আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসাবে বিশ্বকাপ ফুটবলারের সেমিফাইনালে উঠেছে মরক্কো। ছবি: টুইটার।
কাতারে ইতিহাস তৈরি করেছে মরক্কো। আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসাবে বিশ্বকাপ ফুটবলের সেমিফাইনালে পৌঁছেছে আশরাফ হাকিমিরা। মরক্কোর এই অভূতপূর্ব সাফল্যে অবদান রয়েছে বিদেশে জন্ম নেওয়া এক ঝাঁক ফুটবলারের।
মরক্কোর ২৬ জন ফুটবলারের মধ্যে ১৪ জনেরই জন্ম অন্য দেশে। কাতার বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া ৩২টি দলের মধ্যে যা সব থেকে বেশি। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠছে বিশ্বকাপের এই সাফল্য কতটা মরক্কো ফুটবলের।
মরক্কোর একাধিক জয়ের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনো। কানাডায় জন্ম তাঁর। এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপে মাত্র একটি গোল হজম করেছেন তিনি। দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার হাকিমির জন্ম স্পেনের মাদ্রিদে। ক্লাব ফুটবলে লিয়োনেল মেসি, নেইমার, কিলিয়ান এমবাপের সতীর্থ মরক্কোর আক্রমণের অন্যতম ভরসা। মিডফিল্ডার সোফয়ান আমরাবতের জন্ম নেদারল্যান্ডসে। দলের আর এক মিডফিল্ডার সোফিয়ান বাফোলের জন্ম ফ্রান্সে। বেলজিয়াম, জার্মানি, ইটালিতে জন্ম নেওয়া ফুটবলাররাও বিশ্বকাপে খেলছেন মরক্কোর হয়ে। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপের আগে বিদেশে জন্ম নেওয়া দেশীয় বংশোদ্ভূত ফুটবলারদের জন্য জাতীয় দলের দরজা খুলে দিয়েছে মরক্কো। তার পর থেকেই ক্রমশ উন্নত হয়েছে মরক্কোর জাতীয় দলের পারফরম্যান্স।
রয়্যাল মরক্কান ফুটবল ফেডারেশন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রতিনিধি রেখেছে প্রতিভা চিহ্নিত করার জন্য। বিদেশে জন্ম দেশীয় বংশোদ্ভূত প্রতিভাবান কিশোরদের মরক্কোর হয়ে খেলার জন্য উৎসাহিত করেন তাঁরা। সে ভাবেই মরক্কো পেয়েছে হাকিম জিয়াসকে। নেদারল্যান্ডসে জন্ম তাঁর। পেশাদার ফুটবলে পা রাখার সময় দু’দেশের ফুটবল সংস্থার সঙ্গে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এক রকম দরাদরি করেছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত জন্মভূমিকে ছেড়ে বেছে নিয়েছেন মাতৃভূমিকে। আমরাবতও জুনিয়র পর্যায়ে নেদারল্যান্ডসের হয়ে কয়েকটি ম্যাচ খেললেও পরে বেছে নিয়েছেন মরক্কোকে। তিনি বলেছেন, ‘‘আমার বাবা-মা দু’জনেই মরক্কোর মানুষ। আমার পরিবারের অন্যরাও মরক্কোয় থাকেন। ছোট থেকে যখনই মরক্কোয় দাদা-ঠাকুমার কাছে যেতাম, একটা অন্যরকম অনুভূতি হত। সবটা বলে বোঝাতে পারব না। মনে হত নিজের বাড়িতে এসেছি। আমার জন্ম নেদারল্যান্ডসে। নেদারল্যান্ডসেই আমার সব কিছু। তবু মরক্কো আমার মনের বিশেষ জায়গায় রয়েছে।
অন্য দেশে জন্ম নেওয়ার প্রতিভাবান কিশোরদের মরক্কোর হয়ে খেলার জন্য উৎসাহিত করা কতটা সহজ? মরক্কোর হয়ে গত ন’বছর ধরে প্রতিভা খোঁজার কাজ করছেন বেলজিয়ামের ফুটবল কোচ ওয়ালিদ রেগ্রাগুই। নিজেও অতীতে মরক্কোর হয়ে খেলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘এই বিশ্বকাপের আগে পর্যন্ত খুবই কঠিন ছিল। সাংবাদিকরা প্রশ্ন তুলতেন, কেন অন্য দেশে জন্ম নেওয়া ছেলেদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে? মরক্কোয় জন্ম নেওয়া ফুটবলারদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। কেন ওদের নিয়েই জাতীয় দল তৈরি করা হচ্ছে না? কিন্তু এখন আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি বিশ্বের সব মরক্কানই মরক্কোর জন্য। জাতীয় দলের হয়ে খেলার সময় সকলেই মরক্কোর জন্য জীবন দিতেও তৈরি। মরক্কোর জন্য নিজের সেরাটা দিয়ে লড়াই করে। আমি এখন কোচিং করাই। আমার জন্ম ফ্রান্সে। কিন্তু নিজের দেশের থেকে বেশি জায়গা আর কিছুর জন্য নেই আমার হৃদয়ে।’’
ফুটবলের শ্রেষ্ঠ মঞ্চে নিজেদের প্রমাণ করার জন্য মরক্কোর এই কৌশল নতুন কিছু নয়। বিশ্বের বহু দেশই অন্য দেশে জন্ম নেওয়া প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের জন্য দরজা খুলে দিয়েছে। কাতার বিশ্বকাপে ৩৮ জন ফুটবলার খেলছেন যাঁদের জন্ম ফ্রান্সে। তাঁদের ১৭ জন খেলছেন ফ্রান্সের হয়ে। বাকিরা খেলছেন অন্য কোনও দেশের হয়ে। এমন খেলোয়াড়রা অংশগ্রহণকারী ২৮টি দলেই রয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy