একাগ্র: জার্মানির বিরুদ্ধে জয়ের অন্যতম নায়ক আসানোর অনুশীলন। সামনে এ বার কোস্টা রিকা।
আর রায়ান মেট্রো স্টেশনের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল বাসটা। কেউ যদি কোস্টা রিকার বিরুদ্ধে ম্যাচের আগের দিন আল সাদ স্পোর্টস ক্লাবে জাপানের অনুশীলন দেখতে চান, তাঁদের জন্যই অপেক্ষা করছিলেন চালক।
কোন পথে বাসে উঠতে হবে, সেই দিকচিহ্নও দেওয়া রয়েছে। কিন্তু অনেকটা হাঁটতে হবে বলে অধিকাংশই সামনে থাকা গার্ডরেল ঠেলে সরিয়ে দিয়ে উঠে পড়ছিলেন বাসে। বিশ্বকাপ বলেই হয়তো কিছু বলছিলেন না নিরাপত্তারক্ষীরা। কিন্তু তাঁদের চোখে-মুখে স্পষ্ট বিরক্তির ছাপ। ব্যতিক্রম জাপানের ফুটবলপ্রেমী ও সাংবাদিকরা। প্রচণ্ড রোদের মধ্যেই অনেকটা হেঁটে গিয়ে বাসে উঠলেন।
কাতার কনভেনশন সেন্টারের ক্যাফেটেরিয়া। মধ্যাহ্নভোজ শুরু হয়েছে। গোটা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের ভিড়। প্রবল ব্যস্ততায় দ্রুত খাওয়া শেষ করেই তাঁরা দৌড়চ্ছেন প্লেট, জলের বোতল, কফির কাপ টেবলেই ফেলে রেখে। অবশ্য ক্যাফেটেরিয়ার কর্মীরা মুহূর্তের মধ্যে টেবল পরিষ্কার করে দিচ্ছেন। অনুশীলন কভার করতে যাবেন বলে শনিবার দুপুরে দ্রুত খাওয়া সারছিলেন জাপানের দুই সাংবাদিক সাতো জুনিচিয়ো ও হিদারি মোনোকেউ। প্রবল ব্যস্ততা সত্ত্বেও দায়িত্ব ভোলেননি। খাওয়ার প্লেট, গ্লাস একটি ট্রে-তে সাজিয়ে রেখে এলেন। তার পরে টেবল পরিষ্কার করে জাপানের অনুশীলন কভার করতে ছুটলেন। আজ, রবিবার কোস্টা রিকার বিরুদ্ধে জিতলেই যে বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় খেলা নিশ্চিত হয়ে যাবে তাঁদের দেশের।
মিডিয়া সেন্টারে অনেকেই কফি পান করে ইতিউতি কাপ ফেলে রেখে উঠে যাচ্ছেন। জাপানের সাংবাদিকদের তা চোখে পড়লেই হাসিমুখে তা তুলে নিয়ে গিয়ে ফেলে দিয়ে আসছেন ডাস্টবিনে।
বিশ্বকাপে জার্মানির বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক জয়ের পরে জাপানের সমর্থকরা আল খালিফা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে থেকে গিয়েছিলেন গ্যালারি পরিষ্কার করার জন্যই। এখানেই শেষ নয়। ফুটবলাররাও সাজঘর পরিষ্কার করেন। গণমাধ্যমে সেই ছবি পোস্ট করে ফিফা লেখে, ‘‘বিশ্বকাপে জার্মানির বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক জয়ের পরে জাপানের সমর্থকরা স্টেডিয়াম পরিষ্কার করেছেন। ফুটবলাররাও ড্রেসিংরুম পরিষ্কার করে দিয়েছেন স্টেডিয়াম ছাড়ার আগে। ধন্যবাদ।”
২০১৮-তে রাশিয়া বিশ্বকাপেও ম্যাচের পরে স্টেডিয়ামের গ্যালারি পরিষ্কার করেছিলেন জাপানের সমর্থকরা। কাতারেও তার ব্যতিক্রম হল না। যদিও এই নিয়ে খুব একটা আলোচনা করতে আগ্রহী নন জাপানের সাধারণ মানুষ থেকে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। কোনও কৃতিত্বও দাবি করেন না। সাতো ও হিদারি বলছিলেন, ‘‘চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা প্রত্যেকের কর্তব্য। এর মধ্যে আলাদা তো কিছু নেই। আমরা এমন কিছুই করিনি যে, তার জন্য কৃতিত্ব দাবি করতে হবে। আমরা তো নিজেদের বাড়িও পরিষ্কার করি।’’
সাতো-হিদারিই শোনালেন, কী ভাবে ছোট থেকেই জাপানের নাগরিকদের মধ্যে এই সচেতনতা গড়ে তোলা হয়। বলছিলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই আমাদের স্কুলে ও বাড়িতে শেখানো হয়, পুরো পৃথিবীটাই তোমার বাড়ি। তাই নিজের বাড়ি সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। বোঝানো হয়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকলে নানা রকম রোগ-ব্যধি হবে।’’ হাসতে হাসতে সাতো এর পরে যোগ করলেন, ‘‘মাঝেমধ্যে একটু ভয়ও দেখানো হয় শিশুদের।’’ কী রকম? বললেন, ‘‘ওদের বলা হয় অসুস্থ হলেই তেতো ওষুধ খেতে হবে। ইঞ্জেকশন দেওয়া হবে। তাই সবসময় পরিবেশ পরিষ্কার রাখতে হবে।’’
জিকো যখন জাপানের কোচ ছিলেন, সেই সময় টোকিয়ো গিয়েছিলেন ব্রাজিলের সাংবাদিক রাফায়েল। তিনি বলছিলেন, ‘‘এক দিন টোকিয়োর একটি বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে কফি পান করছিলাম। হঠাৎ বাস এসে যাওয়ায়, রাস্তাতেই কাপটা ফেলে দিয়েছিলাম। বছর সাত-আটেকের একটি মেয়ে এগিয়ে এসে আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। তার পরেই রাস্তা থেকে কফির কাপটা তুলে নিয়ে একটু দূরের ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে এল। লজ্জায় সেই সময় আমার মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিল। আর কখনও এই ভুল করিনি।’’
কাতার বিশ্বকাপের ‘ই’ গ্রুপে এই মুহূর্তে এক ম্যাচ খেলে তিন পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষ স্থানে রয়েছে স্পেন। সমসংখ্যক ম্যাচ খেলে দ্বিতীয় স্থানে থাকা জাপানের সংগ্রহেও তিন পয়েন্ট। ১ ডিসেম্বর শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে তারা। জাপানের লক্ষ্য রবিবারই কোস্টা রিকাকে হারিয়ে শেষ ষোলোয় খেলা নিশ্চিত করে ফেলা। তবে এই ম্যাচে রাইটব্যাক হিরোকি সাকাইয়ের খেলা নিয়ে সংশয় রয়েছ। জার্মানির বিরুদ্ধে ম্যাচে তিনি চোট পেয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy