চর্চায়: মেসিকে নিয়ে হঠাৎ উদ্বেগ। ফাইল চিত্র
লিয়োনেল মেসির কী হল?
আর্জেন্টিনীয় কিংবদন্তি কি সুস্থ নন?
রবিবার লুসেল স্টেডিয়ামে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের ফাইনালে মেসি কি খেলতে পারবেন?
বৃহস্পতিবার সন্ধেয় কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন নম্বর অনুশীলন মাঠে আর্জেন্টিনার অধিনায়ককে ছাড়াই লিয়োনেল স্কালোনি ফ্রান্স ম্যাচের প্রস্তুতি শুরু করায় হঠাৎ করেই উদ্বেগ বাড়তে শুরু করে দিয়েছে। অনুশীলন করেননি ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম একাদশে খেলা অধিকাংশ ফুটবলারও। তা নিয়ে অবশ্য কারও মাথাব্যথা নেই। সকলের চিন্তা মেসিকে নিয়েই।
ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে সেমিফাইনালেই দেখা গিয়েছিল বাঁ পায়ের হ্যামস্ট্রিংয়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মেসি। তখন থেকেই উদ্বেগ বাড়তে শুরু করে শিবিরে। দলের তরফে এই ব্যাপারে কিছু জানানো না হলেও আর্জেন্টিনীয় সাংবাদিকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য ফুটবলারদের বুধবার বিশ্রাম দিয়েছিলেন স্কালোনি। কিন্তু মেসি দীর্ঘ ক্ষণ সময় কাটান ফিজ়িয়োথেরাপিস্টের সঙ্গে। বৃহস্পতিবার তিনি অনুশীলনে না নামায় রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। আর্জেন্টিনার টিম ম্যানেজমেন্টের তরফে এ দিনও দাবি করা হয়েছে, মেসি সম্পূর্ণ সুস্থই রয়েছেন। টানা ম্যাচ খেলে যে হেতু ক্লান্ত, তাই মাঠে নামেননি অনুশীলন করতে। কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমেই ফ্রান্স ম্যাচের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। অন্দরমহলের খবর, হ্যামস্ট্রিংয়ে যে হেতু চোট রয়েছে, তাই মাঠে নেমে অনুশীলনের ঝুঁকি নিতে মেসিকে বারণ করে দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। তাঁদের মতে, আর্জেন্টিনা অধিনায়কের চোট গুরুতর নয় ঠিকই, কিন্তু অনুশীলন করতে গিয়ে ফের যদি আঘাত পান, সমস্যা বাড়বে।
সন্ধেয় মেসিকে নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়লেও বৃহস্পতিবার সকালে আর্জেন্টিনা শিবিরে ছিল ফুরফুরে আবহ। ফুটবলারদের প্রাতঃরাশের সময় দলের কিট ম্যানেজার ডাইনিংরুমে ঘোষণা করেন, ১৯৭৮ ও ১৯৮৬-র বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা যে ঐতিহ্যশালী নীল-সাদা জার্সি পরে খেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, রবিবার ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ফাইনালেও তা পরবেন মেসিরা। জানিয়েছে ফিফা।
আর্জেন্টিনার সাংবাদিকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী দলের সকলে এই খবর শুনে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলেও মেসি ও কোচ লিয়োনেল স্কালোনি নির্লিপ্ত ছিলেন। দু’জনের কেউ-ই নাকি কী জার্সি পরে ফাইনালে খেলবে আর্জেন্টিনা, তা নিয়ে আগ্রহী নন। দু’জনেরই পাখির চোখ ফ্রান্সকে হারিয়ে ৩৬ বছর পরে বিশ্বকাপ জেতা। রবিবার লুসেল স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ ফাইনাল তো শুধুমাত্র আর্জেন্টিনা বনাম ফ্রান্স দ্বৈরথ নয়। শেষ বারের মতো বিশ্বকাপ জেতার সুযোগ মেসির কাছে। দিয়েগো মারাদোনার নজির স্পর্শ করার হাতছানি। চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপে ফ্রান্সের কাছে হেরে বিদায়ের বদলা নেওয়ার লড়াই। আরও একবার ইউরোপকে হারিয়ে লাতিন আমেরিকার ফুটবল শিল্পকে বিশ্বসেরা করার সংকল্প।
ফাইনালের জন্য মেসি কী ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করছেন, তা দেখতেই বৃহস্পতিবার সন্ধেয় কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে সংবাদমাধ্যমের ভিড় উপচে পড়েছিল। অ্যাঙ্খেল দি’মারিয়া, লাওতারো মার্তিনেসরা একে একে মাঠে নামলেও সকলেই অপেক্ষা করছিলেন মেসিকে দেখার জন্যই। শেষ পর্যন্ত সেই আশা অপূর্ণই থেকে গেল। আর্জেন্টিনার সাংবাদিকদের কেউ কেউ বললেন, ‘‘মনে হচ্ছে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা বেরিয়ে গেলে মেসি অনুশীলনে নামবেন। ফাইনালের আগে আর্জেন্টিনা অধিনায়ক নিজেকে গুটিয়ে রাখতে চান। তাই সকলের সামনে অনুশীলন করলেন না।’’
মেসিকে নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যেই তাঁর এক ভক্তের আশ্চর্য কাহিনি শোনা গেল। দোহার মুশারেফে ইতালীয় এক রেস্তঁরা আবিষ্কার করে ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচের পরে নৈশভোজ সারতে ঢুকেছিলেন আর্জেন্টিনীয় দম্পতি মার্তিনা ও আমানসিয়ো। খাওয়া শেষ করে তাঁরা যখন বিল মেটাতে গেলেন, কিছুতেই টাকা নেবেন না রেস্তঁরার মালিক রদ্রিগো। কেন? রদ্রিগোর বাবা ইতালীয়। মা আর্জেন্টিনার। ইটালির নেপলসে জন্ম ও বড় হয়ে ওঠা তাঁর। তাই আর্জেন্টিনীয় দম্পতির কাছ থেকে খাওয়ার অর্থ নেবেন না। দিয়েগো মারাদোনার ভক্ত রদ্রিগো বছর দশেক আগে দোহা চলে এসেছিলেন। কাতারের এক বন্ধুর সঙ্গে যৌথ ভাবে মুশারেফ মেট্রো স্টেশনের কাছে ইতালীয় রেস্তঁরা খুলে ব্যবসা শুরু করেন। ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে আট বছর পরে আর্জেন্টিনার ফাইনালে ওঠার আনন্দে সেখানেই গিয়েছিলেন মার্তিনা ও আমানসিয়ো। আপ্লুত আর্জেন্টিনীয় দম্পতির কথায়, ‘‘রদ্রিগো কিছুতেই আমাদের কাছ থেকে নৈশভোজের দাম নিলেন না। বললেন, আমার শরীরেও আর্জেন্টিনার রক্ত বইছে।’’ সেই রাতেই মার্তিনা ও আমানসিয়োকে রদ্রিগো আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছেন, আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হলে একসঙ্গে নৈশভোজ করার জন্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy