সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনার দুই গোলদাতা লিয়োনেল মেসি ও জুলিয়ান আলভারেস। ছবি: রয়টার্স
ক্রোয়েশিয়াকে অনায়াসে ৩-০ উড়িয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনা।
আর্জেন্টিনার হয়ে ম্যাচের দ্বিতীয় গোল করলেন আলভারেস। তবে গোলটি যত না তাঁর, তার থেকে অনেক বেশি মেসির। ডান প্রান্তে সাইড লাইনের কাছে বল ধরে ডিফেন্ডারকে ঘাড়ের কাছে নিয়ে এগিয়ে যান মেসি। পায়ের কাজ দেখাতে দেখাতে বক্সে ঢোকেন। তার পরে বল রাখেন অরক্ষিত আলভারেসের কাছে। ডান পায়ে গোল করে ব্যবধান বাড়ান আলভারেস।
সময় যত গড়াচ্ছে চাপ তত বাড়ছে ক্রোয়েশিয়ার উপর। লিসান্দ্রো মার্তিনেসকে নামিয়ে তিন ব্যাকে চলে গিয়েছেন আর্জেন্টিনার কোচ লিয়োনেল স্কালোনি। রক্ষণ আরও মজবুত করার চেষ্টা করছেন তিনি। আক্রমণ ক্রোয়েশিয়া বেশি করলেও এখনও মার্তিলেসকে পরাস্ত করতে পারেনি তারা।
দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের ঝাঁঝ অনেক বেশি ক্রোয়েশিয়ার। আক্রমণে লোক বাড়িয়েছে কোচ দালিচ। কিন্তু নিজেদের রক্ষণ মজবুত রেখেছে আর্জেন্টিনা। ফলে গোলের মুখ খুলতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। রক্ষণাত্মক খেললেও হঠাৎই প্রতি আক্রমণ থেকে উঠে আসছে আর্জেন্টিনা। কিন্তু তারাও গোলের ব্যবধান বাড়াতে পারেনি।
তৃতীয় গোল করে ফেলতে পারত আর্জেন্টিনা। মেসির কর্নার থেকে জোরালো হেড করেন ম্যাক অ্যালিস্টার। কোনও রকমে সেই বল বাঁচান লিভাকোভিচ।
বিস্ময় গোল করলেন জুলিয়ান আলভারেস। প্রতি আক্রমণ থেকে নিজেদের অর্ধে বল ধরে প্রায় ৫০ গজ দৌড়ে যান তিনি। বক্সের বাইরে তিন ডিফেন্ডারকে চমক দিয়ে বক্সে ঢোকেন। লিভাকোভিচকে পরাস্ত করে গোল করেন তিনি। তবে সেই গোলে ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডারদের ভুল ছিল। আলভারেসকে আটকাতে পারেননি তাঁরা।
পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। বক্সের মধ্যে আলভারেসকে ফাউল করেন লিভাকোভিচ। পেনাল্টি দেন রেফারি। স্পট থেকে গোল করতে ভুল করেননি মেসি। গোলরক্ষকের বাঁ দিক দিয়ে জালে জড়িয়ে দেন তিনি। এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। এ বারের বিশ্বকাপে নিজের পঞ্চম গোল করে ফেললেন মেসি।
খেলায় ধীরে ধীরে ফিরছে আর্জেন্টিনা। শেষ ১০ মিনিটে কয়েক বার আক্রমণে উঠেছে তারা। বক্সের মধ্যে ঢুকেছেন মেসিও। কিন্তু সেখান থেকে ফায়দা তুলতে পারেননি তাঁরা। এনজো ফের্নান্দেস বক্সের বাইরে থেকে একটি শট মারেন। সহজেই তা আটকে দেন লিভাকোভিচ।
প্রথম ১৫ মিনিটে বলের দখল অনেক বেশি ক্রোয়েশিয়ার কাছে। দ্রুতগতিতে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করছে তারা। সজাগ রয়েছে আর্জেন্টিনার রক্ষণ। আক্রমণে উঠলেও ভাল সুযোগ তৈরি করতে পারছে না ক্রোয়েশিয়া।
নিজেদের মধ্যে বল ধরে খেলার চেষ্টা করছে আর্জেন্টিনা। ছোট ছোট পাসে আক্রমণে উঠছেন মেসিরা। অন্য দিকে ক্রোয়েশিয়া প্রেসিং ফুটবল খেলছে। মেসিদের পায়ে বল থাকলেই তাড়া করছেন মদ্রিচরা।
এমিনলিয়ানো মার্তিনেস, নাহুয়েল মোলিনা, ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো, নিকোলাস ওটামেন্ডি, নিকোলাস ট্যাগলিয়াফিকো, রদ্রিগো দি পল, লিয়ান্দ্রো পারেদেস, এনজো ফের্নান্দেস, অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার, জুলিয়ান আলভারেস, লিয়োনেল মেসি
ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে পাঁচটি নজিরের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন মেসি। আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে সর্বাধিক গোল, বিশ্বকাপে সর্বাধিক ম্যাচ, অধিনায়ক হিসাবে সর্বাধিক ম্যাচ, সর্বাধিক অ্যাসিস্ট এবং সবচেয়ে বেশি সময় মাঠে থাকার নজির গড়তে পারেন তিনি।
একটা ব্যাপারে ম্যাচের আগেই অনেকটা এগিয়ে থেকে নামবে আর্জেন্টিনা। সেটা হল, অকুণ্ঠ সমর্থন। এমনিতেই আর্জেন্টিনা থেকে মেসিদের সমর্থন জানাতে প্রচুর মানুষ এসেছেন। সেমিফাইনালের আগে সেই সংখ্যা আরও বেড়েছে। ফলে লুসাইল স্টেডিয়ামের ৭৫ শতাংশই আর্জেন্টিনা সমর্থকদের দখলে চলে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
শেষ বিশ্বকাপে এসে মাতিয়ে দিচ্ছেন মেসি। প্রতি ম্যাচেই তাঁর পা থেকে কোনও না কোনও জাদু দেখা যাচ্ছে। হয় দুর্দান্ত পাস, নয় দুর্দান্ত গোল। কিছু না কিছু জাদু দেখিয়েই যাচ্ছেন তিনি। তেমনই সাহায্য পাচ্ছেন সতীর্থদের থেকে, যাঁরা মেসির জন্য ট্রফি জিততে মরিয়া। একই ভাবে, ক্রোয়েশিয়া দলে যাবতীয় আকর্ষণের কেন্দ্রে রয়েছেন লুকা মদ্রিচ। প্রতিটি ম্যাচেই প্রচণ্ড পরিশ্রম করছেন তিনি। যেখানে বল, সেখানেই দেখা যাচ্ছে মদ্রিচকে। গোল আটকানোর সময় ট্যাকল করছেন, আবার গোল করার সময় পাস বাড়াচ্ছেন। ফলে মেসি বনাম মদ্রিচ দ্বৈরথ মঙ্গলবারের সেমিফাইনালের অন্যতম আকর্ষণ।
গত বারের বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট ক্রোয়েশিয়া মেসিদের সামনে বড় বাধা। কোনও ভাবেই ক্রোয়েশিয়াকে হালকা ভাবে নিতে পারবে না আর্জেন্টিনা।
নিজের শেষ বিশ্বকাপ খেলছেন লিয়োনেল মেসি। দুরন্ত ছন্দে রয়েছেন তিনি। শেষ বার বিশ্ব ফুটবলের মঞ্চে জ্বলে উঠতে চান এলএম১০। দেশকে ৩৬ বছর পরে জেতাতে চান বিশ্বকাপ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy