কাতার বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচেই হার। যন্ত্রণাবিদ্ধ মেসি। ছবি পিটিআই।
অঘটন! বিশ্বকাপের ইতিহাসে সব চেয়ে বড় অঘটন বললেও বোধহয় ভুল হবে না। ৯০ শতাংশ ফুটবলপ্রেমীই এই ফল মানতে পারছেন না। মানার কথাও নয়।
বিশ্বকাপে মাত্র এক বার শেষ ষোলোর যোগ্যতা অর্জন করেছিল সৌদি আরব। কাপযাত্রায় শেষ ১৩টি ম্যাচের মধ্যে এটিই প্রথম জয়। ইরানের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ড ৬-২ জেতার পরে আর্জেন্টিনার উপরেও বড় ব্যবধানে জয়ের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। শুরুটা সেই ভাবে করেওছিল লিয়োনেল মেসি। কিন্তু মাঝমাঠের রক্ষণাত্মক মনোভাব ও রক্ষণের দুর্বলতার ফল ভোগ করতে হল বিশ্বের অন্যতম সেরার দলকে।
কাতারে খেলতে আসার আগে টানা ৩৫টি ম্যাচে অপরাজিত ছিল আর্জেন্টিনা। কোপা আমেরিকা ও ফিনালিসিমা জেতার ফলে আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা আশাবাদী ছিলেন, জীবনের শেষ বিশ্বকাপে মেসির হাতে ট্রফি হয়তো উঠবে। সেই স্বপ্ন ধাক্কা খেল কি না, তা বোঝা যাবে মেক্সিকোর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ম্যাচে। রদ্রিগো দে পল, লিয়ান্দ্রো পারেদেসদের মানসিকতার উপরে অনেকটা নির্ভর করছে আর্জেন্টিনার ঘুরে দাঁড়ানোর ছবিটা।
তার চেয়েও বড় বিষয় ছিল, মেসি কেমন খেলবে? গত কয়েক দিন ধরে ওর চোট নিয়ে নানা ধরনের জল্পনা তৈরি হয়েছিল। এ দিন ওর খেলা দেখে সন্তুষ্ট হতে পারিনি। পেনাল্টি থেকে গোল ওর পা থেকেই। কিন্তু মেসির থেকে যে ফুটবল আমরা আশা করি, তা দেখতে পেলাম কোথায়? নিজেকে কেমন যেন বাঁচিয়ে খেলার মানসিকতা ধরা পড়ল। হতে পারে, সৌদি দলের ফুটবলারদের শুরু থেকে পা লক্ষ্য করে আক্রমণ করার ব্যাপারটা ওকে সতর্ক করে দিয়েছিল। সেটা খুব স্বাভাবিক। তবে মেসি-ই তো এই দলের কান্ডারি। বিশ্বকাপ জিততে হলে ওকেই দলের ব্যাটন নিজের হাতে তুলে নিতে হবে। পুরো ম্যাচে সতীর্থদের গোলের বল সাজিয়ে দিতে পারেনি। ৬৫টি টাচ খেলেছে সতীর্থদের সঙ্গে, পাসিং ৩২। গোল লক্ষ্য করে শট নিয়েছে চারটে। এই পরিসংখ্যান কিন্তু মেসিসুলভ নয়। আশা করব, পরের দুটো ম্যাচে ও খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসবে।
বিশ্বকাপ খেলতে আসা কোনও দলই দুর্বল নয়। নিজেদের গ্রুপে যোগ্যতা অর্জন পর্বে লড়ে এই প্রতিযোগিতায় নামতে হয়। প্রত্যেকটি দলই সেরা একাদশ মাঠে নামায়। আর্জেন্টিনাকে দেখে মনে হয়েছে, প্রথম গোলটি পাওয়ার পরে ওরা বিপক্ষকে হালকা ভাবে নিতে শুরু করেছিল। মাঝ মাঠের উচিত ছিল আক্রমণের ঢেউ তুলে সৌদি আরবকে কোণঠাসা করে দেওয়া। দেখা গেল উল্টো ছবি। আল সেহরি, আল দৌসারিদের ক্রমাগত আক্রমণে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিল দে পল ও পারেদেস। প্রতিআক্রমণের সুযোগ খুঁজতে গিয়ে বিপক্ষ শিবিরের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিল এই দুই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার।
প্রথমার্ধের শেষের দিকে সৌদি আরবের মরিয়া ভাবটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। বিশ্লেষক লুইস ফিগোকেও বলতে শুনলাম, ‘আর্জেন্টিনা যদি ক্রমাগত আক্রমণ না করে, সৌদি আরব ম্যাচে ফিরে আসবে। তখন ওদের সামলানো কঠিন হয়ে উঠতে পারে।’’ দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে পর্তুগালের কিংবদন্তির অনুমানই মিলে গেল। ঠিক পাঁচ মিনিটের আক্রমণে নিকোলাস ওতামেন্দি, ক্রিশ্চিয়ান রোমেরোদের ব্যর্থতা ফুটিয়ে তুলল আল সেহরি ওআল দৌসারি।
দু’টি গোলই আর্জেন্টিনা রক্ষণের ভুলে। প্রথম গোলের সময়ে আল সেহরিকে বক্সের বাইরেই আটকে দিতে পারত রোমেরো। তা না করে ওকে বক্সে ঢুকে পড়ার রাস্তাটা করে দিল। বাঁ-পায়ের শট রোমেরোর পায়ের তলা দিয়ে এমিলিয়ানো মার্তিনেসকে পরাস্ত করে জড়িয়ে গিয়েছে জালে। ৫৩ মিনিটের মাথায় বক্সের মধ্যে উপস্থিত ছিল চার জন ডিফেন্ডার। সেই সঙ্গে নেমে এসেছিল দে পল ও পারেদেস। আল দৌসারি যখন বল পেয়েছিল, তাকে ঘুরতে দেওয়াই উচিত হয়নি। আল দৌসারি বল রিসিভ করে ঘুরে ডান পায়ে কাট করে মার্তিনেসের বাঁ-প্রান্ত দিয়ে বাঁক খাইয়ে বল জালে জড়িয়ে দিল। সেই সঙ্গেই ফুটে উঠল আর্জেন্টাইন রক্ষণ ভাগের শূন্যতা। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই হয়তো কাঁটা হয়ে দাঁড়াল লাওতারো মার্তিনেসদের।
তবে আর্জেন্টিনা সমর্থকদের এখনই আশাহত হওয়ার মতো পরিস্থিতি আসেনি। ১৯৯০ সালে ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ হেরেও আর্জেন্টিনা ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছিল। সে দলে দিয়েগো মারাদোনার মতো একজন বিস্ময় প্রতিভা ছিল। বর্তমান দলে আছে লিয়োনেল মেসি। কিংবদন্তিকেই বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে দলের মনোবল ফেরানোর। মেসি, তুমি পারবে, পারতেই হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy