কাতার বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই গোল করলেন মেসি। ফাইল ছবি।
সৌদি আরবের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় মিনিটেই গোল করার সহজ সুযোগ পেয়েছিলেন। পারলেন না লিয়োনেল মেসি। তাঁর দুর্বল শট আটকাতে তেমন বেগ পেতে হল না সৌদি গোলরক্ষককে। মেসির কি চোট আছে? প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারকে ছিটকে দেওয়া মেসির গোলমুখী শট এত দুর্বল! বিশ্বাস করা কঠিন। যার শিল্প ফুটবল বিশ্বকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছে, তাঁকে শেষ বিশ্বকাপে কি সেরা ছন্দে দেখা যাবে না।
আসলে তা নয়। চকিতে শট নেওয়ার সময় বলের সঙ্গে তাঁর পায়ের সংযোগ ঠিক মতো হয়নি। ঠিক মতো সংযোগ হল ১০ মিনিটের মাথায়। পেনাল্টি থেকে গোল করলেন মেসি। শুরু হয়ে গেল তাঁর শেষ বিশ্বকাপ। প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে বাঁ দিকে ফেলে দিয়ে বলে আলতো টোকা। সৌদি গোলরক্ষকের ডান দিক দিয়ে বল জড়িয়ে গেল জালে। ফুটবল কত সুক্ষ্ম হতে পারে, কাতারের মাঠে নেমেই বুঝিয়ে দিলেন মেসি।
তাঁর পায়ে নাকি অল্প চোট। ম্যাচের আগের দিন সাংবাদিকদের সামনে এসে নিজেই চোটের কথা জানিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। চোটের জন্যই দু’দিন আলাদা অনুশীলন করেছেন। সতীর্থদের সঙ্গে তাল মেলাতে চাননি। আসলে নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন আসল সময় যাতে তাল না কাটে।
তাঁর অনুগামীদের মধ্যে অল্প সংশয় ছিল। প্রথম ম্যাচে মাঠে নামা নিয়ে। তবু, হাজারে হাজারে ভক্ত এসেছিলেন লুসেইল স্টেডিয়ামে। খেলা শুরুর আগে গা ঘামানোর জন্য মেসি মাঠে আসতেই গর্জে উঠল গ্যালারি। শব্দই তখন ফুটবল বিশ্বকাপের ব্রহ্ম। সেই গর্জনের মধ্যেও মেসি ধীর স্থির। মুখে আবেগের চিহ্ন নেই। শুধুই সংকল্পের আলপনা। প্রতিপক্ষের দিকে চাহনি নেই। নজরে যেন অধরা বিশ্বকাপ। মাঠের মাঝ খানে তখন রাখা ছিল বিশ্বকাপ ট্রফির বিশাল অবয়ব। এক বার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নিলেন। অর্জুন যে ভাবে পাখির চোখ দেখেছিলেন, ঠিক সে ভাবে। ট্রফির অবয়বটাই বোধহয় তাঁর ভিতরের আগুনটা জ্বালিয়ে দিয়েছিল। হয়তো তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের শ্লাঘাতে খোঁচা দিয়েছিল। গা ঘামানোর পর মেসির চোয়াল যেন আরও শক্ত।
টস করতে এলেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। সৌদি অধিনায়কের অন্তত ৬ সেকেন্ড আগে পৌঁছে যান রেফারিদের কাছে। টসের আগে করমর্দন। নেহাতই সৌজন্য। পেশাদারি মোড়কে ঢাকা। সে সময়ই তাঁর পিছন দিয়ে মাঠের বাইরে চলে গেল ট্রফির বিশালাকার অবয়ব। মেসি পিছন ঘুরে দেখলেন ট্রফি নেই। এই ট্রফিটা এখনও নেই তাঁর জীবনেও। দেশে নিয়ে যাওয়ার শেষ সুযোগ। এক বার তাকালেন আকাশের দিকে। তিনি কি দিয়েগো মারাদোনাকে খুঁজলেন?
কোচ লিয়োনেল স্কালোনি দল সাজিয়েছিলেন ৪-৫-১ ছকে। মেসির ভূমিকা ঠিক স্ট্রাইকারের নয়। আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডারের। কোচের ছকের মধ্যমণি। এর মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু নেই। যেমন অস্বাভাবিক নয় পেনাল্টি থেকে তাঁর গোল করা। ১০ মিনিটের মাথায় গোল করার পর মেসি সতীর্থদের সঙ্গে উৎসব করলেন। কিন্তু উচ্ছ্বাসে ভাসলেন না। ২৩ মিনিটে সৌদি বক্সের কিছুটা আগে বল পেলেন মেসি। গোলও করলেন। কিন্তু অফ সাইডের জন্য গোল বাতিল হয়ে গেল। মেসির মুখে স্পষ্ট হতাশা। সেই হতাশা আরও বাড়ল আর্জেন্টিনার পর পর তিনটি গোল অফ সাইডের জন্য বাতিল হওয়ায়।
সেই হতাশাই মাত্রা ছাড়াল খেলার দ্বিতীয়ার্ধে সৌদি পর পর দু’গোল দেওয়ায়। থমথমে মুখ। চোখে অবিশ্বাস। চোয়াল তখনও শক্ত। মুহূর্তে মেপে নিলেন সতীর্থদের শরীরী ভাষা। রেফারির শেষ বাঁশি বাজার আগে হারতে শেখেননি মেসি। বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে খেলতে শুরু করলেন। সৌদি রক্ষণে আরও বেশি আক্রমণ তুলে আনলেন। মাঝে মাঝে স্টেডিয়ামের ইলেকট্রনিক্স বোর্ডের দিকে তাকিয়ে দেখে নিচ্ছিলেন স্কোরলাইন। পেশাদারি মোড়কে ঢেকে রাখছিলেন অনুভূতি।
ম্যাচের ৭৯ মিনিটে ডায়রেক্ট ফ্রিকিক আর্জেন্টিনার পক্ষে। ফ্রিকিক নিতে এগিয়ে এলেন মেসি। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড় এবং নিজের সতীর্থদের অবস্থান বুঝে নিলেন ভাল করে। গোটা ফুটবল বিশ্ব তাঁর পায়ের জাদুর অপেক্ষায়। মেসির শট উড়ে গেল গোল পোস্টের মধ্যেই থাকল না। মিনিট পাঁচেক পরেই তাঁর হেড সরাসরি জমা হল সৌদি গোলরক্ষকের হাতে। মেসিকে এ বার কিছুটা বিভ্রান্ত দেখাল মেসিকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy