পেলে প্রয়াত হওয়ার পরই সামনে এলেন তাঁর প্রাক্তন প্রেমিকা সেলমা ফনসেকা। —ফাইল চিত্র
ব্রাজিল তারকা পেলের প্রাক্তন প্রেমিকার হদিস। ৮২ বছর বয়সে পেলে প্রয়াত হওয়ার পরই সামনে এলেন সেলমা ফনসেকা। তিনি একজন চিত্রগ্রাহক। নিউ ইয়র্ক, হলিউড, ক্যারিবিয়াতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছবি তোলেন সেলমা। ৩২ বছর আগে পেলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল বলে দাবি করেছেন তিনি। সেই সময়ের কথাই সামনে আনলেন সেলমা। সংবাদমাধ্যম ‘দ্য সান’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানালেন পেলের বাড়িতে থাকা একটি গোপন ঘরের কথা।
সেলমার তখন ২৩ বছর বয়স। চিত্রগ্রাহক এবং লেখক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার লড়াই করছিলেন তিনি। নিউ ইয়র্কে নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে থাকছিলেন সেলমা। সেই সময় সদ্য একটি সম্পর্ক ভেঙে ছিল তাঁর। সেলমার প্রিয় বান্ধবী ছিলেন এক ব্রাজিলীয় মহিলা। তিনি পেলের সহকারী হিসাবে কাজ করতেন। সেলমার বান্ধবীর বাবা ছিলেন কসমস ক্লাবের অন্যতম মালিক। সেলমা বলেন, “আমার বান্ধবী এবং আমি থাকার জায়গা খুঁজছিলাম। ও যেখানে ছিল সেই জায়গাটা ওর পছন্দ ছিল না। ও তখন পেলেকে বলে। ম্যানহ্যাটনে পেলের একটা বাড়ি ছিল। সেই বাড়িটিতে পেলে থাকত না। আমরা সেই বাড়ি ব্যবহার করতে পারি কি না জানতে চায় ও। পেলে রাজি হয়ে যায়। তবে পেলের শোয়ার ঘরে ঢোকার অনুমতি ছিল না আমাদের।”
পেলের ওই বাড়িতে চার মাস ছিলেন সেলমা। বাড়িতে দেওয়াল জুড়ে পেলের ছবি ছিল। বিশাল সেই ছবি দেখে সেলমার মনে হত পেলে যেন ওই বাড়িতেই রয়েছেন। ৪৯ বছর বয়সে পেলে নিউ ইয়র্কে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। বাড়ি ছাড়তে হয় সেলমাদের। কিন্তু যে দিন পেলে নিউ ইয়র্ক আসেন সেই দিন তাঁর সঙ্গে দেখা হয় সেলমার। তিনি বলেন, “পেলে এসে আমার বন্ধুর (পেলের সহকারী) সঙ্গে দেখা করে। ওকে বলে একজন দন্ত্য চিকিৎসকের ব্যবস্থা করে দিতে। আমি ভিতর ভিতর খুব উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলাম পেলেকে দেখে। চোখ দুটো অপূর্ব। কিন্তু সামনে সেই উত্তেজনা প্রকাশ করিনি। আলাপ হওয়ার পর বুঝলাম পেলে খুবই আকর্ষণীয় এবং প্রাণবন্ত। মহিলাদের সঙ্গে ‘ফ্লার্ট’ করতে লজ্জা পেত না পেলে। বিরাট একজন তারকা হলেও ওর সঙ্গে মিশতে অসুবিধা হয়নি। খুব মজার মজার কথা বলত। আমার মনে হল ওর সঙ্গে অনেক দিনের সম্পর্ক রয়েছে। যত দিন গেল আমার সঙ্গে অনেক বেশি ‘ফ্লার্ট’ করা শুরু করল। বেশ অবাক লাগত আমার। এক বার একসঙ্গে রেস্তরাঁয় খেতে গিয়ে অভিনেতা রবিন উইলিয়ামসের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দেয় ওর বান্ধবী হিসাবে। আমি ভাবলাম মজা করছে। কিন্তু পরে বুঝলাম সত্যিই আমাকে বান্ধবী হিসাবেই দেখছে ও।”
পেলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে সেলমার। একসঙ্গে নাইটক্লাবে যেতে শুরু করেন তাঁরা। শ্যাম্পেন খাওয়া থেকে শুরু করে পেলের নাচ, সব কিছুই দেখেছিলেন সেলমা। একবার এক নাইটক্লাব থেকে পেলে এবং সেলমাকে গাড়ির চালক নিয়ে আসেন ম্যানহ্যাটনের সেই বাড়িতে। প্রহরীরা চিনতে পারেন সেলমাকে। তাঁদের হাসি দেখে বুঝতে পেরেছিলেন সেলমা। তিনি বলেন, “আমাকে দেখে চিনতে পারেন ওই বাড়ির প্রহরীরা। পেলে আমাকে নিয়ে সোজা চলে যায় ওর শোয়ার ঘরে। যে ঘরে এক সময় আমাদের ঢোকা নিষিদ্ধ ছিল। প্রথম বার দেখলাম ওই ঘরের ভিতরটা। ঘরের মাঝে জলের উপর একটা বিছানা ছিল। সেটাতে উঠতে হলে চার ধাপ সিঁড়ি ভাঙতে হয়েছিল। যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হই আমরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটাই। কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মনে নেই। স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিল।”
পরের দিন সেলমার স্টুডিয়োতে পৌঁছে যান পেলে। তারকা ফুটবলারের হাতে ছিল ফুল, হুইস্কি এবং ওয়াইন। পেলে তাঁকে বলেন, “আমি তোমার সঙ্গে পৃথিবী ঘুরতে চাই।” ছ’মাসের সম্পর্ক ছিল সেলমার সঙ্গে। সেই সময় অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিলেন সেলমা। যদিও গর্ভপাত হয়ে যায় তাঁর। ‘দ্য সান’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেলমা বলেন, “গায়ের রঙের জন্য বর্ণবিদ্বেষী আক্রমণ সহ্য করতে হত পেলেকে। সেই কারণেই আমি কাউকে বলতে পারিনি। নিজের পরিবারকেও বলিনি যে আমি অন্তঃসত্ত্বা। এত দিন কাউকে বলিনি। এখন পেলে নেই। তাই বলতে বাধা নেই। পেলেকে যখন বলেছিলাম যে, আমি অন্তঃসত্ত্বা, ও খুব খুশি হয়েছিল। প্রচুর পরিকল্পনা ছিল ওর। আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল পেলে। ইউরোপে এবং ব্রাজ়িলে নিয়ে যেতে চেয়েছিল আমাকে। আমি যদিও দেশ ছাড়তে পারিনি। আমার কাগজপত্রে গন্ডগোল ছিল, তাই ব্রাজ়িল ফিরতে চাইনি। আমি বিয়েও করতে চাইনি। পেলে আমার থেকে বয়সে অনেক বড়। আমার গর্ভপাত হয়ে যাওয়ার পর যদিও পেলে আমার থেকে দূরে সরে যায়। আমার মনে হয়েছিল ঈশ্বরের এটাই ইচ্ছে। আমাদের বিয়ে হোক সেটা বোধ হয় তিনি চাননি। পরের বছর পেলে দ্বিতীয় বার বিয়ে করে। বুঝলাম যে, পেলে সত্যিই বিয়ে করতে চেয়েছিল।”
আমেরিকার একজনের সঙ্গে বিয়ে হয় সেলমার। গ্রিন কার্ড পান তিনি। এর পর ব্রাজ়িলেও গিয়েছিলেন সেলমা। সেই সময় দেখাও হয়েছিল পেলের সঙ্গে। কিছু দিন আগেও পেলের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন সেলমা। সেই সময় তাঁকে আটকে দেন পেলের তৃতীয় স্ত্রী মারসিয়া আওকি। সেলমা বলেন, “পেলে মারা গিয়েছে শুনে আমি ভেঙে পড়েছিলাম। কী অপূর্ব জীবন ছিল পেলের। খুব ভাল মানুষ ছিল ও। যে ছবি তুলতে চাইত, সই চাইত, হাসিমুখে দিয়ে দিত পেলে। পেলে বলত, ও কখনও ভোলেনি যে, ও কোথা থেকে এসেছে। খুব দরিদ্র পরিবারে জন্মেছিল ও। তবু কখনও ভাল মানুষ হওয়ার কথা ভোলেনি পেলে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy