দাপট: দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে শেষ ষোলোর ম্যাচে নেমারের গোলের পরে ব্রাজিল দলের উৎসব। ফাইল চিত্র
দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে পেনাল্টি থেকে পানেনকা কিকে গোলের পরে সতীর্থদের সঙ্গে সাম্বা নাচ শেষ করেই মাঠ থেকে বেরিয়ে এলেন নেমার দা সিলভা স্যান্টোস জুনিয়র। যে ভাবে দৌড়লেন, মনে হচ্ছিল ড্রেসিংরুমে ফিরছেন।
দোহার স্টেডিয়াম ৯৭৪-এর গ্যালারিতে মুহূর্তের মধ্যেই উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছিল। আবার কি তা হলে চোট পেলেন ব্রাজিল তারকা? না কি অন্য কোনও সমস্যা? ব্রাজিল ভক্তরা নিশ্চিন্তে থাকুন। নেমার সম্পূর্ণ সুস্থই রয়েছেন। গোল করার পরেই তিনি গিয়েছিলেন চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়া সতীর্থ আলেক্স তেলেসের সঙ্গে দেখা করতে। সার্বিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে গোড়ালিতে চোট পাওয়ার পরে তাঁর বিশ্বকাপে খেলা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কার্যত অসম্ভবকে সম্ভব করেই সুস্থ হয়ে স্মরণীয় প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছেন তিনি। কিন্তু আলেক্সের এই বিশ্বকাপে খেলার আর কোনও সম্ভাবনা নেই। মঙ্গলবারই তিনি কাতার ছেড়ে স্পেনের সেভিয়া উড়ে গিয়েছেন চিকিৎসা করাতে। গোল করার পরেই তাই নেমারের প্রথম মনে পড়েছিল স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা নিয়ে গ্যালারিতে বসে থাকা আলেক্সের কথা।
আলেক্সকে সান্ত্বনা দিয়ে রিজ়ার্ভ বেঞ্চের সামনে এসে কোচ তিতেকে জড়িয়ে ধরেন নেমার। শেষ দশটি দিন ব্রাজিল কোচ যে তাঁকে সন্তানের মতো আগলে রেখেছিলেন। না ঘুমিয়ে সারারাত নেমারের ঘরে চিকিৎসার তদারকি করেছিলেন। নেমারের প্রত্যাবর্তন তো তিতেরও জয়। ম্যাচের পরে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি ব্রাজিল তারকা।
হলুদ জার্সির উপরে সবুজ রঙের ট্র্যাকসুটের আপার পরে সাংবাদিক বৈঠকে এলেন নেমার। শান্ত অথচ চোখে অবর্ণনীয় ঔজ্জ্বল্য। নেমার বলতে শুরু করলেন, ‘‘সার্বিয়া ম্যাচে চোট পাওয়ার পরে প্রথমেই মনে হয়েছিল আমার বিশ্বকাপ শেষ। সারারাত হোটেলের বিছানায় শুয়ে কেঁদেছি।’’ সাংবাদিক বৈঠক কক্ষে তখন যেন পিন পড়লেও তার শব্দ শোনা যেত। সাংবাদিকদের অনেকের চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ল। তিতের চোখের কোণও মনে হয় ভিজে গিয়েছিল। কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে নেমার ফের বলতে শুরু করলেন, ‘‘এই মরসুমে আমি দারুণ ছন্দে রয়েছি। বিশ্বকাপের প্রস্তুতিও দুর্দান্ত হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ এই চোটের ফলে আমার সব স্বপ্ন ধ্বংস হতে চলেছিল। আমার এই যন্ত্রণার কথা জানত শুধু পরিবারের সদস্যরাই। ওদের পাশাপাশি দলের প্রত্যেক সদস্য, বন্ধুদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ কঠিন এই সময়ে পাশে থাকার জন্য।’’ আরও বলেছেন, ‘‘সার্বিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে চোট পাওয়ার পর থেকেই যে ভাবে সকলে আমার আরোগ্য কামনা করে বার্তা পাঠিয়েছেন, তার জন্য ধন্যবাদও যথেষ্ট নয়।’’ ভক্তদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘‘আপনারাই আমার শক্তি ও প্রেরণা। এ ভাবেই পাশে থাকুন। আমরা লক্ষ্যের আরও একটু কাছে পৌঁছেছি। ধীরে ধীরে এগোতে হবে। আমার বিশ্বাস, দিনের শেষে আমাদের সকলের মুখেই হাসি ফুটবে।’’
৭৬ মিনিটে নেমারকে তুলে তিতে নামান রদ্রিগোকে। কোনও সমস্যা হচ্ছিল? নেমার বলে দিলেন, ‘‘গোড়ালিতে ব্যথাই অনুভব করিনি। যতক্ষণ মাঠে ছিলাম, খেলাটা উপভোগ করেছি। তবে নিজের খেলায় কখনওই পুরোপুরি সন্তুষ্ট হই না। বিশ্বাস করি, আরও উন্নতি প্রয়োজন।’’ উচ্ছ্বসিত তিতে বলেছেন, ‘‘নেমার অসাধারণ। ওর দায়বদ্ধতা সকলের কাছেই উদাহরণ।’’ একই অভিমত সিজার সাম্পাইয়োর।
তবে ‘পিজিয়ন ডান্স’ নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ায় একেবারেই খুশি নন তিনি। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড কিংবদন্তি রয় কিন এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে অভিযোগ তুলেছেন, নাচের মধ্য দিয়ে প্রতিপক্ষকে অসম্মান করেছেন ব্রাজিলের ফুটবলাররা। গোল করার পরে রিচার্লিসনের আব্দারে তিতেও নাচেন। ম্যাচের পরে এক অনুষ্ঠানে কিংবদন্তি রোনাল্ডো নাজ়ারিয়োকেও ‘পিজিয়ন ডান্স’ শিখিয়েছেন রিচার্লিসন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy