কার্লেস কুয়াদ্রাত। —ফাইল চিত্র।
ইস্টবেঙ্গল — ২ (মাদি তালাল, ডেভিড)
গোয়া — ৩ (বোরহা হেরেরা হ্যাটট্রিক)
‘হেরে যাওয়ার মধ্যে কোনও ভুল নেই। ভুলটা হল হার মেনে নিয়ে চুপ থাকা।’ চলতি আইএসএলে ঘরের মাঠে প্রথম বার খেলতে নামা ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারদের তাতানোর জন্য এমনই একটি কথা ব্যানারে লিখে এনেছিলেন সমর্থকেরা। কিন্তু মাঠ বদলালেও জয়ে ফিরল না ইস্টবেঙ্গল। ঘরের মাঠে এফসি গোয়ার কাছে ২-৩ গোলে হারল তারা। গোয়ার হয়ে হ্যাটট্রিক করলেন গত মরসুমে লাল-হলুদ জার্সি গায়ে খেলে যাওয়া বোরহা হেরেরা। সেই কারণেই হয়তো গোল করার পরে বিশেষ উল্লাস করতে দেখা গেল না তাঁকে। তবে তাঁর খেলা দেখে বোঝা গেল, ইস্টবেঙ্গলকে জবাব দিলেন তিনি। পেনাল্টি থেকে করা মাদি তালালের গোল লাল-হলুদ সমর্থকদের মনে আশা জাগালেও শেষরক্ষা হল না। ঘরের মাঠে সমর্থকদের কাছে ‘গো ব্যাক’ শুনতে হল কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাতকে। শুধু তা-ই নয়, যাঁর হ্যাটট্রিকে দল হারল সেই বোরহার নামে জয়ধ্বনি দিলেন লাল-হলুদ সমর্থকেরা।
পর পর তিনটি ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ যা খেলল তা চিন্তা বাড়াবে কোচ কুয়াদ্রাতের। পরের ম্যাচের আগে হয়তো আরও কয়েকটি বিনিদ্র রজনী কাটাতে হবে তাঁকে। প্রথম ২১ মিনিটেই জোড়া গোল হজম করে ইস্টবেঙ্গল। দু’টি গোলই হল রক্ষণের ভুলে। দ্বিতীয় গোলটি তো ইস্টবেঙ্গলের বিদেশি ডিফেন্ডার হিজাজি মাহের গোয়াকে উপহার দিলেন। যত বার ইস্টবেঙ্গল বক্সে বল গেল তত বার মনে হল গোল হবে। হিজাজি, হেক্টর ইয়ুস্তে, আনোয়ার আলিদের ছন্নছাড়া ফুটবলের খেসারত দিল দল। গোটা ম্যাচ জুড়ে প্রচুর সুযোগ পেয়েছিল গোয়া। কাজে লাগাতে পারেনি তাঁরা। লাল-হলুদ তেকাঠির নীচে বেশ কয়েকটি বল বাঁচান এই ম্যাচে প্রথম খেলতে নামা দেবজিৎ মজুমদার। তিনি না থাকলে হয়তো লজ্জা আরও বাড়ত ইস্টবেঙ্গলের।
খেলার প্রথম কয়েক মিনিট পর থেকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল না যে কোন দল অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলছে। বার বার ইস্টবেঙ্গলের বক্সে ঢুকে পড়ছিলেন বরিস সিংহ, উদান্তা সিংহেরা। ১৩ মিনিটের মাথায় প্রথম গোল করে গোয়া। দুই ডিফেন্ডারকে টপকে বক্সে ঢোকেন দেজান দ্রাজিচ। তাঁর শট লাল-হলুদ গোলরক্ষক দেবজিৎ কোনও রকমে বাঁচালেও ফিরতি বলে গোল করেন বোরহা। বক্সে ইস্টবেঙ্গলের চার জন ডিফেন্ডার ছিলেন। কিন্তু তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন প্রথম পোস্টে। ফলে ঠান্ডা মাথায় দ্বিতীয় পোস্ট দিয়ে গোল করেন বোরহা।
২১ মিনিটের মাথায় দ্বিতীয় গোল বোরহার। বল ছিল হিজাজির পায়ে। তাঁর কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে বক্সে ঢোকেন বরিস। তিনি বল বাড়ান অরক্ষিত বোরহার দিকে। বাঁ পায়ে বল জালে জড়ান স্পেনের ফুটবলার। দ্বিতীয় গোলের সময়েও ঠিক জায়গায় ছিলেন না লাল-হলুদ ডিফেন্ডারেরা।
গোয়ার ডিফেন্ডারের ভুল থেকে খেলায় ফেরে ইস্টবেঙ্গল। ২৯ মিনিটের মাথায় তালালকে বক্সে ফাউল করেন গোয়ার ডিফেন্ডার। পেনাল্টি পায় ইস্টবেঙ্গল। গোলরক্ষক লক্ষ্মীকান্ত কাট্টিমনিকে ভুল দিকে ফেলে গোল করেন তালাল। পরের ২০ মিনিট সমানে সমানে লড়াই হয়। দু’দলই সুযোগ তৈরি করে। কিন্তু গোল করতে পারেনি। ২-১ গোলে এগিয়ে বিরতিতে যায় গোয়া।
ঘরের মাঠে পিছিয়ে থাকা ইস্টবেঙ্গল বিরতির পরে খেলার ধরনে বদল করবে, এমনটাই আশা ছিল। মহেশ নাওরেমকে তুলে আগের ম্যাচে গোল করা পিভি বিষ্ণুকে নামান কোচ কুয়াদ্রাত। কিন্তু কোথায় কী? প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেও আক্রমণ বেশি শুরু করল গোয়া। দুই প্রান্ত ব্যবহার করে সুযোগ তৈরি করতে থাকে তারা। ইস্টবেঙ্গলের বেশির ভাগ ফুটবলারকে দেখে মনে হচ্ছিল ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। অধিনায়ক ক্লেটন সিলভা আক্রমণের থেকে রক্ষণে বেশি সময় কাটালেন। ফলে যা হওয়ার তাই হল।
৬৬ ও ৬৯ মিনিটের মাথায় দু’বার গোলের সামনে পৌঁছে যায় গোয়া। বরিস গোলরক্ষককে একা পেয়েও বাইরে মারেন। ৭১ মিনিটের মাথায় নিজের ও দলের তৃতীয় গোল করেন বোরহা। উদান্তার কাছ থেকে বক্সের বাইরে বল পান তিনি। তাঁর ঘাড়ের কাছে ছিলেন ক্লেটন। সামনে হিজাজি। বাঁ দিকে আনোয়ার। তিন জনকে বোকা বানিয়ে বক্সে ঢুকে বাঁ পায়ের শটে গোল করেন বোরহা। তিন গোল খাওয়ার পরে যুবভারতীর গ্যালারিতে উঠল ‘কুয়াদ্রাত গো ব্যাক’ স্লোগান। লাল-হলুদ কোচের মুখ দেখেও বোঝা যাচ্ছিল কতটা চাপে রয়েছেন তিনি। এমনকি, হ্যাটট্রিক করে ইস্টবেঙ্গলকে হারের মুখে দাঁড় করিয়ে বোরহা যখন মাঠ ছাড়ছেন তখন উঠে দাঁড়িয়ে তাঁর জন্য হাততালি দিলেন লাল-হলুদ সমর্থকেরা।
৩-১ গোলে এগিয়ে থাকার পরে ধাক্কা খায় গোয়া। ৮১ মিনিটের মাথায় দ্বিতীয় হলুদ অর্থাৎ লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন কার্ল ম্যাকহিউ। ১০ জনে হয়ে যায় গোয়া। তার সুযোগ নেয় ইস্টবেঙ্গল। ৮৪ মিনিটের মাথায় আনোয়ারের দূরপাল্লার শট বাঁচান কাট্টিমনি। ফিরতি বলে গোল করেন সদ্য নামা ডেভিড।
সময় কমে আসছিল ইস্টবেঙ্গলের। ৫ মিনিট সংযুক্তি সময় দেওয়া হয়। সমতা ফেরানোর অনেক চেষ্টা করে ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু তৃতীয় গোল করতে পারেনি তারা। হেরে মাঠ ছাড়তে হয় তাদের। চলতি মরসুমে প্রথম তিনটি ম্যাচ অনেক প্রশ্ন তুলে দিল। সমাধান করতে পারবেন তো কুয়াদ্রাত?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy