিয়ারের পর বাহুবন্ধনী। কাতারের সামনে আবার নতজানু ফিফা। বিশ্বকাপে নিষিদ্ধ করা হল ‘ওয়ান লাভ’ বাহুবন্ধনী। সব ক্ষেত্রেই কাতারের অবস্থান মেনে নিচ্ছে ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা। এ ক্ষেত্রেও ব্যর্থ ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। ইউরোপের সাতটি দেশকে বাগে আনতে শেষ মুহূর্তে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের উপর চাপ প্রয়োগ করলেন ফিফা কর্তারা। শাস্তি এড়াতে সুর নরম করল ইংল্যান্ড, ওয়েসল–সহ সাতটি দেশ।
কাতারে সমকামিতা নিষিদ্ধ। সমলিঙ্গের কোনও সম্পর্ককেই স্বীকৃতি দেয় না মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশ। যা নিয়ে এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের মানুষরা প্রথম থেকেই প্রতিবাদে সোচ্চার। তাঁদের সমানাধিকারের দাবিকে সম্মান জানাতে ইউরোপের সাতটি দেশের অধিনায়করা মাঠে ‘ওয়ান লাভ’ বাহুবন্ধনী পরে নামার কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু কাতার প্রশাসন এবং ফিফার ক়ড়া মনোভাবের পর সেই অবস্থান থেকে সরে এল তারা। তবে নীতিগত ভাবে ফিফার সিদ্ধান্ত মানতে পারছেন না অনেকেই। কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে প্রথম থেকেই নানা রকম বিতর্ক চলছে। তাই ফিফা অংশগ্রহণকারী দলগুলির প্রতি সমানে আবেদন জানিয়েছে, শুধু ফুটবলে মন দেওয়ার জন্য। তাও ইউরোপের সাতটি দল এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের মানুষের পাশে থাকার বার্তা দিতে ‘ওয়ান লাভ’ বাহুবন্ধনী পরার সিদ্ধান্ত নেয়।
পরিস্থিতি সামলাতে ইউরোপের ফুটবল নিয়ামক সংস্থা উয়েফা-র উপর চাপ তৈরি করে ফিফা। জানিয়ে দেওয়া হয়, নিয়মের বাইরে কিছু করা যাবে না। তেমন কিছু হলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে সংশ্লিষ্ট দলকে। অধিনায়করা ‘ওয়ান লাভ’ বাহুবন্ধনী পরে মাঠে নামলে হলুদ কার্ড দেখানো হবে। এর পর আর ঝুঁকি নিতে চায়নি ইংল্যান্ড, ওয়েলস, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস এবং সুইৎজারল্যান্ড। সাত দেশের ফুটবল নিয়ামক সংস্থার পক্ষে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ফিফা খুব স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, আমাদের অধিনায়করা মাঠে ‘ওয়ান লাভ’ বাহুবন্ধনী পরে নামলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জাতীয় ক্রীড়া সংস্থা হিসাবে আমরা কখনই চাই না, আমাদের ফুটবলাররা কোনও শাস্তির মুখে পড়ুক। তাই আমরা আমাদের ফুটবলারদের ফিফা বিশ্বকাপে এ ধরনের বাহুবন্ধনী ব্যবহার না করার কথা বলেছি।’
আরও বলা হয়েছেন, ‘পোশাক বিধি না মানার মতো শাস্তি অর্থাৎ জরিমানা করা হলে, আমরা সেই অর্থ দিতে প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু আমরা ফুটবলারদের কার্ড দেখার পরিস্থিতিতে ফেলতে পারি না। হয়তো মাঠ থেকে বের করে দেওয়া হবে ওদের। ফিফার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত হতাশজনক। আমাদের মতে এটা নজিরবিহীন। ‘ওয়ান লাভ’ বাহুবন্ধনী ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে সেপ্টেম্বর মাসেই আমরা ফিফাকে চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও উত্তর দেওয়া হয়নি।’ ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হ্যারি কেন বলেছেন, ‘‘দল হিসাবে আমরা একটা বিষয় পরিস্কার করে দিচ্ছি। আমরা ‘ওয়ান লাভ’ বাহুবন্ধনী পরে মাঠে নামতে চাই। দলের সাপোর্ট স্টাফরাও আমাদের পাশে রয়েছে। সংস্থা হিসাবে আমরা ‘ওয়ান লাভ’ বাহুবন্ধনী পরতে চাই।’’ ফুটবলারদের সিদ্ধান্তে সমর্থনের কথা বলেছেন ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেটও।
ফিফার এই সিদ্ধান্তকে চাপিয়ে দেওয়া অভিহিত করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ফুটবল সাপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘‘আমরা প্রতারিত বোধ করছি। এই সিদ্ধান্তে আমরা ফুটবলপ্রেমীরা ক্ষুব্ধ। ফুটবলারদের হলুদ বা লাল কার্ড দেখানোর সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া যায় না। শুধু মাত্র অর্থবল এবং পরিকাঠামো দেখে কখনও বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজন করা উচিত নয়। এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের অধিকার, মহিলাদের অধিকার, শ্রমিকদের অধিকার বা অন্য কোনও সর্বজন গ্রাহ্য মানবাধিকারকে যারা মূল্য দেয় না, তেমন দেশে বিশ্বকাপ হওয়া উচিত নয়।’’ ওয়েলস দলের পক্ষ থেকে ফিফার সিদ্ধান্তকে অনভিপ্রেত এবং হতাশাজনক বলা হয়েছে।
২০১০ সালে কাতার বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় বিতর্ক। রক্ষণশীল কাতারের একাধিক নিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রতিবাদ জানায় বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। শেষ পর্যন্ত কাতার প্রশাসনের অবস্থানই মেনে নিল ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy