Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Surajit Sengupta

Surajit Sengupta: শুধু সবুজ ঘাসে নয়, মঞ্চেও শিল্পী হয়ে উঠেছিলেন সুরজিৎ, খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন

‘বছর কুড়ি পরে’ নামক একটি নাটকের দলের হয়ে ‘এবং অন্ধকার’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন সুরজিৎ।

মঞ্চে সুরজিৎ সেনগুপ্ত।

মঞ্চে সুরজিৎ সেনগুপ্ত। ছবি: বছর কুড়ি পরে নাটকের দল

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২২:২৩
Share: Save:

অন্ধকার জ্ঞান মঞ্চে আলো জ্বলে উঠল। এক অভিনেতা ছবি আঁকছেন। যাঁর ছবি আঁকছেন তিনি নড়ে উঠতেই অভিনেতা বললেন, “নড়বেন না, নড়বেন না।” এমন এক জন মানুষ সেই চরিত্রে অভিনয় করছেন যাঁকে ফুটবল মাঠে দেখতেই অভ্যস্ত সকলে। অভিনয় করছেন সুরজিৎ সেনগুপ্ত। অবলীলায়। সবুজ ঘাসের উপর যেমন অবলীলায় বল নিয়ে দৌড়ে যেতেন, ঠিক তেমন ভাবেই সংলাপ বলছেন সুরজিৎ। অবাক করে দিচ্ছেন দর্শকদের।

‘বছর কুড়ি পরে’ নামক নাটকের দলের হয়ে ‘এবং অন্ধকার’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন সুরজিৎ। মোট ৩৪টি শো-য়ে অভিনয় করেন তিনি। থিয়েটার অলিম্পিক্সেও (২০১৮) অভিনয় করেন সুরজিৎ। সেই দলের পরিচালক পৃথুনন্দন ঘোষ আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, “গুয়াহাটিতে সেই থিয়েটার অলিম্পিক্সের শো-এর আগে সবাইকে কিছু বলার অনুরোধ করেছিলাম। সেই সময় শান্ত গলায় সুরজিৎদা বলেন, ‘আমি দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছি। কিন্তু কখনও অলিম্পিক্সে খেলতে পারিনি। আজ আমরা অলিম্পিক্সে অংশ নিতে চলেছি। নিজের দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছি। এটার অনুভূতি যে কী হতে পারে তা আমি জানি। এই অলিম্পিক্সে যখন সুযোগ পেয়েছি, তখন আমি কিন্তু ছাড়ব না।’ সুরজিৎদার এই কথা সকলের মধ্যে বাড়তি উদ্দীপনা এনে দিল। অসাধারণ শো হয়েছিল। দর্শকরা অবাক হয়ে গিয়েছিলেন সুরজিৎদার অভিনয় দেখে।”

ফুটবলার সুরজিৎকে অনেকেই দেখেছেন। কিন্তু অভিনেতা সুরজিৎকে কী ভাবে খুঁজে পেলেন পৃথুনন্দন? সুরজিতের পরিচালক বলেন, “১৯৮২-৮৩ সাল থেকে আমরা পড়শি। সেই সময় দেখতাম সব ধরনের বিষয় নিয়েই ওঁর প্রচুর জ্ঞান। সাহিত্য, ইতিহাস, সব কিছু নিয়েই চর্চা ছিল। তবলা বাজাতেন খুব সুন্দর। ওঁর বাড়িতে অনুপ জালোটা এসেছেন। তিনি গাইছেন, সুরজিৎদা তবলা বাজাচ্ছেন। সব বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করার আগ্রহ ছিল। সেই সূত্রেই আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা।”

ফুটবলার সুরজিৎকে অনেকেই দেখেছেন। কিন্তু অভিনেতা সুরজিৎকে কী ভাবে খুঁজে পেলেন পৃথুনন্দন?

ফুটবলার সুরজিৎকে অনেকেই দেখেছেন। কিন্তু অভিনেতা সুরজিৎকে কী ভাবে খুঁজে পেলেন পৃথুনন্দন? ছবি: বছর কুড়ি পরে নাটকের দল

পৃথুনন্দন জানান, প্রথম বার তিনি যখন নাটকটা পড়ছেন সুরজিতের সামনে, সেই সময় একাগ্র ভাবে নাটকটা শুনছেন তিনি। নাটকে সুরজিৎকে পৃথু যে চরিত্রটি দিয়েছিলেন, তার নাম ছিল ‘মিস্টার জ্যাভো’। এক হার না মানা শিল্পীর চরিত্র। যাকে নাটকের শেষে শহীদের সম্মান দেওয়া হয়। সুরজিতের মধ্যেও সেই হার না মানা এক রোখা মানুষটিকে খুঁজে পেয়েছিলেন নাটকের পরিচালক। পৃথুনন্দন বলেন, “অন্যদের অভিনয় খুব মন দিয়ে দেখতেন। সুরের উপর খুব দখল ছিল। নাটকের গানে কোনও ভুল হলে আমাকে আলাদা করে বলতেন সেই দিকে নজর দিতে। সকলের সঙ্গে খুব সহজে মিশে যেতে পারতেন তিনি।”

দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন পৃথুনন্দনের কন্যা ময়ূখমিতাও। তিনি বলেন, “আমি খুব অল্প সময়ের জন্যই দেখেছি ওঁকে। কিন্তু যেটুকু দেখেছি সেটা মনে রেখে দেওয়ার মতোই। খুব শান্ত, ধীর-স্থির প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। উনি জীবনের সব কিছুর সঙ্গে খুব সুন্দর ভাবে খেলার উদাহরণ টেনে কথা বলতেন। সমস্ত কাজ করতেন খেলোয়াড় সুলভ মনোভাব নিয়ে। নাটকের মঞ্চেও সেই খেলোয়াড়ি মনোভাব দেখা যেত।”

নাটকে সুরজিৎকে যে চরিত্রটি দিয়েছিলেন পৃথু তার নাম ছিল ‘মিস্টার জ্যাভো’।

নাটকে সুরজিৎকে যে চরিত্রটি দিয়েছিলেন পৃথু তার নাম ছিল ‘মিস্টার জ্যাভো’। ছবি: বছর কুড়ি পরে নাটকের দল

বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ৫৪ মিনিটে প্রয়াত হন সুরজিৎ। কিছু দিন আগে সুভাষ ভৌমিক প্রয়াত হন। ময়দান ছেড়ে একে একে বিদায় নিচ্ছেন নক্ষত্ররা। ২৩ জানুয়ারি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল সুরজিৎকে। ২৯ জানুয়ারি থেকে ভেন্টিলেশনে ছিলেন তিনি।

দীর্ঘ দিনের লড়াইয়ের শেষে বিদায় নিলেন সুরজিৎ। নিভে গেল আলো, ফাঁকা পড়ে রইল মঞ্চ।

অন্য বিষয়গুলি:

Surajit Sengupta footballer Theater
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy